কান উৎসবে ইতিহাস গড়বে নাইজেরিয়ান ছবি

admin
By admin
4 Min Read
(বাঁ থেকে) আকিনোলা ডেভিস জুনিয়র, ফানবাই ওগানবানওয়ো ও সোপ দিরিসু । ছবি: সংগৃহীত
Highlights
  • কানের ৭৮ বছরের ইতিহাসে এবারই প্রথম আফ্রিকার সবচেয়ে জনবহুল এই দেশের একটি ছবি নির্বাচিত হয়েছে। মাই ফাদার’স শ্যাডো নামের ছবিটি পরিচালনা করেছেন আকিনোলা ডেভিস জুনিয়র।

কান চলচ্চিত্র উৎসবে উড়বে এবার নাইজেরিয়ার পতাকা! কানের ৭৮ বছরের ইতিহাসে এবারই প্রথম আফ্রিকার সবচেয়ে জনবহুল এই দেশের একটি ছবি নির্বাচিত হয়েছে। মাই ফাদার’স শ্যাডো নামের ছবিটি পরিচালনা করেছেন আকিনোলা ডেভিস জুনিয়র। এটাই তার বানানো প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র। এতে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন নাইজেরিয়ান বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ তারকা সোপ দিরিসু।

নাইজেরিয়ার সবচেয়ে জনবহুল ও আফ্রিকার বৃহত্তম শহর লাগোসে ১৯৯৩ সালে নাইজেরিয়ার রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের পরের ঘটনাবলি নিয়ে তৈরি হয়েছে “মাই ফাদার’স শ্যাডো”। বাবার সঙ্গে দুই ভাইয়ের লাগোসে একটি দিন কাটানোর মর্মস্পর্শী যাত্রার মধ্য দিয়ে সেই রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রতিচ্ছবি তুলে ধরা হয়েছে।

আকিনোলা ডেভিস জুনিয়র ও তার ভাই ওয়ালে ডেভিস বাস্তব জীবনে অল্প বয়সে বাবাকে হারিয়েছেন। সেই অভিজ্ঞতার আলোকে দুই ভাই মিলে ছবিটির গল্প ও চিত্রনাট্য লিখেছেন। আধা-আত্মজীবনীমূলক ছবিটির উত্তর আমেরিকা ও অন্যান্য অঞ্চলের পরিবেশনা স্বত্ব আগেই কিনে নিয়েছে মুবি। কান উৎসবের নবীন ও উদীয়মান চলচ্চিত্র নির্মাতাদের প্রতিযোগিতামূলক বিভাগ আঁ সাঁর্তে রিগায় নির্বাচিত হওয়ার ফলে ছবিটি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা তৈরি হয়েছে।

প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ফাদারল্যান্ড প্রোডাকশন্সের সিইও ফানবাই ওগানবানওয়ো সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, আঁ সাঁর্তে রিগা বিভাগে নির্বাচিত প্রথম নাইজেরিয়ান চলচ্চিত্র এটাই। নাইজেরিয়ার নিজস্ব গল্প নিয়ে নির্মিত ছবিটির সুবাদে এই জাতিকে জানা, তাদের ইতিহাস বোঝা ও উপলব্ধি করা যাবে বলে বিশ্বাস তার।

গত ১০ এপ্রিল প্যারিসে এক সংবাদ সম্মেলনে অফিসিয়াল সিলেকশন ঘোষণার সময় কান উৎসবের পরিচালক থিয়েরি ফ্রেমোঁ জানান, “মাই ফাদার’স শ্যাডো” কানের ইতিহাসে প্রথম নাইজেরিয়ান চলচ্চিত্র কিনা যাচাই করা হচ্ছে। তবে উৎসবের অনলাইন আর্কাইভ অনুসন্ধানে দেখা গেছে, নাইজেরিয়ান ছবি কানের অফিসিয়াল সিলেকশনে আগে কখনো জায়গা পায়নি। এরমধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে মূল প্রতিযোগিতা, আঁ সাঁর্তে রিগা, কান প্রিমিয়ার, স্পেশাল স্ক্রিনিংস, মিডনাইট স্ক্রিনিংস ও কান ক্ল্যাসিকস।

৭৮তম কান উৎসবে আফ্রিকা
কান চলচ্চিত্র উৎসবে এবার ২ হাজার ৯০৯টি পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র জমা পড়েছে। এর মধ্যে নির্বাচিত ছবির তালিকায় “মাই ফাদার’স শ্যাডো” একমাত্র আফ্রিকান প্রতিনিধি নয়।

