ভারতীয় ফুটবল আবারও বড় ধরণের বিপদের মুখে। ফিফা ও এএফসি সরাসরি অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশনকে (এআইএফএফ) কড়া ভাষায় চিঠি পাঠিয়ে দিয়েছে। সেখানে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, ৩০ অক্টোবরের মধ্যে নতুন সংবিধান অনুমোদন না হলে ভারতকে নিষিদ্ধ করা হতে পারে।
২৬ আগস্টের ওই চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন ফিফার চিফ মেম্বার অ্যাসোসিয়েশনস অফিসার এলখান মাম্মাদভ এবং এএফসির ডেপুটি সেক্রেটারি ভাহিদ কারদানি। তারা লিখেছেন, ‘বারবার আশ্বাস দেওয়ার পরও এআইএফএফের সংবিধানগত সমস্যা এখনো মেটেনি। এতে ভারতীয় ফুটবলের ভেতরে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।’
ফিফা-এএফসি স্পষ্ট করে দিয়েছে, নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট থেকে সংবিধানের অনুমোদন নিতে হবে এবং সংবিধানকে তাদের বিধির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে হবে। এছাড়া এআইএফএফের সাধারণ সভায় আনুষ্ঠানিকভাবে তা অনুমোদন করাও বাধ্যতামূলক। এগুলো না হলে ফিফা ভারতের সদস্যপদ স্থগিত করবে, যার মানে আন্তর্জাতিক ফুটবলে ভারত পুরোপুরি একঘরে হয়ে যাবে।
এমনটা হলে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হবে আসন্ন এশিয়ান কাপ বাছাইপর্ব। নভেম্বর ২০২৫ আর মার্চ ২০২৬-এ ভারতের খেলার কথা বাংলাদেশ ও হংকংয়ের বিপক্ষে। নিষেধাজ্ঞা জারি হলে সেই ম্যাচগুলোতে অংশ নেওয়া সম্ভব হবে না।
আসলে এই সংবিধান ঝামেলার শুরু ২০১৭ সাল থেকে। ২০২২ সালে খসড়া জমা পড়ে সুপ্রিম কোর্টে। গত বছর অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এল. নাগেশ্বর রাওকে দায়িত্ব দেওয়া হয় এটি চূড়ান্ত করার। কিন্তু এতদিনেও সমাধান হয়নি। এরই মধ্যে আইএসএল নিয়েও বড় অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। এফএসডিএল আর এআইএফএফ নতুন ‘মাস্টার রাইটস এগ্রিমেন্ট’-এ একমত হতে পারেনি। ফলে এ বছরের ডিসেম্বরে বর্তমান চুক্তি শেষ হওয়ার পর ভারতীয় সুপার লিগের ভবিষ্যত ঝুলে গেছে। ২০২৫-২৬ মৌসুম স্থগিত হয়ে গেছে, কিছু ক্লাব কার্যক্রম বন্ধও করে দিয়েছে। এতে খেলোয়াড়রা পড়েছে বিপাকে, অনেকের চুক্তি একতরফাভাবে বাতিল করা হচ্ছে—ফিফপ্রো পর্যন্ত এ নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে।
ভারতের নতুন ক্রীড়া আইনও এখন চাপ তৈরি করছে। সেই আইনে বলা আছে, জাতীয় ক্রীড়া ফেডারেশনগুলোকে আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে চলতে হবে। একইসঙ্গে ফিফা ও এএফসির শর্তও মানতে হচ্ছে। গত ২২ আগস্ট সুপ্রিম কোর্ট এআইএফএফ ও এফএসডিএলকে আলোচনায় বসার নির্দেশ দিয়েছে। এর পর ২৮ আগস্ট আবার শুনানি হবে।
তবে এর মধ্যেই বেঙ্গালুরুতে বৈঠকে বসে কিছুটা অগ্রগতি হয়েছে, এমন খবর মিলেছে। অক্টোবর-নভেম্বরের মধ্যেই হয়তো আইএসএল মৌসুম শুরু হতে পারে। কিন্তু তার ভবিষ্যত, আর পুরো ভারতীয় ফুটবলের ভাগ্য নির্ভর করছে সংবিধান নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের উপর।
ফিফার নিষেধাজ্ঞা ভারতের জন্য নতুন নয়। ২০২২ সালেও একই কারণে একবার নিষিদ্ধ হয়েছিল ভারত। তখন দ্রুত নির্বাচন করে কল্যাণ চৌবেকে সভাপতি বানানো হলে নিষেধাজ্ঞা উঠে যায়, আর ভারত নারী অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপ আয়োজন করে। তবে এবার যদি আবারও এমন সংকটে পড়ে, ভারতীয় ফুটবলের জন্য সেটি হবে বড় ধরণের ধাক্কা।