অডিট ফার্ম কালো তালিকাভুক্ত করার ক্ষমতা পাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক

4 Min Read

ক্রেডিট রেটিং এজেন্সি, ভ্যালুয়েশন ফার্ম ও অডিট ফার্মগুলোকে ব্যাংক খাতের নিবন্ধিত তালিকা থেকে বাদ দেওয়াসহ কালো তালিকাভুক্ত করার ক্ষমতা পাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডিন্যান্সের প্রস্তাবিত সংশোধনীতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ সব ব্যাংকে যেকোনো অনিয়ম-দুর্নীতির তথ্যদাতাদের আইনী সুরক্ষার বিধানও সংযুক্ত করা হয়েছে। প্রস্তাবনা অনুযায়ী, কেন্দ্রীয় ব্যাংক পরিচালনার এই আইনটি বিদ্যমান যেকোনো আইনের ওপর প্রাধান্য পাবে।

আর্থিক খাতের লুটপাট বন্ধ ও কেন্দ্রীয় ব্যাংককে শক্তিশালী করার এমন নানা প্রস্তাব সম্বলিত সংশোধনীটির খসড়া মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশেষ পর্ষদ সভায় অনুমোদন  পেয়ছে। উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদনের অপেক্ষায় থাকা সংশোধনীটিকে রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশের মাধ্যমে দ্রুত আইনে রূপান্তরের লক্ষ্য রয়েছে।

খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্যাংকগুলোতে হওয়া অবাধ লুটপাটে ক্রেডিট রেটিং এজেন্সি, ভ্যালুয়েশন ফার্ম ও অডিট ফার্মগুলোর দায় রয়েছে। এদের অনেকেই লুটেরাদের প্রয়োজন অনুযায়ী ভ্যালুয়েশন ও প্রতিবেদন তৈরি করে দেয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিদ্যমান আইনে এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কোনও সুযোগ নেই। কিন্তু প্রস্তাবিত সংশোধনীটি অনুমোদন পেলে এদেরকে কালো তালিকাভুক্ত করাসহ এদের লাইসেন্স বাতিল করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানাতে পারবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন পর্ষদ সদস্য নাম প্রকাশ না কারার শর্তে টাইমস অব বাংলাদেশকে বলেন, ‘এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে জবাবদিহিতার মধ্যে আনতে চায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।’

প্রস্তাবিত সংশোধনী অনুযায়ী, আর্থিক খাতের যেকোনো প্রতিষ্ঠান মনোপলি বা একচেটিয়া ব্যবসায় জড়িত হলে সেগুলো নিয়ন্ত্রণের মধ্যে নিয়ে আসবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এছাড়া ডিজিটাল কারেন্সির অনুমোদনসহ ডিজিটাল ব্যাংকের বিষয়গুলোও এতে স্থান পেয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, ‘তিনটি সভায় আলোচনার পর এই সংশোধনীর খসড়া অনুমোদন করেছে পর্ষদ। এই যাত্রাটি অনেক চ্যালেঞ্জিং ছিল। বেশ কয়েকজন পর্ষদ সদস্য বেশ সাপোর্ট দিয়েছেন। সংশোধনীর অনেক ধারা আরো যুগোপযোগী ও মানসম্মত করার জন্য তাদের পরামর্শ কাজে লেগেছে। পর্ষদ সদস্যদের আন্তরিকতার কারণে পূর্ণাঙ্গ স্বায়ত্তশাসনের দিকে আমরা একধাপ এগিয়ে গেলাম।’

এই সংশোধনী অনুমোদন পেলে পুরো আর্থিক খাতের জন্য আইন ও বিধিমালা তৈরি করার ক্ষমতা পাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের পর্ষদ।

খসড়ায় প্রস্তাব করা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে আমলাদের সংখ্যা এক-তৃতীয়াংশ থেকে নামিয়ে একজনে আনা হবে। বাকি ছয়জন আসবেন বেসরকারি খাত থেকে—অর্থনীতিবিদ, ব্যাংকার, আইনজ্ঞ ও শিল্পোদ্যোক্তাদের মধ্য থেকে। গভর্নর নির্বাচিত একজন ডেপুটি গভর্নরও বোর্ডে থাকবেন এবং চেয়ারম্যান হবেন গভর্নর নিজে।

গভর্নরের নিয়োগ হবে রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে, তবে এজন্য সুপারিশ করবে একটি সার্চ কমিটি, যেখানে থাকবেন অর্থমন্ত্রী, বাণিজ্যমন্ত্রী এবং বর্তমান বা সদ্য সাবেক কোনো গভর্নর। বর্তমানে আমলানির্ভর কমিটির সুপারিশে প্রধানমন্ত্রী গভর্নর নিয়োগ দেন।

অপসারণ প্রক্রিয়াতেও বড় পরিবর্তন এসেছে—অর্থ মন্ত্রণালয়ের হাতে থাকা ক্ষমতা বাতিল করে এটি দেওয়া হবে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের তিন বিচারকের কমিটির হাতে। গভর্নর ও ডেপুটি গভর্নরদের মেয়াদ কমপক্ষে চার বছর নির্ধারণ করা হয়েছে, যদিও শুরুতে ছয় বছর করার প্রস্তাব দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক।

কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতনভাতা নির্ধারণের ক্ষমতা দেওয়া হবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিজস্ব পর্ষদকে। বর্তমানে তারা সরকারি বেতন কাঠামোর আওতায় আছেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মো. আরিফ হোসেন খান টাইমস অব বাংলাদেশকে বলেন, ‘আমরা আশা করছি বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডারের এই সংশোধনীর প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করে সরকার দ্রুতই অধ্যাদেশ জারির জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।’

পুরো খসড়া প্রণয়নে সহায়তা দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এবং আইনি পরামর্শ দিয়েছে ড. কামাল হোসেন অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটসসহ একটি বিদেশি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান।

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *