দুই দশকেরও বেশি সময় পর কান চলচ্চিত্র উৎসবে সশরীরে হাজির হলেন ইরানের খ্যাতিমান পরিচালক জাফর পানাহি। কারণ তার ওপর ১৫ বছর ধরে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রেখেছিল ইরান সরকার। ৭৮তম কান চলচ্চিত্র উৎসবের মূল প্রতিযোগিতা বিভাগে স্বর্ণপামের জন্য মনোনীত হয়েছে ৬৪ বছর বয়সী এই নির্মাতার ‘ইট ওয়াজ জাস্ট অ্যান অ্যাক্সিডেন্ট’। মঙ্গলবার স্থানীয় সময় বিকেল ৪টায় পালে দে ফেস্টিভ্যাল ভবনের গ্র্যান্ড থিয়েটার লুমিয়েরে ও বাজিন থিয়েটারে এর ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ার হয়েছে। এর আগে লালগালিচায় হাজির হন তিনি। তার সঙ্গে এসেছেন স্ত্রী ও কন্যা। পাশাপাশি আছেন ছবিটির অভিনয়শিল্পী বাহিদ মোবাশ্বেরী, মরিয়ম আফসারী, ইব্রাহিম আজিজি, হাদিস পাকবাতেন, দেলনাজ নাজাফি।
গ্র্যান্ড থিয়েটার লুমিয়েরে ‘ইট ওয়াজ জাস্ট অ্যান অ্যাক্সিডেন্ট’ ছবির প্রদর্শনী শেষে আমন্ত্রিত অতিথি ও দর্শকরা টানা ১০ মিনিট দাঁড়িয়ে অভিবাদন জানান। তখন জাফর পানাহির চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ে। ইরানে নিষিদ্ধ চলচ্চিত্র নির্মাতাদের, বিশেষ করে নারী পরিচালক ও অভিনেত্রী যারা নারী অধিকারের জন্য আন্দোলনকারীদের সমর্থন দিয়েছিলেন, তাদের প্রতি ছবিটি উৎসর্গ করতে গিয়ে তার কণ্ঠস্বর কাঁপছিল।

‘ইট ওয়াজ জাস্ট অ্যান অ্যাক্সিডেন্ট’ ছবির গল্প বাহিদকে কেন্দ্র করে। সে একজন নকল পায়ের লোককে অপহরণ করে, যে দেখতে ঠিক সেই ব্যক্তির মতো যে তাকে কারাগারে নির্যাতন করেছিল ও তার জীবনের সর্বনাশ করেছে। বাহিদ অন্যান্য কারাবন্দির সঙ্গে যাচাই করতে বেরিয়ে পড়ে যে এটি সত্যিই তাদের নির্যাতনকারী কিনা এবং তারপর তার সঙ্গে কী করা উচিত সেই সিদ্ধান্ত নেবে।

২২ বছর পর কানে সশরীরে অংশ নিচ্ছেন জাফর পানাহি। চলচ্চিত্র নির্মাণের কারণে বেশ কয়েকবার গ্রেপ্তার হওয়া এই গুণী নির্মাতা সর্বশেষ ২০০৩ সালে উৎসবটিতে সশরীরে উপস্থিত হয়েছিলেন। সেই আসরে আঁ সাঁর্তে রিগা বিভাগে প্রদর্শিত তার ‘ক্রিমসন গোল্ড’ ছবিটি জুরি অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে। এর গল্প ও চিত্রনাট্য লিখেছেন ইরানের প্রয়াত নির্মাতা আব্বাস কিয়ারোস্তামি।

১৯৯৫ সালের কান উৎসবে জাফর পানাহির ‘হোয়াইট বেলুন’ ক্যামেরা দ’র পুরস্কার জিতেছে। ২০১৮ সালে তার পরিচালিত ‘থ্রি ফেসেস’ সেরা চিত্রনাট্যের পুরস্কার পেয়েছে কানে। ২০১১ সালে জাফর পানাহির ‘দিস ইজ নট অ্যা ফিল্ম’ জন্মদিনের কেকের ভেতর লুকানো একটি ফ্ল্যাশ ড্রাইভে ইরান থেকে নিয়ে কান উৎসবে বিশেষ প্রদর্শনী করা হয়।

জানা গেছে, জাফর পানাহিকে কয়েক বছর ধরে ইরান সরকার কোনো নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনেনি। বর্তমানে দেশটির আদালতে তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা বিচারাধীন নেই। পুরনো নিষেধাজ্ঞাগুলো তুলে নেওয়া হলেও চলচ্চিত্র নির্মাণের ক্ষেত্রে ঠিকই গোপনীয়তা বজায় রেখে চলেন বলে কানে একটি সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন তিনি।

২০০৯ সালে প্রথবার গ্রেপ্তার হন জাফর পানাহি। ২০১০ সালে ইরানের একটি আদালতে দেশটির ‘নিয়ম-নীতির বিরুদ্ধে অপপ্রচারে’র অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় তিনি ২০ বছরের জন্য চলচ্চিত্র নির্মাণ ও বিদেশ ভ্রমণে নিষিদ্ধ হয়েছিলেন।