বিশ্বকাপ খেলার স্বপ্নে ভারত যাচ্ছে বাংলাদেশ: রিয়াজুল হাসান

টাইমস স্পোর্টস
5 Min Read
বাংলাদেশ হকি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক লেফটেন্যান্ট কর্নেল রিয়াজুল হাসান (অব.)। ছবি: টাইমস

বাংলাদেশ জাতীয় হকি দলের জন্য এশিয়া কাপ ২০২৫ একটি বিশেষ মঞ্চ হয়ে উঠেছে। মাস খানেক আগে এশিয়া কাপে রিজার্ভ দল হিসেবে আমন্ত্রণ পাওয়া বাংলাদেশকে পরে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয় যে, বিশ্বকাপ বাছাইয়ের এই টুর্নামেন্টে তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত হয়েছে। ঠিক তখন থেকেই শুরু হয় প্রস্তুতি ও দল গঠনের প্রক্রিয়া। ঘোষিত হয়েছে ১৯ সদস্যের তালিকা। জাতীয় দলের ক্যাম্প, প্রস্তুতি, নির্বাচনী প্রক্রিয়া ও নানা বিতর্ক পেরিয়ে অবশেষে গড়া হলো চূড়ান্ত দল।

আগামী ২৬ আগস্ট সকালে ঢাকা থেকে কলকাতা যাবে দল, সেখান থেকে বাসে করে পৌঁছাবে রাজবিরে। ইতোমধ্যে ভিসার জন্য আবেদন করা হয়েছে এবং রবিবার বা সোমবারের মধ্যেই ভিসা হাতে পাওয়ার আশা করা হচ্ছে।

প্রথমে ২৪ জনকে নিয়ে অনুশীলন শুরু হলেও কোচ মশিউর রহমান বিপ্লব ও নির্বাচনী কমিটি আলোচনার পর শেষ পর্যন্ত ঘোষণা করেছেন ১৯ সদস্যের চূড়ান্ত দল। চারজন বাদ পড়া খেলোয়াড়কে নিয়ে প্রশ্ন উঠলে সাধারণ সম্পাদক লেফটেন্যান্ট কর্নেল রিয়াজুল হাসান (অব.) ‘তাদের আমি বাদ দিয়েছি বলব না, বরং বলব তারা এবারে দলে জায়গা পায়নি। ভবিষ্যতে সুযোগ রয়েছে। গত ক্যাম্পেও তারা ছিল, তবে প্রত্যাশা অনুযায়ী পারফরম্যান্স পাইনি। জাতীয় দলে জায়গা পেতে হলে শারীরিকভাবে সেরা থাকতে হবে।’

অভ্যন্তরীণ কিছু বিতর্ক নিয়েও মুখ খুলেছেন বাদ যাওয়া খেলোয়াড়েরা। মিমোসহ কয়েকজনের সঙ্গে বোর্ডের কথাকাটাকাটির প্রসঙ্গ তুলে বলেন, ‘পরিবারে যেমন ছোটখাটো সমস্যা হয়, আমরাও তাই মোকাবিলা করেছি। কখনো কখনো কথা একটু গরম হয়, তবে সবকিছুই সমাধান হয়ে গেছে।’ যদিও অন্যান্য দলের তুলনায় বাংলাদেশের প্রস্তুতি কম তবে সরাসরি বিশ্বকাপে খেলতে ৫ম অবস্থানের ভেতর থাকলে এশিয়া কাপ খেলতে পারবে বাংলাদেশ। ৬ষ্ঠ দল পাকিস্তানের সঙ্গে বেস্ট অফ থ্রি খেলবে এবং সেই ফলাফলের ওপর নির্ভর করবে ৬ষ্ঠ দলের বিশ্বকাপ খেলার স্বপ্ন পূরণ হবে কি না। এ বিষয়ে তিনি বলেন ‘আমরা ৬ষ্ঠ অবস্থান নয় বরং ৫ম থেকেই বিশ্বকাপে জায়গা করতে চাই। আপাতত গ্রুপে একটি ম্যাচ জিতলে ও একটি ড্র করলেই আমরা আশা করি কাঙ্খিত ফল পাব।’ প্রস্তুতি অল্পসময়ের হলেও সাধারণ সম্পাদক আশা করেন এর মাঝে আমরা সেরা ফল আনার সক্ষমতা রাখি।

