বাংলাদেশ নারী হ্যান্ডবলে আবারও শ্রেষ্ঠত্বের আসন দখল করল বাংলাদেশ আনসার। সোমবার শহীদ (ক্যাপ্টেন) এম. মনসুর আলী জাতীয় হ্যান্ডবল স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ৩৬তম জাতীয় নারী হ্যান্ডবলের ফাইনালে তারা ৩৫-২৯ গোলে হারিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশকে। প্রথমার্ধে ১৭-১২ গোলে এগিয়ে থেকেই আনসার ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখে এবং শেষ পর্যন্ত জয় নিশ্চিত করে।
১৯৮৩ সালে জাতীয় নারী হ্যান্ডবল চ্যাম্পিয়নশিপ শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত সর্বাধিক শিরোপা জেতা দল বাংলাদেশ আনসার। এবারের শিরোপাসহ তারা মোট ২৪ বার জাতীয় নারী হ্যান্ডবলে চ্যাম্পিয়ন হলো। দেশের নারী হ্যান্ডবলে ধারাবাহিকভাবে আধিপত্য ধরে রাখার এটিই সবচেয়ে বড় প্রমাণ।
ফাইনালের শুরুটা ছিল প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ। পুলিশ একাধিকবার আক্রমণে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেও অভিজ্ঞতায় এগিয়ে থাকা আনসার ধীরে ধীরে ব্যবধান বাড়াতে শুরু করে। ম্যাচের শেষ দিকে পুলিশের খেলোয়াড়দের ক্লান্তি চোখে পড়ার মতো ছিল, আর সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে আনসার সহজেই জয় নিশ্চিত করে। যদিও ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সে উজ্জ্বল ছিলেন পুলিশের রুবিনা ইসলাম। তাকে ফাইনালের সেরা খেলোয়াড় হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
ফাইনালের আগে তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচে পঞ্চগড় জেলা ৩৪-২২ গোলে হারিয়েছে ঢাকা জেলাকে। ফলে এবারের আসরে তৃতীয় স্থান নিশ্চিত করেছে পঞ্চগড়।
খেলা শেষে চ্যাম্পিয়ন, রানার্সআপ এবং তৃতীয় স্থান অর্জনকারী দলের হাতে পুরস্কার তুলে দেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ হ্যান্ডবল ফেডারেশনের সহ-সভাপতি ও জাতীয় প্রতিযোগিতা আয়োজন ও উন্নয়ন ব্যবস্থাপনা কমিটির আহ্বায়ক ড. আবু নছর মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ, সাধারণ সম্পাদক মো. সালাউদ্দিন আহম্মেদ, যুগ্ম সম্পাদক রাশিদা আফজালুন নেসা, সদস্য মো. মকবুল হোসেনসহ ফেডারেশনের কর্মকর্তারা। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন স্পনসর প্রতিষ্ঠান স্কয়ার ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেডের মার্কেটিং ম্যানেজার মো. শাহরিয়ার আলম।
প্রথমবারের মতো এবারের জাতীয় নারী হ্যান্ডবল চ্যাম্পিয়নশিপে অর্থ পুরস্কার দেওয়া হয়। চ্যাম্পিয়ন আনসার দল পেয়েছে ২৫ হাজার টাকা, রানার্সআপ পুলিশ পেয়েছে ১৫ হাজার এবং তৃতীয় স্থান অধিকারী পঞ্চগড় পেয়েছে ১০ হাজার টাকা।
পুরস্কার বিতরণী মঞ্চে বক্তব্য রাখতে গিয়ে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘আজ যারা বিজয়ী হয়েছেন তাদের অভিনন্দন। তবে শুধু বিজয়ীরাই নন, যারা খেলায় অংশ নিয়েছেন তারাও সমাজে নারীর অবস্থানকে আরও দৃঢ় করছেন। মাঠে নেমে খেলা মানেই সামাজিকভাবে ইতিবাচক বার্তা দেওয়া।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা দায়িত্ব নেওয়ার পর দুটি জায়গায় নারী ফুটবল খেলা বন্ধ করা হয়েছিল। পরে সিদ্ধান্ত নিয়ে আমরা সেসব জায়গায় মেয়েদের খেলার সুযোগ করে দিই। এতে গ্রামের নারীরাও খেলাধুলায় যুক্ত হওয়ার সুযোগ পান।’
ঢাকা শহরে খেলার মাঠ সংকট নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। ‘এ শহরে এক কোটি ষাট লাখ মানুষের জন্য মাত্র উনিশটা মাঠ আছে। এর মধ্যেও অনেকগুলো বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের দখলে চলে গেছে। এলাকাবাসীর প্রবেশ বন্ধ হয়ে গেছে। এর আগে আমি এসবের প্রতিবাদ করেছি, এখনও একই অবস্থানেই আছি,’ বলেন পরিবেশ উপদেষ্টা।
তিনি তরুণ প্রজন্মের জীবনযাত্রার পরিবর্তন নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন ‘আমাদের ছেলে মেয়েরা এখন বড় হচ্ছে মোবাইল আর গ্যাজেটের মধ্যে। আগে মাঠে খেলতে নামলে আশপাশের মানুষ আসত, বন্ধুত্ব গড়ে উঠত। এখন সামাজিক বন্ধনও সীমাবদ্ধ হয়ে যাচ্ছে আর্থসামাজিক পরিমণ্ডলের ভেতরেই, এতে দায়িত্বশীলতা গড়ে উঠছে না।’
জাতীয় নারী হ্যান্ডবলের এবারের আসরের পৃষ্ঠপোষক ছিল স্কয়ার ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেড। দীর্ঘদিন ধরে নারী হ্যান্ডবল এগিয়ে চলেছে মূলত সরকারি ও বেসরকারি সহায়তায়। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, নিয়মিত টুর্নামেন্ট আয়োজন আর সঠিক পরিকল্পনা থাকলে বাংলাদেশের নারী হ্যান্ডবল আরও শক্ত অবস্থানে পৌঁছাতে পারবে।