৫ শতাংশ আসনে নারী প্রার্থী মনোনয়নের প্রস্তাব বিএনপির

টাইমস রিপোর্ট
4 Min Read
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বিতীয় ধাপের ১৯তম দিনের আলোচনার বিরতিতে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। ছবি: সংগৃহীত
Highlights
  • কিছুসংখ্যক আসনে নারীরা যাতে সরাসরি নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আসতে পারেন, সে সুযোগ রাখা দরকার বলে মনে করেন বিএনপির এই নেতা।

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারীদের জন্য সংরক্ষিত ৫০ আসনের বাইরে প্রতিটি রাজনৈতিক দলকে ৩০০ দলীয় আসনের মধ্যে ৫ শতাংশ আসনে নারী প্রার্থী মনোনয়নের প্রস্তাব দিয়েছে বিএনপি। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘এসব আসনে নারীরা সরাসরি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।’

রোববার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বিতীয় ধাপের ১৯তম দিনের আলোচনার বিরতিতে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান তিনি।

কিছুসংখ্যক আসনে নারীরা যাতে সরাসরি নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আসতে পারেন, সে সুযোগ রাখা দরকার বলে মনে করেন বিএনপির এই নেতা।

তিনি বলেন, ‘আমরা প্রথমে প্রস্তাব দিয়েছিলাম—বিদ্যমান ৫০টি সংরক্ষিত নারী আসন বাড়িয়ে ৮০-তে উন্নীত করা হোক। তবে বিভিন্ন মহলের সঙ্গে আলোচনায় উঠে এসেছে যে কিছু আসনে সরাসরি নির্বাচন হওয়া উচিত। তাই আমরা প্রস্তাব দিয়েছি—আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে প্রতিটি রাজনৈতিক দল যেন ৩০০ আসনের মধ্যে অন্তত ৫ শতাংশে নারী প্রার্থী মনোনয়ন দেয়।’

বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, ‘যেহেতু আসন্ন নির্বাচনের আগে সংবিধান সংশোধনের সুযোগ নেই, তাই এটা এখনই আইন নয়, বরং একটি জেন্টলম্যানস অ্যাগ্রিমেন্ট হতে পারে। তবে সংবিধান সংশোধনের পর আমরা চাই, ৩০০টি আসনের মধ্যে অন্তত ১০ শতাংশ আসনে নারীরা সরাসরি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক। তাহলে ৩০টি আসনে নারী প্রার্থী মনোনীত হবেন এবং সংরক্ষিত ৫০টি মিলে মোট ৮০টি আসনে নারীর প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত হবে।’

এই প্রক্রিয়া ধাপে ধাপে এগিয়ে নিয়ে একসময় যেন পুরোপুরি সরাসরি নির্বাচনের মাধ্যমে নারীরা সংসদে আসতে পারেন এবং সংরক্ষিত আসনের প্রয়োজন না পড়ে, সেই লক্ষ্যেই পরিকল্পনা করা হচ্ছে বলে জানান সালাহউদ্দিন আহমদ।

পুলিশ কমিশনের বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে বলে জানান সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, বাংলাদেশ পুলিশ কমিশন নামে এটি কমিশন গঠিত হবে। শৃঙ্খলা বাহিনী হিসেবে পুলিশ যাতে আইনানুগভাবে দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে সক্ষম হয়, তা নিশ্চিত করাই এর উদ্দেশ্য।

রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি বিষয়ে সালাহউদ্দিন বলেন, ‘সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৮-এ বর্তমানে পঞ্চদশ সংশোধনীর ভিত্তিতে যে মূলনীতি রয়েছে, তার সঙ্গে বিএনপি একমত নয়। বিএনপির অবস্থান হলো পঞ্চম সংশোধনীর সময় যে মূলনীতি (মহান আল্লাহর প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস, গণতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ) ছিল, সেটিই রাখা উচিত।’

তবে বর্তমান সংলাপে সংযোজনের প্রস্তাব হিসেবে ‘সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার, গণতন্ত্র এবং ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সম্প্রীতি’—এই বাক্যাংশ যুক্ত করার প্রস্তাব উঠেছে এবং এ বিষয়ে বিএনপির কোনো আপত্তি নেই। তবে সংশোধনী হবে কি না, কীভাবে হবে—তা সংসদেই নির্ধারিত হবে।

তিনি বলেন,‘আমরা আগেই প্রস্তাব দিয়েছিলাম এক ব্যক্তি সর্বোচ্চ ১০ বছর প্রধানমন্ত্রী থাকবেন।  কমিশনও বলেছে, একজন ব্যক্তি যতবারই নির্বাচিত হোক, তার মেয়াদ ১০ বছরের বেশি হতে পারবে না। এতে দেশে ফ্যাসিবাদ বা ব্যক্তিকেন্দ্রিক শাসনব্যবস্থা গড়ে ওঠার সুযোগ থাকবে না।’

নির্বাচন কমিশন গঠনেও অগ্রগতি হয়েছে জানিয়ে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘বিরোধী দল, সরকারি দল এবং বিচার বিভাগের একজন সদস্য নিয়ে গঠিত একটি সাংবিধানিক কমিটি নির্বাচন কমিশন গঠন করবে। নাম বাছাইয়ের জন্য আলাদা সার্চ কমিটি থাকবে, যেখানে জনগণ, রাজনৈতিক দল, পেশাজীবীরা প্রস্তাব দিতে পারবেন। তবে কমিশন গঠনের চূড়ান্ত ক্ষমতা ওই সাংবিধানিক কমিটিরই থাকবে।’

রোববারের আলোচনায় অংশ নিয়েছে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলন, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), গণসংহতি আন্দোলনসহ ৩০টি রাজনৈতিক দল।

আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ। প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারের সঞ্চালনায় আরও উপস্থিত আছেন সফর রাজ হোসেন, বিচারপতি এমদাদুল হক, বদিউল আলম মজুমদার, ইফতেখারুজ্জামান ও আইয়ুব মিয়া।

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *