‘কিং অব ক্লে’-কে বিদায় দিল রোলাঁ গ্যারোঁ

টাইমস স্পোর্টস
3 Min Read
নাদালের বিদায়ের মূহুর্তে জোকোভিচ, ফেদেরার, রাফায়েল নাদাল ও এন্ডি মারে এক ফ্রেমে। ছবি: রাফা নাদাল, ফেইসবুক

ফেদেরার-জোকোভিচ-মারে-সহ টেনিস দুনিয়ার সেরা তারকাদের উপস্থিতিতে কেঁদে বিদায় নিলেন নাদাল

কোর্ট ফিলিপ শাত্রিয়ে আগেও অনেক মহারণের সাক্ষী থেকেছে, কিন্তু রোববার সন্ধ্যার আবেগময়তা হয়তো ছাপিয়ে গেল সবকিছু। রাফায়েল নাদাল—যিনি ‘কিং অব ক্লে’ নামে টেনিস ইতিহাসে অমর—নিজের প্রিয় রোলাঁ গ্যারোঁকে জানালেন বিদায়। ১৪ বারের ফ্রেঞ্চ ওপেন জয়ী এই স্প্যানিয়ার্ডকে ঘিরে আয়োজিত হল এক হৃদয়ছোঁয়া বিদায় অনুষ্ঠান, যেখানে হাজির ছিলেন তার দীর্ঘদিনের প্রতিদ্বন্দ্বী এবং সবচেয়ে কাছের মানুষরা—রজার ফেদেরার, নোভাক জোকোভিচ ও অ্যান্ডি মারে।

পুরুষ টেনিসের ‘বিগ ফোর’—এখন খুব একটা একসঙ্গে কোর্টে দেখা যায় না। কিন্তু নাদালের বিদায় মুহূর্তে আবার এক হলেন তাঁরা। ২০২২ সালে অবসর নেওয়া ফেদেরার, সদ্য নিজের ১০০তম শিরোপা জেতা জোকোভিচ ও লন্ডন থেকে উড়ে এসে একই দিনে ফিরে যাওয়া মারে—তিনজনই উপস্থিত ছিলেন কিংবদন্তিকে সম্মান জানাতে।

“এত বছর লড়াই করার পর সময় কীভাবে অনুভূতি বদলায়, সেটা এখন বুঝতে পারছি,” চোখেমুখে আবেগ নিয়ে বলছিলেন ৩৭ বছর বয়সী নাদাল। “আমরা দারুণ সব লড়াই করেছি, শিরোপার জন্য যুদ্ধ করেছি… কিন্তু সবসময় সহকর্মীর মতোই ছিলাম, পরস্পরের প্রতি ছিল শ্রদ্ধা।”

বিদায়ের মুহূর্তটিতে ছিল স্মৃতির রোমন্থন। লেভার কাপে নিজের শেষ ম্যাচে যেখানে ফেদেরার ও নাদাল কাঁধে কাঁধ রেখে কেঁদেছিলেন, এবার সেই ফেদেরারই প্রথম এগিয়ে এসে জড়িয়ে ধরেন নাদালকে। এরপর আসে জোকোভিচ ও মারের আবেগঘন আলিঙ্গন। মারের উপস্থিতি ছিল বিশেষ অর্থবহ, কারণ নাদালের সঙ্গে তাঁর বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছিল জুনিয়র সার্কিট থেকেই।

“সে যা করেছে, বিশেষ করে এই কোর্টে, সেটা অতুলনীয়,” বলছিলেন মারে। “আমি বিশ্বাস করি, ওর ১৪টা শিরোপা রেকর্ডটা সময়ের পরীক্ষায় ঠিকই টিকে যাবে।”

বিদায়ের আবহে ছিল হাস্যরসও। নাদাল মজার ছলে বলেন, “আর্সেনাল যখন চ্যাম্পিয়নস লিগে রিয়াল মাদ্রিদকে হারাল, মারে আমাকে একটা মেসেজ পাঠায়—‘হেই রাফা, অনেকদিন কথা হয়নি, সব ঠিকঠাক তো?’ প্রথমে বুঝিনি, তারপর হেসে ফেলি—এটাই তো ব্রিটিশ হিউমার!”

১৫ হাজার দর্শকের সেই স্টেডিয়াম যেন হয়ে উঠেছিল এক জীবন্ত টেরাকোটার পোট্রেট। প্রত্যেক দর্শককে দেওয়া হয়েছিল ইটরঙা টি-শার্ট, যার রঙ মিলে যায় রোলাঁ গ্যারোঁর মাটির কোর্টের সঙ্গে। ‘রাফা! রাফা!’ ধ্বনিতে মুখরিত হয় গোটা চাত্রিয়ে, আর তিনি যখন কোর্টে এলেন, গম্ভীর পোশাকে, এক মিনিটের বেশি সময় ধরে চলল করতালি।

বর্তমান তারকা কার্লোস আলকারাজ ও ইগা শিয়নটেক উঠে দাঁড়িয়ে করতালি দেন—নাদালের প্রভাব যে শুধু অতীত নয়, বর্তমান ও ভবিষ্যতেও রয়ে যাবে, সেটার প্রমাণ যেন তাঁরা।

শেষদিকে নাদাল তিনটি ভাষায়—স্প্যানিশ, ফরাসি ও ইংরেজিতে—ধন্যবাদ জানান নিজের পরিবারকে, বিশেষ করে তাঁর কাকা টনি নাদালকে, যিনি কোচ হিসেবে তাঁকে ২২টি গ্র্যান্ড স্লামের ১৬টিতেই পথ দেখিয়েছেন।

বিদায়ের উপসংহারে ফরাসি ওপেন আয়োজকরা কোর্টের জালে পাশে উন্মোচন করেন এক রূপালি ফলক, যেখানে খোদাই করা ছিল নাদালের পায়ের ছাপ—রোলাঁ গ্যারোঁর ইতিহাসে তাঁর অবিচ্ছেদ্য উপস্থিতির নিদর্শন।

“এটা নিখুঁত ছিল,” বলছিলেন নাদাল। “আমি সাধারণত এই ধরণের অনুষ্ঠানে স্বচ্ছন্দ নই, কিন্তু আজ খুব উপভোগ করেছি। সত্যিই অসাধারণ।”

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *