বাড়ছে বাজেট, সিনেমার মান বাড়ছে কি?

5 Min Read

পরিচালকরা প্রতিনিয়ত জানাতেন তারা ভাল ছবি বানাতে চান। কিন্তু বাজেট পাচ্ছেন না ঠিকঠাক। আবার কোনো ছবি মুক্তির পর সমালোচনা হলে জবাবে বলতেন, ‘আমরা যে গল্প ভেবেছিলাম, সেটা বানাতে যে বাজেট দরকার ছিল তা পাইনি। তাই ছবিতে ইচ্ছে থাকলেও অনেক কিছু করতে পারিনি।’ এর বিপরীতে প্রযোজকদের কথা ছিল, এত বাজেট দিয়ে যে ছবি বানাবো দর্শক কোথায়? সিনেমা হল থেকে টাকা কি উঠবে?

তবে পরিচালক-প্রযোজকদের এ অজুহাত মনে নেওয়ার সময় শেষ হতে চলেছে। গত দু‘বছরের ঢালিউড ইন্ডাস্ট্রিতে যতগুলো ছবি ব্যবসাসফল হয়েছে কিংবা আলোচনায় এসেছে এর প্রতিটা অনেক বাজেটের। শাকিব খান অভিনীত ‘বরবাদ’ তো অফিসিয়ালি ১৫ কোটির ওপরে নির্মাণ খরচ হয়েছে বলে জানিয়েছে। ছবিটির বক্স অফিসে আয় ৭৫ কোটি বলা হয়েছে। এছাড়া ৫ কোটি টাকার ওপরে অনেক ছবিই নির্মিত হচ্ছে। তাহলে স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন এসে যায়, বাজেট যেহেতু বাড়ছে সেহেতু ছবির মান আদৌ বাড়ছে কি না?

চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি শাহীন বললেন, বাজেটের পাশাপাশি ছবির মানও বাড়ছে। টাইমস অব বাংলাদেশকে তিনি বলেন, ‘আমাদের ছবির বাজেট বাড়ছে এটা আমাদের জন্য ভালো খবর। কারণ, আপনি যত বড় পরিসরে গল্প বলতে চাইবেন তত বেশি বাজেট লাগবে। সেটা এখানকার প্রযোজকরা দিচ্ছেন এবং সে টাকা তুলেও আনছেন, এটা ভালো দিক। আর ছবির মান বাড়ছে কি না জিজ্ঞেস করেন তাহলে বলব অবশ্যই বাড়ছে। ছবির মান খারাপ হলে দর্শক কিন্তু ওই ছবি দেখেন না।’

একই কথা বলেন ‘বরবাদ’-এর প্রযোজক শাহরিন আক্তার সুমি। তিনি বলেন, ‘একটা ভালো ছবির জন্য বাজেট অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। একই সঙ্গে একটা পরিপূর্ণ ছবি নির্মাণের জন্য এর সঙ্গে লাগে পরিচালক, সঠিক ভিশন ও ভালো টিম-ওয়ার্ক।’

ঠিকঠাক বাজেটে ঠিকঠাক ছবি নির্মাণ হচ্ছে বলে পারিবারিক দর্শক সিনেমা হলে ফিরছে—এমনটাই বলেন চলচ্চিত্র প্রযোজক সমিতির সাবেক সভাপতি খোরশেদ আলম খসরু। তিনি বলেন, ‘ছোটবেলায় যেমন দেখেছি দর্শকরা পুরো পরিবার নিয়ে সিনেমা হলে যান, সে ধারা আবার ফিরে এসেছে। যদিও তা শুধু দুই ঈদকে কেন্দ্র করে হচ্ছে। এ মৌসুমি দর্শককে আমাদের সারা বছরের দর্শকে রূপান্তরিত করতে হবে। এর জন্য ভাল বাজেটের পাশাপাশি ভাল গল্পের ছবি লাগবে।’

অযথা বাজেট বাড়ানোর পক্ষপাতী নন পরিচালক সঞ্জয় সমাদ্দার। তিনি বলেন, ‘এখন কারো গল্প যদি একটা রুমের গল্প হয়, তাহলে তো বড় বাজেটের দরকার নেই। আবার কারো যদি হিমালয়ের গল্প হয়, তাহলে তো বাজেট লাগবেই। আর বাজেট ঠিকঠাক না পেলে তো ছবি ভালভাবে নির্মিত হবে না। এখন যে ছবি ঠিকঠাক বাজেট পাচ্ছে গল্প অনুযায়ী সেগুলোর নির্মাণে কিন্তু খুব একটা ত্রুটি থাকছে না।’

তবে ভাল বাজেটের পাশাপাশি ভাল নির্মাতা, অভিনেতা, গল্প ও সঠিক মার্কেটিংও জরুরি বলে মনে করেন প্রযোজক সুমি। তিনি বলেন, ‘এখন কিন্তু শুধু বড় বাজেটে ভাল ছবি নির্মিত হচ্ছে বিষয়টা এমন না। কম বাজেটের উৎসব কিন্তু এবারের ঈদে ভাল ব্যবসা করেছে।’

প্রথিতযশা চলচ্চিত্র সাংবাদিক মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘একটা ছ‌বির বা‌জেট যখন বা‌ড়ে তখন সেই ছ‌বি‌টির ভিজ‌্যুয়া‌ল খুব ভাল হয়। টে‌কনিক‌্যা‌লি ছ‌বি‌টি রিচ হয়। ছ‌বি‌টির বি‌নোদনমূল‌্য অ‌নেক বে‌ড়ে যায়। তখন সেই ছ‌বি‌টি বা‌জার সম্প্রসার‌ণে সহ‌যো‌গিতা ক‌রে। একটা ছ‌বির ন‌্যূনতম প্রডাকশন মূল্য না থাক‌লে কিংবা টেক‌নিক‌্যাল স্ট‌্যান্ডার্ড না থাক‌লে সেই ছ‌বি‌কে নি‌য়ে বি‌দে‌শের বাজা‌রে লড়াই করা যায় না। ফ‌লে বা‌জেট বাড়‌লে ছ‌বির কা‌রিগরি মান বা‌ড়ে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বা‌জে‌টের স‌ঙ্গে ক‌নটেন্টের কো‌নো সম্পর্ক নেই। কম বা‌জে‌টের ছ‌বিরও ক‌নটেন্ট নতুন চিন্তা ও নতুন বিষয়‌কে ধারণ কর‌তে পা‌রে। ছ‌বির বক্তব‌্য, গল্প, অ‌ভিনয় য‌দি তাজা হয় এবং নির্মাতা য‌দি সৃজনশীল হোন ত‌বে সেই ক‌নটেন্টের ক্ষে‌ত্রে বা‌জে‌টের ঘাটতি‌ কো‌নো সমস‌্যাই নয়। আমা‌দের দে‌শের সি‌নেমার যে বা‌জেট বে‌ড়ে‌ছে, এর ইতিবাচক প্রভাব প‌ড়ে‌ছে সি‌নেমা হ‌লে। ফ‌লে সি‌নেমার দর্শক বাড়‌ছে। কিন্তু বা‌জেট বাড়ার কার‌ণে ক‌নটেন্ট খুব উন্নত হ‌য়ে যা‌চ্ছে, তেমনটা বলা যা‌বে না। ক‌নটেন্ট সম‌য়ের চা‌হিদায় ভাল হ‌চ্ছে। সৃনজনশীল তরুণ‌দের সি‌নেমার স‌ঙ্গে যুক্ত হওয়ায় ভাল হ‌চ্ছে। বা‌জেট এই তরুণ‌দের‌কে আরও বড় চিন্তা কর‌তে উদ্বুদ্ধ কর‌বে ব‌লে আমি ম‌নে ক‌রি।’

বাজেটসহ অন্যান্য সবকিছু ভাল থাকার পরেও অনেক সময় ভাল ছবি পাওয়া যায় না। এর কারণ হিসেবে শাহীন সুমন বলেন, ‘আমাদের এখানে চরিত্রাভিনেতার সংকট চলছে। একটা এফডিসি থেকে নতুন মুখের সন্ধানে নামক প্রতিযোগিতার মাধ্যমে শুধু নায়ক নয়, বিভিন্ন চরিত্রের জন্য ভাল অভিনেতাও বের হয়ে আসতো। পরিচালক সমিতি থেকে আমাদের ইচ্ছে আছে এ বছর এরকম একটা আয়োজন করার। আশা করছি তখন বাজেট বাড়ার যে সুফল তা পুরোপুরি পাবেন দর্শকরা।’

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *