আসন্ন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পাসে ঊর্ধ্বমুখী সাইবার বুলিং এবং নারী হেনস্তার মতো বিষয়গুলো ক্যাম্পাসভিত্তিক রাজনীতিতে নারীদের ভবিষ্যৎ অংশগ্রহণ নিয়ে অনিশ্চয়তার জন্ম দিয়েছে।
ফেসবুকে নারী প্রার্থীদের নিয়ে ‘বট আইডি’ থেকে অপপ্রচার চালানোর মতো বিষয়গুলোতে অপরাধীদের শনাক্তকরণে বাধা থেকে যাচ্ছে। ফলে এসব সমস্যার সমাধান পাচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
গত ২৭ আগস্ট ডাকসু নির্বাচনে আচরণবিধি লঙ্ঘনের মতো বিষয়গুলো সমাধানের উদ্দেশে টাস্কফোর্স গঠন করেছে ডাকসু নির্বাচন কমিশন।
টাস্কফোর্সের আহ্বায়ক অধ্যাপক গোলাম রাব্বানী টাইমস অব বাংলাদেশকে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত শুধু প্রার্থীদের কাছ থেকে তিনটি সাইবার বুলিংয়ের ঘটনার অভিযোগ পেয়েছি। তবে মোট সংখ্যা এখনো জানা যায়নি।’
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, নারী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অবহেলার কারণেই সমস্যার সমাধান হচ্ছে না।
সম্প্রতি ঢাবি প্রশাসন ছাত্রশিবির সমর্থিত ‘ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেলের সাধারণ সম্পাদক (জিএস) প্রার্থী এসএম ফরহাদের প্রার্থিতা রিট করা শিক্ষার্থীকে গণধর্ষণের হুমকি দেওয়া শিক্ষার্থীকে ছয় মাসের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করেছে।
ঢাবির গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস টাইমস অব বাংলাদেশকে বলেন, ‘নারী শিক্ষার্থীদের হয়রানির মতো বিষয়গুলো শুধু ডাকসুতে নয়, ক্যাম্পাসভিত্তিক রাজনীতিতেও নারীদের অংশগ্রহণ অনিশ্চয়তা তৈরি করছে।’
সাইবার বুলিংয়ের মতো বিষয়গুলো বেড়ে যাওয়ার পেছনে ‘প্রশাসনের কার্যত পদক্ষেপ না নেওয়া’ একটি বড় কারণ বলে মনে করছেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘অনেক নারী প্রার্থী এসব সমস্যাকে হার মানিয়ে এগিয়ে গেলেও একটি অংশ নিজেদের মনোবল হারাচ্ছে।’
নারী হেনস্থার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে সদস্য প্রার্থী সৃজিতা এহসান টাইমস অব বাংলাদেশকে বলেন, ‘বেশিরভাগ সাইবার বুলিং ‘বট আইডি’ থেকে করা হয়, যা শনাক্ত করা কঠিন। তবে কার স্বার্থে তারা এই কাজ করছে তা সহজেই শনাক্ত করা যায়। শিক্ষার্থীরা সচেতন হলে কিছুটা সমাধান সম্ভব।’
এ ছাড়াও ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা ঘাটতির কারণে এ বছর অনেক নারী শিক্ষার্থী ভোটে অংশ নিতে নিরুৎসাহিত হয়েছে বলেও তিনি মনে করেন।
পুরুষদের তুলনায় নারী প্রার্থীর সংখ্যা অনেক কম। তবে নির্বাচিতরা যদি নারী নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে, ভবিষ্যতে নারী প্রার্থীর অংশগ্রহণ বাড়বে বলে জানান তিনি।
সমাজসেবাবিষয়ক সম্পাদক পদে একমাত্র নারী প্রার্থী সীমা আক্তার সম্প্রতি আটজন শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে সাইবার বুলিংয়ের অভিযোগ তুলে নির্বাচন কমিশন বরাবর অভিযোগ দায়ের করেছেন। তিনি টাইমস অব বাংলাদেশকে বলেন, ‘অনলাইন প্রচারণায় কোনো প্রকার বিধিনিষেধ না থাকার কারণে নারীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আরও বেশি অনিরাপদ।’
তিনি অভিযোগ তুলেন, ‘কিছু শিক্ষার্থী নির্দিষ্ট কিছু দলের প্রয়োজনীয়তা পূরণ করার জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে, যদিও তারা কখনো নিজেদের দলীয় পরিচয় স্বীকার করে না’
এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে ডাকসু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রশাসন বিটিআরসিকে কয়েকটি ফেসবুক পেজ বন্ধের আবেদন জানায়। বিশেষ করে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সংসদ-১’, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সংসদ-২সহ একাধিক গ্রুপ ও পেজের অ্যাডমিনদের সঙ্গে বৈঠকও করে প্রশাসন।
তবে প্রার্থীদের অভিযোগ, এসব গ্রুপের নাম পরিবর্তন করে এখনো অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।
সম্প্রতি ডাকসু নির্বাচন কমিশন এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছেন, ‘নির্বাচনী প্রচারণায় প্রার্থীদের, বিশেষ করে ছাত্রীদের অতীত কর্মকাণ্ড ঘিরে সাইবার বুলিং ও চরিত্রহননের মতো ঘটনা ঘটছে, যা মানবাধিকারবিরোধী এবং অভিযোগ প্রমানিত হলে ডাকসু টাস্কফোর্স ও সাইবার সেল কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেবে।’