প্রধান বিচারপতির বাসভবন, হাইকোর্ট এলাকাসহ ৯টি স্থানে সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করে বৃহস্পতিবার গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।
প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনা, কাকরাইল, শাহবাগসহ আশেপাশের এলাকায় এ নিয়ে গত তিন মাসে তিনবার নিষেধাজ্ঞা জারি করল পুলিশ। আগে এসব স্থানে পুলিশের নিষেধাজ্ঞা ভঙ্গ করে একাধিক সভা-সমাবেশ করার নজির রয়েছে। তবে কখনোই জারি করা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়নি, আবার সভা-সমাবেশের যথাযথ অনুমতিও দেয়নি পুলিশ।
সর্বশেষ বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতির বাসভবন, মাজার গেটসহ বিভিন্ন স্থানে যেকোনো প্রকার সভা, সমাবেশ, মিছিল, শোভাযাত্রা ও বিক্ষোভ প্রদর্শন ইত্যাদি নিষিদ্ধ করে গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে পুলিশ। ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী স্বাক্ষরিত এক গণবিজ্ঞপ্তিতে এ নির্দেশনা প্রদান করা হয়।
গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এতদ্বারা সর্বসাধারণের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, সম্প্রতি উদ্ভূত পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে জনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ অর্ডিন্যান্স (অর্ডিন্যান্স নং-III/৭৬) এর ২৯ ধারায় অর্পিত ক্ষমতাবলে অদ্য ১৫ মে ২০২৫ খ্রি. বৃহস্পতিবার হতে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত মাননীয় প্রধান বিচারপতির সরকারি বাসভবন, বিচারপতি ভবন, জাজেস কমপ্লেক্স, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের প্রধান গেট, মাজার গেট, জামে মসজিদ গেট, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ১ ও ২ এর প্রবেশ গেট, বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউট ভবনের সম্মুখে সকল প্রকার সভা, সমাবেশ, মিছিল, শোভাযাত্রা ও বিক্ষোভ প্রদর্শন ইত্যাদি নিষিদ্ধ করা হলো।
গণবিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, এছাড়া বিভিন্ন দাবি-দাওয়া আদায় ও প্রতিবাদ কর্মসূচির নামে যখন-তখন সড়ক অবরোধ করে যান চলাচলে বিঘ্ন না ঘটানোর জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে পুনরায় অনুরোধ করা হলো।
এর আগে ১০ মে জনশৃঙ্খলা ও প্রধান উপদেষ্টার নিরাপত্তার স্বার্থে তার বাসভবন যমুনা, সচিবালয় ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় সভা-সমাবেশ, গণজমায়েত, মিছিল ও শোভাযাত্রার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে ডিএমপি। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এই নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে বলে গণবিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।
তখন নিষেধাজ্ঞার আওতায় ছিল বাংলাদেশ সচিবালয়, প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনা ও আশপাশের এলাকা (হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড়, কাকড়াইল মসজিদ মোড়, অফিসার্স ক্লাব মোড় ও মিন্টো রোড। এ নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই দু’দফা এসব স্থানে সভা-সমাবেশ, গণজমায়েত ও মিছিল হয়েছে।
গত মার্চেও একই আইনের কথা বলে ডিএমপি কমিশনারের সাক্ষরিত গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ১৩ মার্চ থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ সচিবালয় এবং প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনা ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকায় কোনো ধরনের সভা, সমাবেশ, গণজমায়েত, মিছিল, শোভাযাত্রা করা যাবে না। বিজ্ঞপ্তিতে যমুনার পার্শ্ববর্তী এলাকা হিসেবে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড়, শাহবাগ মোড়, কাকরাইল মোড়, মিন্টো রোডের কথাও উল্লেখ ছিল।
তার আগে গত বছরের ২৫ আগস্ট এই দুটি জায়গায় অনির্দিষ্টকালের জন্য সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করেছিল ডিএমপি। এরপর থেকে বিশেষ করে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনে সভা-সমাবেশ খুব একটা দেখা যায়নি। তবে সচিবালয়ের সামনে ওই নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও অনেক কর্মসূচি পালন হয়েছে।
এদিকে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে গত ৮ মে রাতে যমুনার সামনে কর্মসূচি পালন করে জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ জুলাই অভ্যুত্থানের সামনের সারিতে থাকা সংগঠনগুলো।
আবার গত বুধবার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনা ঘিরে অবস্থান এবং বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। অন্যদিকে শাহবাগ অবরোধ করে নার্সিং ডিপ্লোমার শিক্ষার্থীরা দিনভর বিক্ষোভ করে। পরে তাদের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের দিকে সরিয়ে দেওয়া হয়। এরপর আবারও নিষেধাজ্ঞার কথা জানালো ডিএমপি।
