দুটি পুকুরের আয়তন প্রায় ১২ বিঘা। পুকুরের চারপাশে জন্মানো গাছের প্রতিটি ডালে বাসা বেঁধেছে এশিয় শামুকখোল, পানকৌড়ি ও সাদা সারস পাখি। প্রায় ১০ হাজার পাখির এই আবাস এসব গাছে। যাদের কলতানে মুখর হয়ে থাকে গোটা এলাকা।
এ দৃশ্যের দেখা মিলবে ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার নিত্যানন্দপুর ইউনিয়নের আশুরহাট গ্রামে। গ্রামের বিশ্বাস পাড়ার গোপাল চন্দ্র বিশ্বাস ও রাজ্জাক মিয়ার দুটি পুকুরকে ঘিরে পাখিদের এই রাজত্ব। এই জায়গাটিতেই প্রায় ১০ বছর ধরে অতিথি পাখিরা বসবাস করে।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শীতকালে এখানে আসে অতিথি পাখি। এরা সবাই দলবদ্ধভাবে বসবাস করে। তবে এবারই প্রথম একসাথে এত শামুকখোল পাখি এসেছে। এশিয় শামুকখোল, পানকৌড়ি ও সাদা সারস পাখি, সবই দেখা মিলছে এখন।
এশিয় শামুক খোল পাখি মূলত বর্ষাকালে পর্যাপ্ত খাবারের মজুদ আছে এমন এলাকায় প্রজনন করে। এরা তিন থেকে চারটি ডিম পাড়ে। পানকৌড়ি ডিম পাড়ে ছয় থেকে আটটি। সারস পাখি আরও বেশি ডিম পাড়ে।
খুলনার বন্যপ্রাণী ব্যবস্থা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ এই এলাকাটিকে সংরক্ষিত ঘোষণা করেছে। উপজেলা প্রশাসন থেকে নিয়মিত গ্রাম পুলিশের মাধ্যমে পাহারা দেওয়া হয়। ২০১৭ সাল থেকে এখানে পাখি সংরক্ষণ সমিতি গঠন করা হয়েছে। গ্রামে নিষিদ্ধ রয়েছে শিকারিদের প্রবেশ। তবে দর্শনার্থীরা প্রতিদিনই পাখি দেখতে আসে এখানে।
পুকুরপাড়ের বাসিন্দা পল্টন বিশ্বাস বলেন, ‘গত ১০-১২ বছর ধরে এখানে পাখি আসে। বাসা তৈরি করে বসতি গড়ে ও বাচ্চা ফোটায়। বাচ্চা বড় হলে চলে যায়। এখানে কেউ পাখি মারে না। বাসা থেকে বাচ্চা পড়ে গেলে আমরা বাসায় উঠিয়ে দিই। প্রতিদিনই অনেক মানুষ পাখি দেখতে আসেন। তবে শুক্রবারে মানুষের আনাগোনা বেশি হয়।’
‘এখানে আসা দর্শনার্থীদের জন্য ঝিনাইদহ জেলা পরিষদ থেকে তৈরি করা হয়েছে ছাউনি। সেখানে পানি পানের জন্য স্থাপন করা হয়েছে টিউবওয়েল’-বলেও জানান তিনি।
আরেক বাসিন্দা রুপিয়া খাতুন বলেন, ‘এখানে দুই-তিন মাস আগে সরকার থেকে এই ঘর বানিয়েছে। অনেকেই এখানে পাখি দেখতে আসে। পাখি দেখে তারা খুব আনন্দ পায়।’
বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ খুলনার বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা তন্ময় আচার্য্য বলেন, ‘আমরা এটাকে পাখি কলোনী বানানোর জন্য ভূমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব দিয়েছি। ওখানে আব্দুর রাজ্জাক নিজ উদ্যোগেই ভূমি অধিগ্রহণে সম্মত আছেন। কিন্তু আরেক পুকুরের মালিক গোপাল চন্দ্র বিশ্বাসের আপত্তি থাকায় হচ্ছে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা তাদের প্রস্তাব দিয়েছিলাম এই জমির বদলে অন্য জায়গায় সরকারি জমি নিতে। তারা পরিবারের সাথে আলোচনা করে জানাবেন বলেছিলেন। কিন্তু পরে আর কিছুই জানাননি। এর আগে আমরা কয়েক বছর আগে এখানে অস্থায়ী আনসার ক্যাম্প বসিয়েছিলাম। কিন্তু এখন সেটা নেই। আমরা আবার স্থানীয় প্রশাসনের সাথে কথা বলে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করব।’
পাখি সংরক্ষণ সমিতির সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘এই সমিতির সদস্য ২৫ জন। আমার ছেলেরাও পাহারা দেয়। তবে রাতে কিছু শিকারি আসেন। কারণ আগের মতো প্রশাসনিক তৎপরতা নেই। আমরা ইউএনও’র সাথে কথা বলবো। আমরা সরকারকে বহুবার লিখিতভাবে এই জমি ভূমি অধিগ্রহণ করে অভয়ারণ্য ঘোষণা করার দাবি জানিয়েছি।’
শৈলকুপা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা স্নিগ্ধা দাস জানান, সেখানে প্রতিদিন গ্রাম পুলিশ টহল দেয়। কেউ পাখি শিকারের চেষ্টা করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।