ভারত থেকে ফিরেও যেন রেহাই মিলছে না গোলাম রব্বানী ছোটনের। সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশ দলের হতাশাজনক পারফরম্যান্সের পর এবার সমালোচনার তীর ছুটে যাচ্ছে কোচের দিকেই। মাঠে খেলোয়াড়দের দুর্বলতা নয়, বরং কোচিং ম্যানেজমেন্টেই ভরাডুবির আসল কারণ খুঁজে পাচ্ছেন অনেকে—ভক্ত থেকে বিশ্লেষক, এমনকি ফুটবল অঙ্গনের একাংশও।
বিতর্কের সূত্রপাত ছোটনের এক বক্তব্য থেকে: “আমার কাছে সবাই সমান, দেশি হোক বা বিদেশি, সেটা বড় কথা নয়।” অথচ মাঠে তার সিদ্ধান্ত যেন তার নিজের কথাকেই অস্বীকার করে। দলে থাকা প্রতিভাবান
বংশোদ্ভূত ফুটবলারদের ব্যবহার ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। ফারজাদ এক মিনিটও মাঠে নামার সুযোগ পাননি, যদিও অনুশীলন ও প্রস্তুতি ম্যাচে তার পারফরম্যান্স ছিল নজরকাড়া। আরেক বংশোদ্ভূত তারকা, উইঙ্গার আবদুল কাদিরকে খেলানো হয় ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডে—মাত্র ২৫ মিনিটের জন্য! ফুটবল বিশ্লেষকদের চোখে এটি ছিল একেবারেই দুর্বোধ্য সিদ্ধান্ত।
অন্যদিকে, বারবার সুযোগ পেয়েও ব্যর্থ হওয়া দেশি খেলোয়াড়দের ওপর ছোটনের অন্ধ আস্থা ছিল স্পষ্ট। রিফাত কাজী ও সরেনের মতো খেলোয়াড়রা একাধিক ম্যাচে ভুলের পর ভুল করেও একাদশে ছিলেন অবিচল। রোটেশন বা বিকল্প কৌশল প্রয়োগে ছিল না কোনো আগ্রহ—যেন একটি অদৃশ্য চাপে বাধ্য হয়ে মাঠে নামছে দল, পরিকল্পনা ছাড়াই।
ফাইনালে মুরসেদ আলীর দিকে বারবার বল পাঠানোর নির্দেশ নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন। ছোটন বলেছেন এটি ছিল তার “কৌশলের অংশ”। কিন্তু অনেকের মতে, এটি ছিল কৌশল নয়, বরং মরিয়া হয়ে কিছু একটা করে দেখানোর চেষ্টা। পুরো টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ দলে কোনো প্ল্যান ‘বি’ ছিল না—একটি ছকে আটকে থাকা দল যেন পরিস্থিতির পরিবর্তনে অক্ষম।
সোশ্যাল মিডিয়ায় চলছে তীব্র সমালোচনা। ফেসবুকের বাংলাদেশ ফুটবল প্রেমীদের গ্রুপগুলোতে এমন পোস্ট প্রায়শই দেখা যাচ্ছে, “যদি কোচিংটা ঠিক হতো, তাহলে আমরা সাফ জিততাম।” এরকম শত শত মন্তব্যে ফুটে উঠেছে সমর্থকদের ক্ষোভ ও হতাশা।
নারী ফুটবল ও কিশোর ফুটবল গড়ে তোলায় ছোটনের অবদান নিঃসন্দেহে বড়। তবে এ টুর্নামেন্ট শেষে প্রশ্ন উঠেছে—নতুন প্রজন্মের ফুটবলারদের জন্য তিনি আদৌ সঠিক পথপ্রদর্শক কি না? ফুটবলে শুধু পরিচিত মুখ নয়, দরকার সৎ মানসিকতা, বাস্তবতাবোধ এবং পরিবর্তনের সাহস। এই তিন জায়গায়ই কি এবার পিছিয়ে পড়লেন গোলাম রব্বানী ছোটন?