জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগ সরকারের শীর্ষ ১২ জনকে গ্রেপ্তারে আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা– ইন্টারপোলে ‘রেড নোটিশ’ জারির জন্য আবেদন করেছে বাংলাদেশ পুলিশ। পুলিশের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরো (এনসিবি) তিনটি পৃথক ধাপে এসব আবেদন ইন্টারপোলের কাছে পাঠিয়েছে বলে জানা গেছে।
শেখ হাসিনা ছাড়াও যাদের বিরুদ্ধে এ নোটিশ জারির আবেদন করা হয়েছে, তাদের মধ্যে রয়েছেন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, সাবেক মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস, সাবেক প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা তারিক সিদ্দিক, বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত এবং সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ।
এরমধ্যে শেখ হাসিনা ও আরো ১০ জনের বিরুদ্ধে রেড নোটিশের আবেদন পাঠানো হয়েছে ১০ এপ্রিল। এর আগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয় তাদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধে সংশ্লিষ্ট অভিযোগ এনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশ সদর দপ্তরে প্রয়োজনীয় নথিপত্র পাঠায়। তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধেই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি রয়েছে।
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বর্তমানে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে তিনটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় তাকে জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় গণহত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে। অন্য দুটি মামলা ২০১৩ সালে হেফাজতের বিরুদ্ধে অভিযানে হতাহতের ঘটনা এবং বিগত ১৫ বছরে গুম-খুনের অভিযোগ সংক্রান্ত।
৫ আগষ্টের গণঅভ্যুত্থানের সময় শেখ হাসিনা পালিয়ে ভারতে আশ্রয় গ্রহণ করেন, এখনো তিনি সে দেশেই অবস্থান করছেন বলে দিল্লির পক্ষ থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে। দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশের বন্দী প্রত্যর্পণ চুক্তি থাকায় তাকে ফিরিয়ে আনার জন্য ঢাকার পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক আবেদন করা হয়েছে। তবে দিল্লির পক্ষ থেকে এর প্রাপ্তি স্বীকার করা হলেও আবেদনের কোনো জবাব দেওয়া হয়নি।
অন্যদিকে, সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগে গত ফেব্রুয়ারিতে রেড নোটিশের জন্য আবেদন করা হয়। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তদন্তের তথ্যের ভিত্তিতে একটি আদালত ইন্টারপোলকে এ পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেয়।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সূত্র জানিয়েছে, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধে করা মামলার তদন্ত প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। রোববার (২০ এপ্রিল) মামলার তদন্ত প্রতিবেদন ট্রাইব্যুনালে দাখিলের দিন ধার্য রয়েছে।