এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের (এসিসি) বার্ষিক সাধারণ সভা নিয়ে জল কম ঘোলা হলো না। গত এক সপ্তাহ ধরে ভারতের গণ মাধ্যমে একের পর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে অনুষ্ঠেয় এসিসির এই বার্ষিক সভা বয়কট করছে বোর্ড অফ ক্রিকেট ফর কন্ট্রোল ইন ইন্ডিয়া (বিসিসিআই)। নেপথ্যে পাকিস্তানের সাথে রাজনৈতিক টানাপোড়েন। এদিকে এসিসির সভাপতি মহসিন নাকভি, যিনি আবার একইসাথে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (পিসিবি) সভাপতি। অন্যদিকে বাংলাদেশের সাথে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক সম্পর্কে শীতলতা নেমে আসায় দুইয়ে দুইয়ে চার মিলেছে ভারতের সভা বয়কটের প্রশ্নে।
আর এখানেই ঝুলে যাচ্ছে আসন্ন এশিয়া কাপের ভাগ্য। কারণ ২৩ ও ২৪ জুলাই বিসিবির আয়োজনে ঢাকার একটি পাঁচ তারকা হোটেলে অনুষ্ঠেয় এসিসির সভা ভারতের সাথে বয়কট করতে পারে শ্রীলংকা-আফগানিস্তানও। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এসিসিভুক্ত এই তিন পূর্ণ সদস্য দেশের কোনো প্রতিনিধিই আসেননি বাংলাদেশ। নিয়মানুযায়ী সভায় কোরাম পূর্ণ করতে এসিসির ২৭ সদস্য দেশের মধ্যে থেকে কমপক্ষে তিনটি পূর্ণ সদস্য দেশের প্রতিনিধি উপস্থিত থাকা আবশ্যক। কেবল বাংলাদেশ ও পাকিস্তানই থাকছে পুর্ণ সদস্য হিসেবে। সেক্ষেত্রে সভায় গৃহীত যেকোনো সিদ্ধান্তের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে।
তাই এশিয়া কাপ নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে। এবারের এশিয়া কাপের আয়োজক ছিল ভারত। আগামী সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে মাঠে গড়ানোর কথা ছিল এই টুর্নামেন্টের। শেষ পর্যন্ত ভারত রাজি হলেও হাইব্রিড মডেলেই পর্দা উঠবে এশিয়ান শ্রেষ্টত্বের এই লড়াইয়ের। পাকিস্তানকে নিজেদের মাঠে ভারত আথিতেয়তা দেবে না, পাকিস্তানও সেখানে খেলতে না যাওয়ার ব্যাপারে অনড়। তাই বিকল্প ভেন্যু হিসেবে সংযুক্ত আরব আমিরাত বা শ্রীলংকার কথাও শোনা যাচ্ছে।
এসিসির বার্ষিক সভা শেষেই জানা যাবে কী আছে এশিয়া কাপের ভাগ্যে। ভারত রাজি না হলে, শেষ পর্যন্ত আলোর মুখ দেখবে না এবারের এই টুর্নামেন্ট, সেটা জলের মতোই পরিস্কার। বিশ্ব ক্রিকেটে ভারতের প্রভাব, ক্রিকেটের বাজার, টিভি স্বত্ব-সহ আরো অনেক নিয়ামকই আছে এর নেপথ্যে। ভারতের একাধিক সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদনের বরাতে জানা গেছে, কোনো কারণে এশিয়া কাপ না হলে বিকল্প ব্যবস্থাও ভেবে রাখছে বিসিসিআই। এশিয়া কাপের সেই সময়টায় ঘরের মাঠে কোনো ত্রিদেশীয় আয়োজনের বিকল্পও আছে তাদের সামনে।
প্রথমবার এসিসির বার্ষিক সাধারণ সভার আয়োজক হয়েছে বিসিবি। এই সভায় বাংলাদেশের ভূমিকা কী, প্রশ্নের জবাবে বিসিবিব সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল বলেন, ‘এসিসির সভার ব্যাপারটি পরিষ্কার করি। এশিয়ার ৫টি পূর্ণ সদস্য ও ২৫টি সহযোগী সদস্য নিয়ে তারা কাজ করে। এসিসির কাছ থেকে আমাদের কাছে প্রস্তাব এসেছিল যে আমরা এই এজিএম আয়োজন করতে চাই কি না। আমরা রাজি হয়েছি। এটি এসিসিরই প্রোগ্রাম। আমরা তাদেরকে লজিস্টিকাল সাপোর্ট করছি। এটাই একমাত্র ব্যাপার, যা আমরা করছি।’
বিসিবি সভাপতি সোজাসাপ্টা জবাবে বলে দিয়েছেন, তারা কেবল আয়োজকই। কিন্তু ভারত-সহ আরো দুই পুর্ণ সদস্য দেশের সভা বয়কট এই প্রশ্নও তুলছে, আঞ্চলিক রাজনীতির মারপ্যাঁচে কি বাংলাদেশ পড়তে যাচ্ছে?