পোপ ফ্রান্সিসের মৃত্যুতে খ্রিস্টান বিশ্বের সর্বোচ্চ ধর্মীয় আসনে তৈরি হয়েছে শূন্যতা। বিশ্বজুড়ে ক্যাথলিক সম্প্রদায় ও ধর্মীয় বিশ্লেষকদের নজর এখন সম্ভব্য নতুন পোপের দিকে। কিন্তু হবেন নতুন পোপ? পোপ নির্বাচনের প্রক্রিয়াই বা কী?
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো বলছে, নতুন পোপ নির্বাচন হচ্ছে শতাব্দীপ্রাচীন এক গোপন প্রথা– যাকে বলা হয় ‘কনক্লেভ’।
ভ্যাটিকান সিটির সিস্টিন চ্যাপেলে অনুষ্ঠিত হবে এই কনক্লেভ, যেখানে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ৮০ বছরের কম বয়সী কার্ডিনালরা এসে গোপন ব্যালটে দেবেন ভোট। অন্তত দুই-তৃতীয়াংশ ভোট পেয়ে একজন কার্ডিনালকে নির্বাচিত করা হবে নতুন পোপ হিসেবে।
এই নির্বাচনে কারা থাকতে পারেন আলোচনায়?
১. জঁ-মার্ক অ্যাভেলিন (ফ্রান্স): মার্সেইয়ের আর্চবিশপ অ্যাভেলিন পোপ ফ্রান্সিসের ঘনিষ্ঠ সহযোগী। অভিবাসী ইস্যুতে তার স্পষ্ট অবস্থান তাকে সম্ভাব্য পছন্দ হিসেবে রেখেছে।
২. লুইস আন্তোনিও ট্যাগল (ফিলিপাইন): এশিয়ার সবচেয়ে আলোচিত নাম। বহু বছর ধরে ভ্যাটিকানের গুরুত্বপূর্ণ পদে আছেন। দরিদ্রদের প্রতি সহানুভূতিশীলতা ও তরুণ প্রজন্মের মধ্যে জনপ্রিয়তার জন্য তিনি প্রার্থী হিসেবে এগিয়ে রয়েছেন।
৩. পিটার এরদো (হাঙ্গেরি): রক্ষণশীল অবস্থান ও প্রথাগত ক্যাথলিক মূল্যবোধের প্রতি আনুগত্য তাকে ইউরোপীয় গোষ্ঠীর শক্তিশালী প্রার্থী করেছে।
৪. মারিও গ্রেচ (মাল্টা): সিনোডাল পদ্ধতিকে এগিয়ে নিতে পোপ ফ্রান্সিস যাদের ওপর নির্ভর করেছেন, তাদের মধ্যে গ্রেচ অন্যতম। তিনি একটি অংশগ্রহণমূলক চার্চের পক্ষে।
৫. হুয়ান হোসে ওমেলা (স্পেন): স্পেনের বার্সেলোনার আর্চবিশপ হিসেবে তিনি সাধারণ জীবনযাপন ও সামাজিক ন্যায়ের পক্ষে বারবার কথা বলেছেন।
৬. পিয়েত্রো প্যারোলিন (ইতালি): ভ্যাটিকানের সেক্রেটারি অব স্টেট হিসেবে দীর্ঘদিন দায়িত্বপালন করেছেন। কূটনীতিতে অভিজ্ঞ ও আপসপ্রবণ মনোভাবের জন্য অনেকে তাকে উপযুক্ত মনে করেন।
৭. মাত্তেও মারিয়া জুপ্পি (ইতালি): তরুণদের মধ্যে জনপ্রিয় এই ইতালীয় কার্ডিনাল পোপ ফ্রান্সিসের আদর্শে বিশ্বাসী। তাকে ‘ইতালির বারগোগ্লিও’ বলেও অভিহিত করা হয়।
৮. পিটার টার্কসন (ঘানা): যদি আফ্রিকা থেকে পোপ নির্বাচিত হন, তাহলে তিনিই হতে পারেন নতুন পোপ। সামাজিক ন্যায়বিচার ও পরিবেশবাদী অবস্থানের জন্য তিনি পরিচিত।
৯. জোসেফ টোবিন (যুক্তরাষ্ট্র): নিউ জার্সির আর্চবিশপ হিসেবে অভিবাসন ও এলজিবিটি অধিকার নিয়ে স্পষ্ট অবস্থান তাকে প্রগতিশীল ভাবধারার প্রতীক হিসেবে তুলে ধরেছে।
আসন্ন পোপ নির্বাচন মানে কেবল ধর্মীয় নেতৃত্বের বদল নয়, বরং এটি সমগ্র ক্যাথলিক চার্চের ভবিষ্যৎ দর্শনেরও দিকনির্দেশক। কনজারভেটিভ না লিবারেল, ইউরোপ-কেন্দ্রিক না বৈশ্বিক, প্রথাগত না সংস্কারমুখী—এসব দ্বন্দ্বের সমাধানের মধ্যে দিয়ে নির্বাচিত হবেন নতুন পোপ।
ভ্যাটিকানে ধোঁয়ার রঙ দেখার অপেক্ষায় রয়েছে বিশ্ব। সাদা ধোঁয়া উঠলেই বোঝা যাবে—নতুন পোপ নির্বাচিত হয়েছেন।