গাজার দোরগোড়ায় ‘নতুন যুদ্ধ’, শত শত মানুষের প্রতিবাদ

3 Min Read
গাজায় নতুন করে ইসরায়েলের অভিযানের প্রতিবাদে শত শত ফিলিস্তিনি নারী-পুরুষ বিক্ষোভ করেন। ছবি: টিভি থেকে নেওয়া

উত্তর গাজার ঘনবসতিপূর্ণ শহরে ফের যুদ্ধের পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে। সামরিক অভিযানের আশঙ্কায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে স্থানীয় বাসিন্দা ও উদ্বাস্তুদের মধ্যে।

বৃহস্পতিবার শহরের ধ্বংসস্তূপের মধ্যে দাঁড়িয়ে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেন কয়েক ডজন ফিলিস্তিনি। ঘরবাড়ি ছাড়তে রাজি নন কেউ।  অনেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের হস্তক্ষেপ কামনা করেন বলে জানিয়েছে সিএনএন।

নারী-পুরুষ ও শিশুরা ফিলিস্তিনি পতাকা হাতে ‘গণহত্যা বন্ধ করো’, ‘গাজা মরছে’- এমন প্ল্যাকার্ড নিয়ে স্লোগান দেন। এক প্রতিবাদকারী বলেন, ‘এটাই আমাদের শেষ আহ্বান- যুদ্ধ নয়, শান্তি চাই।’

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু জানিয়েছেন, গাজা শহর দখলের সামরিক পরিকল্পনা অনুমোদনের পথে রয়েছেন তিনি। আগের দিনই তিনি অভিযান পরিকল্পনার সময়সীমা কমিয়ে আনেন।

নেতানিয়াহু বলেন, ‘আমরা এখন সিদ্ধান্তের দোরগোড়ায়। গাজা শহর দখল ও হামাসকে পরাজিত করতে প্রস্তুত ইসরায়েলি বাহিনী।’

তিনি জানান, গাজায় আটক থাকা ইসরায়েলিদের মুক্তির জন্য তাৎক্ষণিক আলোচনার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।

গাজা শহরকে হামাসের শেষ ঘাঁটি হিসেবে বিবেচনা করছেন নেতানিয়াহু। অভিযান পরিচালনায় অতিরিক্ত ৬০ হাজার রিজার্ভ সেনা মোতায়েন এবং ২০ হাজার সেনার মেয়াদ বাড়ানোর প্রয়োজন পড়বে।

ইসরায়েলের এই পরিকল্পনায় উদ্বিগ্ন আন্তর্জাতিক মহল। আশঙ্কা করা হচ্ছে, এতে গাজায় চলমান খাদ্য ও চিকিৎসা সংকট আরও প্রকট হবে এবং বন্দিদের জীবন ঝুঁকির মুখে পড়বে।

মেডিকেল এইডস ফর প্যালেস্টাইন জানিয়েছে, ইসরায়েল প্রায় ৮ লাখ ফিলিস্তিনিকে দক্ষিণ গাজায় জোরপূর্বক সরিয়ে নিতে পারে। এতে গাজার স্বাস্থ্যব্যবস্থা প্রায় সম্পূর্ণ ভেঙে পড়তে পারে।

গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলা, ফাইল ছবি। ছবি: এপি/ইউএনবি

‘গাজা ছেড়ে গেলে ফিরতে পারব না’
বারবার বাস্তুচ্যুত হওয়া গাজা শহরের বাসিন্দা মোহাম্মদ হামাদ বলেন, ‘গাজা ছেড়ে গেলে আর ফেরা হবে না। এটা আমাদের অস্তিত্ব হারানোর শামিল।’

আল-শাতি শরণার্থী শিবিরের বাসিন্দা জাকারিয়া বাকরের আশঙ্কা, ‘এই বাস্তুচ্যুতি হবে বোমার ছায়ায়। বাড়িঘরের ওপর হামলা চালিয়ে মানুষকে ভয় দেখানো হবে, খাদ্য ও সাহায্য আটকানো হবে।’

তিনি বলেন, ‘গাজা ছাড়ার আগেই হয়তো মৃত্যু হবে আমার।’

ইসরায়েলি এক সূত্র জানিয়েছে, শহর ছেড়ে যেতে ফিলিস্তিনিদের দুই মাস সময় দেওয়া হবে, যার সময়সীমা ৭ অক্টোবর- যুদ্ধের দুই বছর পূর্তি।

‘নতুন যুদ্ধের শুরু’
গাজার আল-জাইতুন এলাকার আইনজীবী আহমেদ আল-আজলা বলেন, ‘আশ্রয়শিবিরগুলোতে জায়গা নেই- তাবুগুলো একটার ওপর আরেকটা ‘

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা উত্তর গাজার হাসপাতাল ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে সরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে বলেছে এবং তাবু সরবরাহের আশ্বাস দিয়েছে।

স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, শহরে বোমাবর্ষণের তীব্রতা সাম্প্রতিক সময়ে আরও বেড়েছে।

শেখ রাদওয়ান এলাকার বাসিন্দা ইসমাইল জায়দা বলেন, ‘এটা যেন নতুন এক যুদ্ধের শুরু।’

আশ্রয়শিবিরে হামলা, নিঃস্ব মানুষজন
বৃহস্পতিবার, মধ্য গাজার দেইর আল-বালাহর একটি শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলি হামলায় ব্যাপক ধ্বংস হয়। শহর থেকে পালিয়ে আসা বহু মানুষ সেখানেই আশ্রয় নিয়েছিলেন।

শিবিরবাসীরা জানান, সেনারা ফোনে আগেই সরতে বলেছিল, কিন্তু কেউ ভাবেননি পুরো শিবিরই গুঁড়িয়ে দেওয়া হবে।

সিএনএনের ভিডিওতে দেখা যায়, বিস্ফোরণের ধোঁয়া, আতঙ্কে ছুটোছুটি, পুড়ে ছাই হওয়া তাবু ও ধ্বংসস্তূপে ছড়িয়ে থাকা মানুষজনের জিনিসপত্র।

শিবিরের বাসিন্দা ওয়ালিদ আবু মুয়াসেদ বলেন, ‘এখানে আর কিছু নেই। একটি তাবুও অবশিষ্ট নেই।’

জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস আবারও যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘গাজা শহরে সামরিক অভিযান চালানো হলে, তা ভয়াবহ প্রাণহানি ও ধ্বংস ডেকে আনবে। এটি অবশ্যই প্রতিরোধ করা উচিত।’

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *