চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৩২টি চলচ্চিত্রকে মোট ১৩ কোটি টাকা অনুদান দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ১২টি এবং স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ২০টি। তথ্য মন্ত্রণালয় সম্প্রতি অনুদানপ্রাপ্ত প্রযোজকদের নামের তালিকা প্রকাশ করেছে। সেখানে পূর্ণদৈর্ঘ্যে ৭৫ লাখ করে ১২ জন এবং স্বল্পদৈর্ঘ্যে ২০ লাখ করে ২০ জনকে অনুদান দেওয়া হয়েছে। এবারের অনুদান প্রাপ্তদের মধ্যে কয়েকজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তারা সরকারের চলচ্চিত্র বিষয়ক বিভিন্ন কমিটিতে আছেন। যার কারণে তাদের এ অনুদানপ্রাপ্তিকে ‘নৈতিকভাবে’ সঠিক নয় বলে মনে করছেন চলচ্চিত্রের মানুষেরা।
তালিকা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, অনুদানপ্রাপ্তদের মধ্যে অন্তত ৬ জন রয়েছেন যাদের নাম চলচ্চিত্রের বিভিন্ন কমিটিতে আছে। তাদের মধ্যে পূর্ণদৈর্ঘ্য ক্যাটাগরিতে প্রামাণ্যচিত্র ‘মায়ের ডাক’-এর প্রযোজক লাবিব নামজুছ ছাকিব ফিল্ম আর্কাইভের বিশেষজ্ঞ কমিটির সদস্য। চলচ্চিত্রবিষয়ক জাতীয় পরামর্শক কমিটির সদস্য মুশফিকুর রহমান (কবির মুখ-The Time Keeper) পূর্ণদৈর্ঘ্য ক্যাটাগরিতে এবং মো. আরিফুর রহমান স্বল্পদৈর্ঘ্য ‘আশার আলো’-র জন্য অনুদান পেয়েছেন।
একই কমিটির সদস্য সাদিয়া খালিদ রীতি ‘অদ্বৈত’-এর জন্য স্বল্পদৈর্ঘ্যে অনুদান পেয়েছেন। তিনি আবার স্বল্পদৈর্ঘ্যে চিত্রনাট্য বাছাই কমিটির সদস্য ছিলেন। স্বল্পদৈর্ঘ্য ‘অতিথি’র জন্য অনুদান পাওয়া মো. আবিদ মল্লিক চলচ্চিত্র আমদানি রফতানি বিষয়ক কমিটির সদস্য। একই ক্যাটাগরিতে ‘ভরা বাদর’-এর জন্য অনুদান পাওয়া মোহাম্মদ সাইদুল আলম খান তথ্য মন্ত্রণালয় সংস্কার সার্চ কমিটির সদস্য।
অভিযোগের বিষয়ে মো. আবিদ মল্লিক বলেন, ‘আমি ১৯৯৬ সাল থেকে চলচ্চিত্র নির্মাণ করি। এখন পর্যন্ত ৭টা চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছি। বেশ কয়েকবার সেরা ছবির পুরস্কারও পেয়েছি। আমরা তো অনুদান কমিটিতে ছিলাম না, অন্য কমিটিতে ছিলাম। এতে আইনগত কোনো বাধা তো ছিল না। যার ফলে এতে দোষের কিছু দেখছি না। কোন প্রকার প্রভাব বিস্তার করেছি, কেউ তার প্রমাণ দিক।’
মো. আরিফুর রহমান বলেন, ‘অনুদান না পাওয়া নির্মাতা-প্রযোজকরা এ ধরণের অভিযোগ করছেন। যারা অনুদান পায়নি, তারা চাইলে আপিল করুক। আর চ্যালেঞ্জ করুক- আমরা যারা অনুদান পেয়েছি তারা অযোগ্য। এ তালিকা তো পুনর্বিবেচনার সুযোগ আছে।’
‘আমি নিজে একজন নির্মাতা। এর আগে কখনো অনুদানের জন্য আবেদন করিনি। এবার ভাবলাম নির্মাতা হিসেবে না হোক প্রযোজক হিসেবে চিত্রনাট্য জমা দিতে পারি। এবার তো সবকিছু কয়েক ধাপে বাছাই হয়েছে। আগের মতো সেখানে শুধু সচিবরা ছিলেন না, চলচ্চিত্রের মানুষরাও ছিলেন। তারা কিন্তু তাদের মতামত দিয়েছেন এবং তা গ্রহণ করা হয়েছে।’
পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের অনুদান কমিটির সদস্য নির্মাতা আকরাম খান বলেন, ‘আমি এতটুকু বলতে পারি পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রে শতভাগ স্বচ্ছতার সঙ্গে অনুদান দেওয়া হয়েছে।’
স্বল্পদৈর্ঘ্য চিত্রনাট্য বাছাই কমিটির সদস্য মুহাম্মদ আসাদুল্লাহ বলেন, ‘নিয়ম অনুযায়ী কেউ যদি পূর্ণদৈর্ঘ্য কমিটিতে থাকেন, তিনি স্বল্পদৈর্ঘ্যে আবেদন করতে পারবেন। আবার কেউ স্বল্পদৈর্ঘ্যের কমিটিতে থাকলে পূর্ণদৈর্ঘ্যে আবেদন করতে পারবেন। যোগ্য হলে তারা অনুদান পাবেন। এখানে নিয়মের ব্যতয় ঘটেনি।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পূর্ণদৈর্ঘ্য অনুদান কমিটির এক সদস্য বলেন, ‘আইনগতভাবে বাধা না থাকলেও বিষয়টি নৈতিকভাবে ঠিক নয়।’