দলের অধিনায়ক করা হয়েছে রেজাউল করিম বাবুকে, সহ–অধিনায়ক হয়েছেন মোঃ আশরাফুল ইসলাম। দায়িত্ব পাওয়ার পর বাবু বলেন, ‘ফেডারেশনকে ধন্যবাদ আমাকে বিশ্বাস করার জন্য। আমি চেষ্টা করব আমার অভিজ্ঞতা ও পারফরম্যান্স দিয়ে এই আস্থা শোধ করতে।’ নতুন প্রজন্মকে নিয়ে তার প্রত্যাশার কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘এই দলে অনূর্ধ্ব–২১ থেকে আটজন এসেছে। তারা আগেই ক্যাম্পে ছিল, তাই শারীরিকভাবে আমাদের চেয়ে এগিয়ে। আমরা অভিজ্ঞরা যদি ওদের সঠিকভাবে গাইড করতে পারি তাহলে ভালো কিছু করা সম্ভব।’ এশিয়া কাপের সম্ভাবনা নিয়ে তার ভাষ্য, ‘শেষ মুহূর্তে জেনেছি আমরা খেলতে যাচ্ছি। সেই অনুযায়ী সীমিত সময়ে যা পারা গেছে করেছি। বাস্তবতার কথা ভেবেই বলছি, আমাদের ভালো করার সুযোগ আছে। চাপ অনুভব করছি না, কারণ এটা আমাদের জন্য উপহারস্বরূপ সুযোগ। হারানোর কিছু নেই, পাওয়ার আছে অনেক কিছু।’

ম্যানেজার কাওসার আলী খোলাখুলি জানালেন কেমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে যাচ্ছে দল। তিনি বলেন, ‘আমরা আনন্দিত যে আমরা এই টুর্নামেন্ট খেলতে যাচ্ছে। তবে মূলত  আমরা যাচ্ছি যুদ্ধের ময়দানে। অন্য দলগুলো পুরো বছর ধরে প্রস্তুতি নিয়েছে, আমাদের সময় ছিল সীমিত। তাই বাস্তবতা হলো আমরা অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই করছি।’ পাকিস্তান শেষ পর্যন্ত অংশ নিচ্ছে না, সেটাকে ইতিবাচক দিক হিসেবে দেখলেও কাওসার মনে করেন, কঠিন প্রতিপক্ষদের সামনে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশকে দারুণ লড়াই করতে হবে। খাবার সংক্রান্ত বিষয়ে আগের অভিজ্ঞতা মনে করিয়ে দিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের হোটেল অ্যালোকেটেড আছে। আমরা হালাল খাবারের ব্যাপারে আগেই জানিয়েছি। আমি বহুবার ভারতে গেছি, তাই বলতেই পারি এবার তেমন কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়।’ বাদ পড়া চারজন খেলোয়াড় একসময় তার ছাত্র ছিলেন। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘যখন তারা আমার ছাত্র ছিল তখন আলাদা করে কে সেরা বা কে নয় তা বলা যেত। এখন সিদ্ধান্ত নিতে হয় কে শারীরিকভাবে ফিট, কাকে নিয়ে ভবিষ্যতে বিনিয়োগ করা যাবে। এই বিচারে নির্বাচন করা হয়েছে।’

চূড়ান্ত স্কোয়াডে আছেন গোলকিপার বিপ্লব কুজুর ও নুরুজ্জামান নয়ন, ডিফেন্সে মোঃ আশরাফুল ইসলাম, অধিনায়ক রেজাউল করিম বাবু, ফরহাদ আহমেদ সিটুল, সোহানুর রহমান সবুজ, হোজাইফা হোসেন, আমিরুল ইসলাম ও মোঃ মেহেদী হাসান। মিডফিল্ডে রয়েছেন মোঃ রোমান সরকার, মোঃ ফজলে হোসেন রাব্বি, আল নাহিয়ান শুভ, তৈয়ব আলী ও তানভির রহমান সিয়াম। ফরওয়ার্ড লাইনে আছেন ওবায়দুল হোসেন জয়, মোঃ রাকিবুল হাসান, মোঃ আরশাদ হোসেন ও মোঃ আব্দুল্লাহ। স্ট্যান্ডবাই হিসেবে রাখা হয়েছে মোঃ শাহিদুর রহমান সাজুকে।

সবশেষে কোচ মশিউর রহমান বিপ্লব দলের সম্ভাবনা নিয়ে বলেন, ‘আমরা চাইনিজ তাইপে ও কাজাখস্তানের চেয়ে এগিয়ে থেকে অন্তত গ্রুপে তৃতীয় হতে চাই। মূল লক্ষ্য ৫ম অবস্থান নিশ্চিত করা।’

এশিয়া কাপকে ঘিরে বাংলাদেশের প্রস্তুতি অনেক সীমিত হলেও কোচ, ম্যানেজার ও অধিনায়কের কথায় বারবার ভেসে এসেছে একই সুর, মাঠে নিজেদের সেরাটা দিতে চায় দল। প্রতিপক্ষ যতই শক্তিশালী হোক, নিজেদের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা নিয়েই আন্তর্জাতিক মঞ্চে লড়াই করতে নামছে লাল–সবুজের প্রতিনিধিরা।

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *