দেশে দারিদ্র্যের হার ৯ দশমিক ২৩ শতাংশ বেড়ে ২৭ দশমিক ৯৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) সাম্প্রতিক পরিসংখ্যানে এ তথ্য জানিয়েছে।
বিবিসি বাংলার প্রতিবেদনে বলা হয়, এর আগে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ২০২২ সালের জরিপ অনুযায়ী, দেশে দারিদ্র্যের হার ছিল ১৮ দশমিক সাত শতাংশ। অর্থাৎ গত তিন বছরে দেশে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সংখ্যা প্রায় ১০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
সম্প্রতি দেশের আট হাজার ৬৭টি পরিবারের ৩৩ হাজার ২০৭ জনের মতামতের ভিত্তিতে ‘ইকোনমিক ডায়নামিকস অ্যান্ড মুড অ্যাট হাউস হোল্ড লেভেল ইন মিড ২০২৫’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে পিপিআরসি। এতে বলা হয়, নিত্যপণ্যের দাম ক্রমাগত বৃদ্ধি পেলেও নিম্ন আয়ের মানুষদের আয় বাড়েনি।
এছাড়া দারিদ্র্য সীমার বাইরে থাকা অন্তত ১৮ শতাংশ মানুষ এমন পর্যায়ে আছে, যারা হঠাৎ কোনো দুর্যোগে দারিদ্র্য সীমার নিচে চলে যেতে পারে।
এ দাবির পক্ষে ‘করোনা মহামারির’ সময়ে বেকারত্ব বৃদ্ধি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়াসহ স্থবির জনজীবনের উদাহরণ দিয়েছে পিপিআরসি।

তাদের গবেষণায় দেখা গেছে, শহরের মানুষের আয় দিন দিন কমেছে। বিপরীতে খরচ বেড়েছে বহুগুণ। আর নিম্নআয়ের মানুষেরা চাহিদা মেটাতে ঋণের বোঝা বাড়াচ্ছেন।
গবেষণা বলছে, বর্তমান বাজারে একটি পরিবারের মোট খরচের প্রায় ৫৫ শতাংশই যাচ্ছে খাবারের পেছনে। সেইসঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে শিক্ষা ও চিকিৎসা ব্যয়।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, জুলাই অভ্যুত্থানের পর ঘুষ কিছুটা কমলেও পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। বরং গত একবছরে সরকারি অফিসে সবচেয়ে বেশি ঘুষ দিতে হয়েছে।
এছাড়া সামাজিক সুরক্ষা খাতের নানা অনিয়ম, দীর্ঘস্থায়ী রোগের শঙ্কা, খাদ্য নিরাপত্তায় ধারাবাহিক ঝুঁকি এবং আয় বৈষম্যের বিষয়ও উঠে এসেছে গবেষণায়।
গবেষণায় অংশগ্রহণকারীরা আশাহত হয়ে জানান, বাজারে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতিতে আয়-ব্যয়ের হিসেব মেলাতেই তারা হিমশিম খাচ্ছেন। শাক-সবজি, ফল-মূল, মাছ-মাংস থেকে শুরু করে চড়া ডিমের বাজার। বেড়েছে চাল, ডাল, তেলসহ নিত্যপণ্যের দামও।

বিবিসি বলছে, গত এপ্রিলে বাংলাদেশের অর্থনীতি, দারিদ্র্য ও বৈষম্য নিয়ে বিশ্বব্যাংকও একই ধরনের বার্তা দিয়েছিল। সেখানে দারিদ্র্যের হার বৃদ্ধি ও সার্বিকভাবে অর্থনীতির স্থিতিশীলতা নিয়ে শঙ্কা জানায় বিশ্বব্যাংকও।
‘বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বিশ্বব্যাংক দাবি করে, ২০২৫ সালে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা আসার কোনো সম্ভবনা নেই। বরং এ বছর বাংলাদেশে আরও ৩০ লাখ মানুষ অতি দারিদ্র্যের মধ্যে পড়বে।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, বাংলাদেশের দারিদ্র্যের হার বেড়ে ২২ দশমিক নয় শতাংশে পৌঁছাতে পারে।
অর্থনীতিবিদ ও গবেষকরা বলছেন, করোনা মহামারির পর দেশের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছিল আগের সরকার। এর সঙ্গে বৈশ্বিক যুদ্ধ পরিস্থিতি এবং দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতা যুক্ত হয়ে সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক দুর্বলতা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
দারিদ্র্যের হার বৃদ্ধির পেছনে উচ্চ খাদ্য মূল্যস্ফীতি, কর্মসংস্থানের কাঠামোগত পরিবর্তন না হওয়া ও সামাজিক সুরক্ষায় সরকারি সহায়তার অভাব-অব্যবস্থাপনাকে দায়ী করছেন অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন।
অর্থনীতিবিদ ড. সেলিম রায়হান বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘দারিদ্য বিমোচনে আমাদের যে অগ্রগতি হয়েছিল, তা মুছে গিয়ে নতুন করে বড় ধরনের দরিদ্র জনগোষ্ঠী তৈরি হয়েছে।’
তবে, অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছরে মূল্যস্ফীতি পুরোপুরি না কমলেও অতীত বিবেচনায় কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আনা গেছে বলে মনে করেন তিনি।
‘গত এক বছরে মূল্যস্ফীতি ১২-১৪ শতাংশ থেকে কমে এখন ৮-৯ শতাংশের আশেপাশে রয়েছে। তারপরও মূল্যস্ফীতি এখনো অনেক বেশি’, বলেন সেলিম রায়হান।