বাংলাদেশ সরকার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত ৩৫ শতাংশ শুল্কের সামনে নমনীয় ফলাফল পাওয়ার ব্যাপারে এখনো কিছুটা আশাবাদী। তবে ব্যবসায়ী নেতারা সতর্ক করেছেন, সময় চলে যাচ্ছে। একই সঙ্গে দেশের আলোচনার কৌশল ইতোমধ্যেই পিছিয়ে পড়েছে।
মঙ্গলবার অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, এ শুল্ক ১ আগস্ট থেকে কার্যকর হওয়ার কথা। সেটি এখনো ‘চূড়ান্ত নয়’।
তিনি নিশ্চিত করেছেন, বাংলাদেশি কর্মকর্তারা যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি কার্যালয়ের (ইউএসটিআর) সঙ্গে এ বিষয়ে সরাসরি আলোচনা চালাচ্ছেন। বুধবার বাংলাদেশ সময় সকালে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে বাংলাদেশের আলোচক দল শুল্ক বিষয়টি সমাধানে অগ্রগতি করার আশা করছে।
বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান জানিয়েছেন, বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিমানবাহী বিমানের মতো পণ্য, গম, তুলা ও সয়াবিন আমদানি বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে, যা বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর লক্ষ্যে এক নমনীয় পদক্ষেপ হিসেবে নেওয়া হয়েছে। এটি সময়সীমার আগে তাদের নমনীয়তা প্রদর্শনের ইঙ্গিত দেয়। তবে, বাণিজ্য বিশ্লেষকরা এবং রপ্তানিকারকরা বলেন, এই পদক্ষেপগুলো হয়তো অনেক দেরিতে এসেছে এবং এটা যথেষ্ট নয়।
২ এপ্রিল ট্রাম্পের ঘোষণার পর প্রাথমিক আলোচনা শুরু হলেও, বাংলাদেশের কৌশল যথেষ্ট স্পষ্টতা এবং তাড়াহুড়া ছাড়া ছিল, যা ভিয়েতনাম যেমন দ্রুত আমদানির ওপর শুল্ক-মুক্ত প্রবেশাধিকার দেয়ার মাধ্যমে এবং ২০ শতাংশ শুল্কের কথা শোনা যায়, তাদের তুলনায় সম্পূর্ণ আলাদা ছিল। ভিয়েতনামের দীর্ঘস্থায়ী লবিং অবকাঠামো বাংলাদেশের তুলনায় অনেক শক্তিশালী, যেখানে কোনো প্রাতিষ্ঠানিক লবিং প্রচেষ্টা ছিল না।
বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খান এবং বিএসিআই সভাপতি আনোয়ার-উল আলম পারভেজ সরকারকে অভিযুক্ত করেন। তারা রপ্তানি খাতগুলোর সঙ্গে পরামর্শ করেনি বা পেশাদার লবিং প্রতিষ্ঠান নিয়োগ করেনি, যদিও ব্যবসায়ী নেতারা বার বার আহ্বান জানিয়েছিলেন।
‘ব্যবসায়ী সম্প্রদায়কে অন্ধকারে রাখা হয়েছে। মাহমুদ হাসান সতর্ক করেছেন, বিশেষ করে সেই সব কারখানাগুলোর জন্য যারা যুক্তরাষ্ট্রের বাজারের ওপর ৫০ শতাংশের বেশি তাদের বিক্রয় নির্ভরশীল।
রপ্তানিকারকরা সতর্ক করেছেন, যদি বড় প্রতিদ্বন্দ্বীরা কম শুল্ক পায়, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রতিযোগিতা হারাতে পারে বাংলাদেশ। যেমন-গত দশ বছরে জিএসপি সুবিধা প্রত্যাহারের পর বাংলাদেশি সাইকেল রপ্তানির পতন ঘটেছিল।
ইউএসটিআর-এর তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ ২০২৩ সালে ১৩ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার মূল্যের পণ্য—মূলত তৈরি পোশাক—যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করেছে, যা মোট জাতীয় রপ্তানির প্রায় ১৮ শতাংশ।
অপরদিকে, বাংলাদেশ ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার মূল্যের পণ্য আমদানি করেছে, যা ২০২৩ এর তুলনায় ১ দশমিক ৫ শতাংশের কম। যুক্তরাষ্ট্রের বাজার এখনো বাংলাদেশের একক বৃহত্তম রপ্তানি গন্তব্য, যা শুল্কের হুমকি আরও গুরুত্বপূর্ণ করে তোলে।
রপ্তানিকারকরা বলেন, ৩৫ শতাংশ শুল্ক কারখানা বন্ধ, কর্মী ছাঁটাই এবং বৈদেশিক মুদ্রা প্রবাহে তীব্র হ্রাসের দিকে নিয়ে যেতে পারে, যা বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি হতে পারে।
বাংলাদেশের এলডিসি অবস্থান যে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে এমন আশা এখন উল্টো হয়েছে। কারণ, যুক্তরাষ্ট্র আরও কঠোর শুল্ক প্রস্তাব করেছে অন্য এলডিসি দেশগুলোর মতো মিয়ানমারের (৪০ শতাংশ) ওপর। এ অবস্থা ইঙ্গিত দেয়, এলডিসি সুবিধাগুলো ট্রাম্প প্রশাসনের বাণিজ্য নীতির অধীনে কোনো গুরুত্ব বহন করে না।
বিশেষ পণ্য প্রস্তাবের দেরিতে জমা দেওয়া, ডব্লিউটিও নীতির ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতা এবং কৌশলগত স্পষ্টতার অভাব বাংলাদেশের ওয়াশিংটন-এ বাণিজ্যিক অবস্থানকে আরও দুর্বল করেছে। যদিও সরকার আশাবাদী, তবে সক্রিয় পদক্ষেপের অভাব এবং স্পষ্ট প্রস্তাবগুলোর অনুপস্থিতি অনুকূল ফলাফল নাও আসতে পারে।
১ আগস্টের সময়সীমা দ্রুত আসছে। সরকার এখন আরও বড় চাপের মধ্যে রয়েছে। তারা রপ্তানি খাতকে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করার জন্য তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নেবে। যদি বাংলাদেশ একটি অনুকূল শুল্ক ফলাফল না পায়, তবে তার পোশাক শিল্পের ওপর প্রভাব ব্যাপকভাবে মারাত্মক হতে পারে। কারণ, বাংলাদেশের পোশাক খাত অনেকাংশে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারের ওপর নির্ভরশীল।
ব্যবসায়িক নেতারা সরকারকে যুক্তরাষ্ট্রে আরও শক্তিশালী লবিং প্রচেষ্টা ও সে দেশের সরকারের সঙ্গে ভালো যোগাযোগ রাখার আহ্বান জানিয়ে চলেছেন। পরবর্তী আলোচনার পর্ব বাংলাদেশের জন্য এ শুল্ক ঝড় মোকাবিলা করতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হবে।