মহান মুক্তিযুদ্ধ ও জাতীয় সংগীতের প্রশ্নের একটি দলকে ‘সুস্পষ্ট রাজনৈতিক অবস্থান জাতির সামনে ব্যাখ্যা’ করার আহ্বান জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। জামায়াত-শিবিরের নাম উল্লেখ না করেই সোমবার সকালে দেওয়া এক বিবৃতিতে আহ্বান জানিয়েছে জুলাই অভ্যুত্থানের নেতাদের নিয়ে গড়া দলটি।
‘সাম্প্রতিক রাজনৈতিক বিতর্কে এনসিপি’র অবস্থান’ শিরোনামে বিবৃতিতে অভিযোগ আনা হয়েছে, একটি দল ‘জনগণের ঐতিহাসিক সংগ্রাম বিরোধী’ ও ‘আপত্তিকর স্লোগান’ দেওয়ায় জনমনে প্রশ্ন উঠেছে। বিবৃতিতে জানিয়ে দেওয়া হয়, ‘তার দায়-দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট পক্ষটিকেই বহন করতে হবে। এনসিপিকে এর সাথে জড়ানো সম্পূর্ণ অহেতুক ও অনাকাঙ্ক্ষিত।’
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরা দ্ব্যর্থহীনভাবে বলছি জাতীয় নাগরিক পার্টি – এনসিপি’র কোনো সদস্য সাম্প্রতিক আন্দোলনে দলীয় স্লোগান কিংবা এই জনপদের মানুষের সংগ্রাম ও ইতিহাসবিরোধী কোনো স্লোগান দেয়নি।’
‘বরং এনসিপি সদস্যদের বক্তৃতা ও স্লোগানে এই জনপদের মানুষের ঐতিহাসিক সংগ্রামের অধ্যায়সমূহ তথা ১৯৪৭, ১৯৭১, এবং ২০২৪ এর প্রতিফলন ছিল। আমরা আরো লক্ষ করেছি – আন্দোলনকারীরা জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনার সময় একটি পক্ষ আপত্তি জানালেও তারা দৃঢ়তার সাথে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করে।’
দেশবিভাগ, মুক্তিযুদ্ধ ও জুলাই অভ্যুত্থান প্রসঙ্গে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করে বিবৃতিতে বলা হয়, ‘জাতীয় নাগরিক পার্টি – এনসিপি মনে করে বাংলাদেশের মানুষের ঐতিহাসিক সংগ্রামের অধ্যায়সমূহ তথা, ১৯৪৭, ১৯৭১ এবং ২০২৪ এর যথাযথ স্বীকৃতি এবং মর্যাদা বাংলাদেশে রাজনীতি করার পূর্বশর্ত।’
‘যারা ১৯৭১ সালে এই জনপদের মানুষের জনযুদ্ধের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করেছিল এবং যাদের বিরুদ্ধে গণহত্যায় সহযোগিতার অভিযোগ রয়েছে, আমরা চাই তারা নিজেদের সুস্পষ্ট রাজনৈতিক অবস্থান জাতির সামনে ব্যাখ্যা করে জাতীয় সমঝোতা ও ঐক্যকে সুদৃঢ় করবে এবং চব্বিশের অভ্যুত্থানের জনআকাঙ্ক্ষাকে বাস্তবায়নে সহযোগী হবে’, যোগ করা হয় এতে।
বিবৃতিতে ‘বাংলাদেশপন্থার’ ওপর গুরুত্বারোপ করে এনসিপি বলছে, ‘বিগত ফ্যাসিবাদি জমানায় নির্যাতিত-নিপীড়িত হয়ে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণের পথে বাংলাদেশের নাগরিকদের পক্ষে চব্বিশের অভ্যুত্থানে যারা ভূমিকা পালন করেছেন, নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে তাদেরকে আবশ্যিকভাবে ‘বাংলাদেশপন্থি’ ভূমিকা পালন করে যেতে হবে।’
‘এনসিপি মনে করে কোনো রাজনৈতিক দল বা পক্ষের পূর্বেকার রাজনৈতিক অবস্থান বা আদর্শের কারণে ইতিপূর্বের বিভাজন ও অনৈক্যের রাজনীতির সূত্রপাত ঘটলে, সংশ্লিষ্ট দল বা পক্ষের দায় রয়েছে বাংলাদেশের মানুষের সামনে নিজেদের সুস্পষ্ট অবস্থান ব্যাখ্যা করে জাতীয় ঐক্যের পথে হাঁটার। বাংলাদেশের জনগণের মধ্যকার বৃহত্তর ঐক্যের মাধ্যমেই কেবল মুজিববাদকে সামগ্রিকভাবে পরাস্ত করা সম্ভব হবে বলে আমরা মনে করি’, উল্লেখ করা হয় এতে।
উপসংহারে তারা বলেছে, ‘বাংলাদেশের জনগণের সুন্দর ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের জন্য সকল পক্ষকে দূরদর্শী সিদ্ধান্ত ও দায়িত্বশীল আচরণের আহ্বান জানায় এনসিপি।’