মাত্র পঁচিশ বছরেই নিভল শাহরিয়ার আলম সাম্যর জীবন। অচিন আঁধারে হারিয়ে গেল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের উজ্জ্বল মুখ। তার এই প্রস্থানকে কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না জুলাই অভ্যুত্থানের সহযোদ্ধা, সহপাঠী, বন্ধুজন।

স্বজন হারানোর ব্যথায় বেদনাহত সকলে। দুর্বৃত্তদের নির্মম ছুরির ঘায়ে বুধবার রাতে সাম্য খুন হওয়ার পর পরই বিক্ষোভে ফেটে পড়েন শিক্ষার্থীরা। সাম্য হত্যার বিচার ও নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবিতে উপাচার্যের বাসভবন ঘেরাও করেন। পরে সকালেও ক্যাম্পাসে খণ্ড খণ্ড বিক্ষোভ মিছিল করেছে সাম্যর সংগঠন ছাত্রদল।
এরপর সারারাত-সারাটা দিন স্যোশাল মিডিয়ায় একে একে শোক প্রকাশ করেন অনেকেই।
এরমধ্যে রাইশা নিতি নামে বান্ধবীর দেওয়া দুজনের হাসিখুশী ফটোপোস্ট অনেককেই থমকে দেয়। দুবাই প্রবাসী মেয়েটির আবেগ থর থর ছোট্ট নোট নেটিজেনদের অশ্রুসজল, মুহ্যমান করে।
রাইশা নিতি লেখেন, ‘অন্ধকার জীবনে আলো হয়ে এসে আমাকে বাঁচতে শেখালে। আজকে নিজেই অন্ধকারে চলে গেলে। কিভাবে বাঁচবো আমি সাম্য? কি বুঝ বুঝিয়ে নিজেকে বুঝাতে পারব যে তুমি আর কোথাও নেই?’
‘ওপারে তুমি অনেক ভালো থেকো। কিন্তু এপারে আমার কি হবে?’ প্রশ্ন রাখেন তিনি।
এই পোস্টে বন্ধুজনরা শান্তনা দিয়েছেন মেয়েটিকে, কায়মনে শুভ প্রার্থণা করেছেন সাম্যর জন্য। সামিয়া ইসলাম তিতলি লিখেছেন, ‘তোমার হ্যাপি থাকাটা মনে হয় স্থায়ী না আপু। এত কিছুর পর তোমার মতো প্রফুল্ল মানুষকে আবার হাসিখুশি দেখতে আমাদেরও ভালো লাগতো। আল্লাহ তোমাকে আরো ধৈর্য দিক।’
৫ আগস্টে সরকার পরিবর্তনের মুক্ত আবহে হাজার হাজার ছাত্র-জনতা সমবেত হয়েছিলেন জাতীয় সংসদ ভবনে। সেখানে দাঁড়িয়ে দু’দিকে দু’হাত ছড়িয়ে ছবি তোলেন সাম্য। আকাশী রঙের শার্ট পরা সুদর্শন ছেলেটির এই ছবিটি এখন ছড়িয়েছে ফেসবুকে।

বহুজনে এই ছবির সাথে ছোট্ট নোটে জানাচ্ছেন, তারা কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না এই আকস্মিক অজানা যাত্রা।
মেহেদী আমিন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের উপদেষ্টা, এমনই একটি ফটোপোস্টে লিখেছেন, ‘যে ছেলেটি স্বপ্ন দেখেছিল পরিবর্তনের, যে লড়াই করেছিল মানুষের অধিকার রক্ষার জন্য —গণঅভ্যুত্থানের সেই ফ্রন্টলাইনার সাম্যকেই আজ নিজের ক্যাম্পাসে প্রাণ দিতে হলো!’
‘এ কেমন দেশ বানাচ্ছে শাসকেরা? কিভাবে শোধ হবে এই রক্তের দায়, জীবনের মূল্য? আমরা গ্রেপ্তার চাই, বিচার চাই, জবাবদিহিতা চাই। ব্যর্থ প্রশাসন নয়, আমরা নিরাপদ ক্যাম্পাস ও সুরক্ষিত বাংলাদেশ চাই’, যোগ করেন তিনি।
মাহিম সৌরভ নামে আরেক সুহৃদ ফটোপোস্টে লেখেন, ‘পাখির মতো ঝরে যাচ্ছে মেধাবী সব মুখ। পারভেজের (প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী, দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে নিহত) পর সৌম্য। ছাত্রদলের আরেকজন কর্মী ও জুলাই আন্দোলনের এক অগ্র সৈনিক। এর পর হয়তো আপনার আমার মতো কেউ। একটা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছেলে অথবা মেয়ে পুরো পরিবারের আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতীক। অথচ বিনা অপরাধে আজ তাদের প্রাণ কেড়ে নেয়া হচ্ছে। এই দেশে মানুষের নিরাপত্তা দেয়ার দায়িত্ব আসলে কার!!’
মঙ্গলবার মধ্যরাতের দিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এলাকায় ছুরিকাঘাতে নিহত হন ঢাবির স্যার এ এফ রহমান হল শাখা ছাত্রদলের সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক শাহরিয়ার আলম সাম্য। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী ছিলেন তিনি। বাড়ি সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া থানা এলাকায়। সাম্য হত্যাকাণ্ডে এরই মধ্যে তিন সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।