আগামী জাতীয় নির্বাচনের জন্য আলাদা নতুন জোট গঠনের ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি ও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। দেশে ক্রিয়াশীল ছোট ছোট সমমনা রাজনৈতিক দল নিয়ে এই জোট গড়বে বড় দল দুটি। আর এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন সমীকরণের সূত্রপাত ঘটেছে।
এরই মধ্যে জামায়াত ও বিএনপি শিবিরে এ সংক্রান্ত তৎপরতা দৃশ্যমানও হতে শুরু করেছে।
ছোট রাজনৈতিক দলগুলো এখন চিন্তা-ভাবনা করছে যে, কোন জোটে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া তাদের জন্য ভালো হবে।
বিএনপি ও জামায়াত অনেকটা সময় এক জোটে ছিল, জোটবদ্ধ হয়ে সরকারও গঠনের ইতিহাস রয়েছে দলদুটির। তবে এবার আর জোটবদ্ধ হচ্ছে না বর্তমানের বড় এই রাজনৈতিক দলদুটি।
সম্প্রতি বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের ঘোষণা দিয়েছেন যে, তারা একে অন্যকে ছাড়াই নির্বাচনী জোট গঠন করবেন। আর এই ঘোষণা আলোড়ন ফেলেছে ছোট দলগুলোর মধ্যে।
কয়েকটি সূত্র জানাচ্ছে, বিএনপি-জামায়াতের এই ঘোষণার পর অনেকগুলো ছোট দল বেশ অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে। যার মধ্যে তিন থেকে চারটি ইসলামী দল এখনো নিশ্চিত নয় যে তারা কী জামায়াতের সঙ্গে জোট করবে নাকি বিএনপির জোটে যোগ দেবে। যার মধ্যে রয়েছে জমিয়াত উলামায়ে ইসলাম এবং নেজামে ইসলাম।
গণ অধিকার পরিষদ এবং আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি) বিএনপির সঙ্গে জোট গঠনের প্রক্রিয়া থাকলেও সবশেষ খবর বলছে, পরিবর্তিত পরিস্থিতির আলোকে তারা এখন বিকল্প খুঁজছে। দিন শেষে দলগুলো এমন জোটেই যোগ দেবে যা নির্ভর করবে ওই জোট থেকে তারা কোন ধরনের এবং কতটুকু রাজনৈতিক সুবিধা পাচ্ছে সেই বিষয়টির ওপর।
পরিস্থিতি দেখে ধারণা করা হচ্ছে যে, নির্বাচনের আগে অনেক দলই হয়ত তাদের মন পরিবর্তন করবে। ছোট দলগুলোর অনেক নেতাই জোট গঠনের জন্য নিজেদের নানা তৎপরতার কথা স্বীকার করেছেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান টাইমস অব বাংলাদেশকে বলেন, ‘যারা ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে ছিল তাদের সঙ্গে জোট গঠনের বিষয়টি নতুন নয়। বাম বা ইসলামী দল যাই হোক আমাদের আপত্তি নেই।’
বিএনপিকে বাদ দিয়ে জামায়াতের জোট গঠনের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের মহাসচিব আগেই জামায়াতকে নিয়ে জোট না করার ঘোষণা দিয়েছেন। সুতরাং জামায়াত কী বলছে, সেটি তাদের ব্যাপার।’
জামায়াতের সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল এএইচএম হামিদুর রহমান আযাদ বলছেন, ‘জামায়াত বেশ আগে থেকেই নির্বাচনী জোট গঠনের চেষ্টা চালাচ্ছে। তবে, সংস্কার, পিআর এবং জুলাই সনদ নিয়ে বেশিরভাগ দল এখন বিএনপির মতের বিরুদ্ধে ঐক্যমতে রয়েছে। ফলে, অনেকেই মনে করছেন আমরা সবাই মিলে নির্বাচনী জোট করছি। এটি অনেকের জন্যে বিশেষ সংকেত। বিএনপি হঠাৎ ইসলামী দলের সঙ্গে নির্বাচনী জোট গঠনে কেন ব্যস্ত সেটি তাদের নেতারা বলতে পারবেন।’
সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে-জুলাই সনদ বাস্তবায়ন, সংস্কার ও পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন ইস্যুতে জামায়াত, এনসিপি ও ইসলামী আন্দোলনের বাইরেও এখন কয়েকটি দল বেশ সক্রিয়। এসব দলগুলোতে বিএনপি বিরোধী অবস্থান বেশ স্পষ্ট। যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে-গণঅধিকার পরিষদ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, এবি পার্টি এবং খেলাফত মজলিস।
এসব দলে একটি নির্বাচনী জোট গঠনের চেষ্টা করা হচ্ছে বলেও জোর গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। যদিও আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকেই ইসলামী দলগুলোর জোট গঠনের প্রক্রিয়া চলছিল।
তবে, বিএনপি ইসলামী দলকে নিয়ে জোট গঠনের বিষয়ে বেশ নীরব থাকলেও সম্প্রতি সরব হয়েছে। পাশাপাশি জামায়াত বিরোধী দলগুলোকে পাশে পেতে চায় দলটি। দলটির নেতাদের তৎপরতায় জোট কিংবা নির্বাচনী সমঝোতার বিষয়টি আরও স্পষ্ট হচ্ছে।
সম্প্রতি দলটি জমিয়তে ওলামা ইসলাম, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টিসহ বেশ কয়েকটি দলের সঙ্গে বৈঠক করেছে বিএনপি। সেখানে আসন ভাগাভাগি নিয়েও কথা হয়েছে বলে জানা গেছে। পাশাপাশি হেফাজতে ইসলাম, মাদ্রাসা শিক্ষক-কর্মচারীদের সংগঠন জমিয়াতুল মোদার্রেছীন ও ছারছীনা পীরের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠককে বেশ গুরুত্বপূর্ণ হিসাবে দেখা হচ্ছে। এসব সংগঠনের বড় ভোট ব্যাংক না থাকলেও বিএনপি একা হতে চায় না।
কারণ, আওয়ামী লীগ যেহেতু ভোটে নেই তাই সব দল একদিকে চলে গেঠে মাঠে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। তাই দলটির সঙ্গে ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে থাকা বামদলের পাশাপাশি আদর্শিকভাবে জামায়াত বিরোধী ইসলামি দল ও সংগঠনকে কাছে আনার প্রক্রিয়ায় রয়েছে দলটি।
ইসলামী আন্দোলনের সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব ও দলের মুখপাত্র গাজী আতাউর রহমান বলেছেন, বিএনপি তো একাই ২৮০ আসন পাবে বলে দলটির অনেক নেতার ভাব ছিল। হঠাৎ করে তাদের দলের বিষয়ে মানুষের অবস্থান অবস্থান বুঝতে পারে জোট গঠনে ব্যস্ত হয়েছে। প্রকৃত ইসলামী দলগুলো বিএনপির সঙ্গে যাবে বলে মনে করেন না তিনি।
জাতীয় নাগরিক পার্টির সিনিয়র যুগ্ম-আহবায়ক আরিফুল ইসলামী বলেন, ‘পিআর ও জুলাই সনদ নিয়ে বিএনপি ছাড়া বেশিরভাগ দল আসলেই একমত। এসব ইস্যুতে বিএনপির বাইরে থাকা দলগুলো এককাতারে থাকায় আমরা জোট করছি অনেকে মনে করলেও সেটি চূড়ান্ত না। নির্বাচনী জোট না ভেবে আমরা নতুন সংবিধানের জন্যে গণপরিষদ নির্বাচন চায়।’
ছোট দলগুলো সার্বিক বিষয়ে পর্যালোচনা করে কিছুদিনের মধ্যেই কোনদিকে থাকবেন তা অনেকে স্পষ্ট করার কথা ভাবছেন। আবার অনেকে এখনই অবস্থান পরিস্কার না করে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রাখতে চান।