‘‘জুলাই উইমেন্স ডে’’ উপলক্ষে নারীদের অবদান স্মরণে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সোমবার রাত সাড়ে ১১টায় প্রদর্শিত হয় এক ব্যতিক্রমধর্মী ড্রোন শো। বাংলাদেশের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং চীনা সহযোগিতায় আকাশে ওড়ে প্রায় ২ হাজার ড্রোন, যেখানে ফুটিয়ে তোলা হয় জুলাই আন্দোলনের নানা অধ্যায়, প্রতীক ও প্রতিবাদী স্লোগান।
ড্রোন শোর প্রথম ধাপে তুলে ধরা হয় বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে সংঘটিত গুম ও রাজনৈতিক সহিংসতার চিত্র। দেখা যায় গুম হওয়া ইলিয়াস আলী, নিখোঁজ মাইকেল চাকমা এবং বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের মুখচ্ছবি। দ্বিতীয় ধাপে চিত্রায়িত হয় ১৪ জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থান এবং নারী নেতৃত্বের উদ্ভব।
আকাশজুড়ে ঝলসে ওঠে নানা প্রতিবাদী স্লোগান—‘তুমি কে আমি কে, রাজাকার রাজাকার’, ‘মাতৃভূমি অথবা মৃত্যু’, ‘পোস্ট ডিলেট কর সমস্যা হবে’, ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাহিরে?’ এমনকি প্রদর্শিত হয় শেখ হাসিনার বিতর্কিত মন্তব্য: ‘মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা পাবে না, তাহলে কি রাজাকারের নাতিপুতিরা পাবে?’
আলোকচ্ছটায় তুলে ধরা হয় শহীদ আবু সাঈদের প্রতিকৃতি, যিনি অভ্যুত্থানে প্রথম প্রাণ দেন। বিডিআর হত্যাকাণ্ড ও শাপলা চত্বরে সংঘটিত হামলার দৃশ্যপট।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের হাজার হাজার নারী শিক্ষার্থী এ শো উপভোগ করেন। সময়ের প্রতিবাদ ও সাহসিকতার প্রতিচ্ছবিতে শহীদ মিনার হয়ে ওঠে এক জীবন্ত স্মৃতিসৌধ।
সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। এরপর চলে স্মৃতিচারণ, সংগীত পরিবেশনা এবং তথ্যচিত্র প্রদর্শন। গানে অংশ নেন সায়ান, এলিটা করিম, পারসা মাহজাবীন এবং ব্যান্ডদল ‘ইলা লা লা’ ও ‘এফ মাইনর’।
প্রদর্শিত তথ্যচিত্রগুলোর মধ্যে ছিল ‘দীপক কুমার গোস্বামী স্পিকিং’ ও ‘জুলাই বিষাদ সিন্ধু’। আবরার ফাহাদের জীবন ও মৃত্যুকে কেন্দ্র করে নির্মিত একটি ডকুমেন্টারিতে ফুটে ওঠে রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের নির্মমতা।

আন্দোলনের স্মৃতিচারণে বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সংগঠক উমামা ফাতেমা। তিনি বলেন, ‘জুলাই কারো একার নয়—জুলাই পুরো বাংলাদেশের।’
আরেক সংগঠক নুসরাত তাবাসসুম বলেন, ‘আমরা নাগরিক দায়িত্ব থেকে পথে নেমেছিলাম, নারী হিসেবে নয়। এখনও কিছু ক্যাম্পাসে আমাদের বঞ্চিত রাখা হয়। আমরা আলাদা অনুষ্ঠান চাইনি, চাই সারাবছরের সম্মান।’
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন অধ্যাপক সামিনা লুৎফা, আবরার ফাইয়াজ, সোহাগী সামিহা, যাত্রাবাড়ীর চোখ হারানো পারভীন, স্বর্ণা রিয়া, ইভা, কলি কায়েস, ফারহানা মানিক মুনা, আনিশা ও মালিহা। নারী ফুটবল ফেডারেশনের অর্পিতা বিশ্বাস ও সৌরভী আকন্দ প্রীতিও বক্তব্য রাখেন।
উপদেষ্টাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, শারমীন এস মুরশিদ, আসিফ নজরুল, আদিলুর রহমান খান, সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, ফরিদা আখতার ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।