আঁ সাঁর্তে রিগা বিভাগেই রয়েছে মিসরের মোরাদ মোস্তাফা পরিচালিত ‘আয়শা কান্ট ফ্লাই অ্যাওয়ে’। এতে রয়েছে কায়রোতে কাজ করা এক সোমালি নারীর গল্প। একই বিভাগে আছে ফরাসি-তিউনিসিয়ান নারী এরিজ সেহিরি পরিচালিত ‘প্রমিসড স্কাই’।

মিসরীয় বংশোদ্ভূত সুইডিশ পরিচালক তারিক সালেহ মূল প্রতিযোগিতায় ‘ঈগলস অব দ্য রিপাবলিক’ ছবির সুবাদে জায়গা করে নিয়েছেন। এর গল্পে একজন জনপ্রিয় মিসরীয় অভিনেতার পতনের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। মূল প্রতিযোগিতায় যুক্তরাষ্ট্রের পটভূমিতে নির্মিত ‘দ্য হিস্ট্রি অব সাউন্ড’ ছবিতে অভিনয় করেছেন পল মেসকাল ও জশ ও’কনোর। এটি পরিচালনা করেছেন দক্ষিণ আফ্রিকার অলিভার হারমানাস।

বিশ্বের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ চলচ্চিত্র উৎসব কানে আফ্রিকান ছবির অর্জন কম নয়। সেনেগালের জিব্রিল দিওপ মামবেতি, মালির সুলেমানে সিসে ও চাঁদের মাহামত-সালেহ হারুনের মতো পরিচালকদের বেশ কিছু ছবি নির্বাচিত হয়েছে এই বৈশ্বিক মঞ্চে।

সম্প্রতি একঝাঁক তরুণ পরিচালকের উত্থান ঘটেছে আফ্রিকায়। তাদের অনেকেই নারী। এ তালিকায় আছেন ওয়েলশ-জাম্বিয়ান রুঙ্গানো নিয়োনি, ফরাসি-সেনেগালীয় মাতি দিয়োপ (জিব্রিলের ভাগ্নি), সেনেগালের রামাতা-তুলাই সি ও তিউনিসিয়ার কাওতার বেন হানিয়া। লক্ষণীয় বিষয় হলো, আকিনোলা ডেভিস জুনিয়রের মতো স্বাধীন নাইজেরিয়ান চলচ্চিত্র নির্মাতারা নানা প্রতিকূলতা মোকাবিলা করে এগিয়ে যাচ্ছেন।

তবে আফ্রিকার সবচেয়ে বৃহৎ ও ব্যস্ত চলচ্চিত্র শিল্প থাকা সত্ত্বেও নাইজেরিয়ার উপস্থিতি কানে বলার মতো ছিল না। নাইজেরিয়ান চলচ্চিত্র অতীতে কানের সমান্তরাল বিভাগ ইন্টারন্যাশনাল ক্রিটিকস উইকে জায়গা পেয়েছে। উদাহরণ হিসেবে ২০০৭ সালের নিউটন আই. আদুয়াকা পরিচালিত ‘এজরা’ ছবির কথা বলা যায়।

নাইজেরিয়ার বড় পদক্ষেপ
এবারের কানে নাইজেরিয়ার গর্ব করার মতো আরো কারণ আছে! উৎসবের বাণিজ্যিক শাখা মার্শে দ্যু ফিল্মের আন্তর্জাতিক ভিলেজে নাইজেরিয়া নিজস্ব জাতীয় প্যাভিলিয়ন নিয়ে হাজির থাকবে। ‘ডেস্টিনেশন ২০৩০: নাইজেরিয়া এভরিহোয়্যার’ প্রচারণার অংশ হিসেবে প্যাভিলিয়নে দেশটির শিল্প-সংস্কৃতি, পর্যটন ও সৃজনশীল অর্থনীতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় ‘স্ক্রিন নাইজেরিয়া’ চালু করবে। এর লক্ষ্য ২০৩০ সালের মধ্যে সৃজনশীল ও পর্যটন শিল্পে ২০ লাখ কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও নাইজেরিয়ার জিডিপিতে ১০০ বিলিয়ন ডলার অবদান রাখা। এর উদ্দেশ্য দেশের প্রতিভাবানদের তুলে ধরার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সহযোগিতার সুযোগ সৃষ্টি ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করা।

৭৮তম কান চলচ্চিত্র উৎসব চলবে ১৩ মে থেকে ২৪ মে পর্যন্ত।

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *