জুলাই ডায়েরি: সমন্বয়ক নাহিদ ইসলামকে তুলে নিয়ে নির্যাতন

টাইমস রিপোর্ট
3 Min Read
কোটা সংস্কার আন্দোলনের এ দিন সমন্বয়ক নাহিদ ইসলামকে তুলে নিয়ে নির্যাতন করা হয়। ছবি: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ফেসবুক পেজ

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক মো. নাহিদ ইসলাম গত বছরের ২১ জুলাইয়ে রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তার বাঁ ঊরু, দুই বাহু ও কাঁধজুড়ে ছিল নির্যাতনের কালচে দাগ। ওই দিন দুপুরে হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে নাহিদ বলেছিলেন, ‘আমাকে অমানুষিকভাবে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয়েছে। চোখ বেঁধে অচেনা জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। আমি চাই, এই অচলাবস্থার শান্তিপূর্ণ সমাধান হোক। ক্যাম্পাস খুলুন, শিক্ষার্থীরা ফিরে যাক পড়াশোনায়।’

নাহিদ জানিয়েছিলেন, ওই বছরের জুলাই মাসের এক রাতে খিলগাঁওয়ের নন্দীপাড়ায় এক বন্ধুর বাসা থেকে সাদাপোশাকের ২০-২৫ জন ব্যক্তি তাকে তুলে নিয়ে যায়। বাসার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা গাড়িতে তোলার পর তার চোখ কাপড় দিয়ে বেঁধে ফেলা হয়। প্রায় ৩০-৩৫ মিনিট গাড়ি চালিয়ে একটি অজ্ঞাত জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ, এরপর লোহার রড দিয়ে মারধর করা হয়।

নাহিদ বলেছিলেন, ‘একপর্যায়ে আমি জ্ঞান হারাই। আমার মনে হয়েছে, প্রায় ২৪ ঘণ্টা আমি অচেতন ছিলাম। হুঁশ ফিরলে দেখি, বড় রাস্তার পাশে পড়ে আছি।’

পরে কোনোমতে একটি অটোরিকশায় করে বাসায় ফেরেন নাহিদ। দুপুরের দিকে তাকে নগরের গণস্বাস্থ্য হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, তার শরীরে আঘাতের চিহ্ন ছিল, তবে অবস্থা গুরুতর নয়।

নাহিদ বলেছিলেন, ‘ক্যাম্পাস খুলতে হবে, শিক্ষার্থীদের কথা শুনতে হবে। আমরা চাই না কোনো সহিংসতা। কিন্তু সরকার দায়িত্বশীল আচরণ না করে উসকানি দিয়ে পরিস্থিতি অরাজক করে তুলেছে। এতে অন্য পক্ষ সুযোগ নিচ্ছে।’

২১ জুলাই রাতে হাসপাতালে নাহিদকে দেখতে যান আন্দোলনের আরও তিন সমন্বয়ক–  হাসনাত আবদুল্লাহ, সারজিস আলম ও মাহিন সরকার। তারা সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সরকারকে ইন্টারনেট চালু, হল খুলে দেওয়া, সমন্বয়কদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ও কারফিউ প্রত্যাহারের দাবি মানতে হবে। না হলে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

হাসনাত অভিযোগ করেছিলেন, ‘রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবনে সমন্বয়কদের যাওয়ার ঘটনাকে ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। সেটা কোনো সংলাপ ছিল না, আমরা শুধু আমাদের দাবি জানিয়েছি।’

সারজিস বলেছিলেন, ‘কোটা সংস্কার আন্দোলন তখন আর কোটার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না। কয়েক দিনে বহু শিক্ষার্থী নিহত, আহত ও নির্যাতনের শিকার হয়েছিল। তাই তাদের ৯ দফা দাবিও পরে ৮ দফায় রূপান্তর করা হয়েছিল।’

সেই সময়ের হিসাবে, ২১ জুলাই পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন জেলায় সংঘর্ষে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ১৭৪ জনে। শুধু ২১ জুলাই-ই নিহত হয়েছিলেন ১৯ জন। এর মধ্যে সাতজন আগে আহত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে নাহিদ বলেছিলেন, ‘আমরা কারও ক্ষতি চাই না। আমরা চাই সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ সমাধান। ক্যাম্পাস খুলুন, বিচার হোক হত্যার। আমাদের ভাইবোনদের নিরাপত্তা দিন। ছাত্রদের রক্ত আর যেন না ঝরে।’

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *