জুলাই ডায়েরি: ‘চিরুনি অভিযান’ শুরু, ৪ দফা দাবিতে আল্টিমেটাম

টাইমস রিপোর্ট
4 Min Read

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষ, হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ২০২৪ সালের ২২ জুলাই (সোমবার) আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ‘চিরুনি অভিযান’ শুরু করে। এদিন সারাদেশে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীসহ ১ হাজার ২০০ জনকে গ্রেফতার করা হয়।

রোববার রাত ১২টা থেকে সোমবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ছয় ঘণ্টায় রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে ৫১৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এ নিয়ে গত ছয় দিনে (১৭ থেকে ২২ জুলাই) সারাদেশে গ্রেফতারের সংখ্যা দুই হাজার ছাড়িয়ে যায়।

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় সারাদেশে সোমবার পর্যন্ত ১৬৪টি মামলা করা হয়। এর মধ্যে ডিএমপিতে ৭১টি, চট্টগ্রাম মহানগরে ১৪টি এবং অন্যান্য জেলায় ৭৯টি মামলা করা হয়। চিরুনি অভিযানে গ্রেফাতার ব্যক্তিদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।

এদিকে র‌্যাবের বিভিন্ন ব্যাটালিয়ন সোমবার সারাদেশে অভিযান চালিয়ে ৪০ জনকে গ্রেফতার করে। আগের দিন রোববার নাশকতায় জড়িত থাকার অভিযোগে সারাদেশে ৩৯ জনকে গ্রেফতার করে র‌্যাব।

২২ জুলাই কোটা সংস্কার সংক্রান্ত জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সারসংক্ষেপে স্বাক্ষর করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এদিন রাত ৯টায় তিনি এই সারসংক্ষেপে স্বাক্ষর করেন। এর আগে দুপুরে শেখ হাসিনা কিছু ব্যবসায়ীর সাথে গণভবনে বৈঠক করেন। বৈঠকে তিনি বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা ও সহিংসতার জন্য বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবিরকে দায়ী করেন এবং তাদের বিরুদ্ধে ‘আরও শক্ত অ্যাকশন’ নেওয়ার কথা জানান।

এদিকে ২২ জুলাই পঞ্চম দিনের মতো পুরো দেশকে ইন্টারনেটবিহীন রাখে সরকার। এক নির্বাহী আদেশে সাধারণ ছুটি আরও একদিন (২৩ জুলাই) বাড়ানো হয়।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম চার দফা দাবিতে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়ে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি স্থগিত করেন।

কোটা সংস্কার আন্দোলন ব্যাপক সহিংসতায় রূপ নিলে শুক্রবার (১৯ জুলাই) মধ্যরাত থেকে কারফিউ জারি করা হয়। সোমবার কারফিউর তৃতীয় দিন ছিল। এদিন দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত কারফিউ শিথিল রাখা হয়।

এদিন রাজধানীর সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি মোটামুটি শান্ত ছিল। তবে মহাখালীতে কয়েকশ আন্দোলনকারী কিছু সময়ের জন্য সড়ক অবরোধ করে রাখেন। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাদের সরিয়ে দেন।

রাজধানীর অন্যান্য এলাকায় আন্দোলনকারীদের তেমন তৎপরতা না থাকলেও পথে পথে সেনাবাহিনী, পুলিশ ও র‌্যাবের ব্যাপক অবস্থান দেখা যায়। গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে সেনাবাহিনীর সাঁজোয়া যান মোতায়েন ছিল। আকাশে ছিল পুলিশ-র‌্যাবের হেলিকপ্টার টহল।

এদিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন দুইজন আন্দোলকারীর মৃত্যু হয়। সোমবার পর্যন্ত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে আন্দোলনে নিহত ৬৮টি লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

২২ জুলাই সেনাপ্রধান যাত্রাবাড়ীসহ ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন স্থানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মোতায়েন করা সেনা সদস্যদের কার্যক্রম পরিদর্শন করেন। এ সময় সেনাপ্রধান বলেন, ‘জনগণের স্বার্থে এবং রাষ্ট্রের যেকোনো প্রয়োজনে সেনাবাহিনীর সদস্যরা অক্লান্ত পরিশ্রম করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দেশব্যাপী কাজ করে যাচ্ছে।’

এছাড়া এদিন যাত্রাবাড়ী এলাকা পরিদর্শন করেন তৎকালীন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, র‌্যাবের মহাপরিচালক মো. হারুন অর রশিদ ও ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান। এ সময় আইজিপি সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রতিটি অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য পাই পাই করে হিসাব দিতে হবে।’

তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘পরিস্থিতির আরও উন্নতির জন্য কারফিউ অব্যাহত থাকবে। মঙ্গলবার দুপুর ১টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত কারফিউ শিথিল থাকবে। পরিস্থিতির উন্নতি হলে আস্তে ধীরে কারফিউ শিথিলের সময় পর্যায়ক্রমে বাড়ানো হবে।’

রোববার দিবাগত রাত থেকে সোমবার সকাল পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্থানে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে চট্টগ্রাম মহানগরে ৪৬ জন, নারায়ণগঞ্জে ১১০ জন, গাজীপুরে ২৫ মামলায় ১৫৬ জন, বগুড়ায় ১০ মামলায় ৯৪ জন, ঠাকুরগাঁওয়ে ২৫ জন, লালমনিরহাটে দুই জন, টাঙ্গাইলে ৩৯ জন, রংপুরে ১৮ জন, জয়পুরহাটে ৩৬ জন, কক্সবাজারে তিন মামলায় ২৪ জন, বরগুনায় ২৫ জন, বরিশালে ১৩ জন, দিনাজপুরে ৩১ জন, জামালপুরে আটটি মামলায় ১৮ জন, ঝিনাইদহে ১৩ জন, কুমিল্লায় ৯১ জন, নাটোরে চার জন, ফেনীতে আট জন, গাইবান্ধায় দুই নাশকতার মামলায় ৪৫ জন, ফরিদপুরে ১৭ জন, পঞ্চগড়ে চার জন, কিশোরগঞ্জে ২৬ জন, লক্ষ্মীপুরে ১৪ জন এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ২৫ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *