সেনেগালে ফরাসি সামরিক উপস্থিতির দীর্ঘ ৬৫ বছরের ইতিহাসে সমাপ্তি ঘটেছে। বৃহস্পতিবার সেনেগালে অবস্থিত শেষ দুটি সামরিক ঘাঁটি হস্তান্তর করেছে ফ্রান্স।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার সেনেগালের রাজধানী ডাকারে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘ডাকার’ ও ‘গেইল’ সামরিক ক্যাম্পের হস্তান্তর হয়। ‘গেইল’ সেনেগালের সবচেয়ে বড় ফরাসি সামরিক ঘাঁটি। অন্যদিকে ‘ডাকার’ সেনেগালে থাকা ফরাসি বিমানঘাঁটি।
অনুষ্ঠানে ছিলেন সেনেগালের সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান মবায়ে সিসে এবং আফ্রিকায় অবস্থান করা ফরাসি বাহিনীর প্রধান জেনারেল পাসকাল ইয়ানি।
শেষ দুটি সামরিক ঘাঁটি হস্তান্তরের মধ্য দিয়ে সেনেগালে ‘ফরাসি সামরিক উপস্থিতির’ দীর্ঘ ৬৫ বছরের ইতিহাসের সমাপ্তি ঘটলো। এর মধ্যে দিয়ে পশ্চিম ও মধ্য আফ্রিকায় ফ্রান্সের সামরিক প্রভাব কার্যত শেষ হয়েছে। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সেনেগালে যৌথ অভিযান পরিচালনাকারী প্রায় সাড়ে তিনশ সেনাসদস্য দেশটি ছাড়ছেন।
সেনেগালের জেনারেল সিসে এই প্রক্রিয়াকে দীর্ঘ ও সমৃদ্ধ সামরিক পথচলার গুরুত্বপূর্ণ বাঁক হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
অন্যদিকে ফরাসি জেনারেল ইয়ানি বলেন, ‘দুই দেশের সামরিক ইতিহাসের সমপ্তি ঘটলো। ফ্রান্স এখন নতুনভাবে আফ্রিকার সাথে সম্পর্ক জোরদারে কাজ করবে। ’
গত নির্বাচনে জয়ী হওয়া প্রেসিডেন্টে বাসিরাও দিয়াময়ে ফায়ে তার নির্বাচনী প্রচারণায় সেনেগালকে ২০২৫ সালের মধ্যে ফরাসি সেনামুক্ত করার ঘোষণা দেন। তবে তিনি ফ্রান্সের সাথে সুসম্পর্ক রাখার কথাও জানান।
সেনেগালের প্রেসিডেন্ট দীর্ঘদিন ধরে দেশটিতে চলা ফরাসি নিপীড়নের জন্য ক্ষমা চাইতে ফ্রান্সকে আহ্বান জানিয়েছেন। বিশেষ করে ১৯৪৪ সালের পহেলা ডিসেম্বর ফরাসি বাহিনীতে যুদ্ধ করা আফ্রিকান সেনাদের হত্যাকাণ্ডের জন্য তিনি ফ্রান্সকে ক্ষমা চাইতে বলেন।
১৯৬০ সালে স্বাধীনতা লাভের পর সেনেগাল মূলত ফ্রান্সের বিশ্বস্ত অংশীদাররুপে পরিচিতি পায়। সম্প্রতি আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে ‘সামরিক উপস্থিতি’ নিয়ে প্রশ্ন উঠলে ফ্রান্স তাদের সামরিক ঘাঁটি এ অঞ্চলে কমিয়ে আনছে।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে আইভরি কোস্টে থাকা তাদের শেষ ঘাঁটি প্রত্যাহার করে নেয় ফ্রান্স। কয়েক মাস আগে চাঁদের ‘কশেই’ ঘাঁটিও প্রত্যাহার করে ফ্রান্স। এর মাধ্যমে শাহেল অঞ্চলে ফ্রান্সের সামরিক উপস্থিতি শেষ হয়।
এর আগে ২০২০-২৩ সালের মধ্যে বুরকিনা ফ্যাসো, নাইজার ও মালিতে সামরিক সরকারগুলো ৪ হাজার ৩০০ ফরাসি সৈন্যকে জোরপূর্বক ফেরত পাঠায়। তিন দেশ ফ্রান্সের পরিবর্তে রাশিয়ার সহায়তার দিকে ঝুঁকে পড়ে।
ফ্রান্সের আরেক সাবেক উপনিবেশ সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক। দেশটিতে এখন রুশ ভাড়াটে সৈন্যরা সক্রিয়। তারাও ফরাসি সৈন্য প্রত্যাহার করতে চাপ দিচ্ছে।
এছাড়া গ্যাবনের ফরাসী ঘাঁটিটিও যৌথ সামরিক ঘাঁটিতে রুপান্তর করা হয়েছে। বর্তমানে আফ্রিকার ছোট দেশ জিবুতিতে ফ্রান্সের একমাত্র সামরিক ঘাঁটি রয়েছে।