নাজমুল হোসেন শান্তর জোড়া সেঞ্চুরি, নাঈম হাসানের পাঁচ উইকেট, স্মৃতি বিজড়িত মাঠে মুশফিকের আরো একটা সেঞ্চুরি আর পাথুম নিসাঙ্কার ডাবল মিসের আক্ষেপ। এসবের ডামাডোলে বিদায়ী টেস্ট খেলতে নামা অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস খানিকটা আড়ালেই পড়ে ছিলেন। যদিও গল টেস্টের শেষ দিন বেশ ভালোভাবেই প্রাসঙ্গিক হয়ে রইলেন এই অভিজ্ঞ লংকান অলরাউন্ডার। গলের গ্যালারি দর্শকে পূর্ণ হয়েছিল সাদা পোশাকে তাকে শেষবারের মতো দেখার জন্য।
ম্যাথুসের বিদায়ী টেস্টের চতুর্থ ইনিংসে ৩৯ ওভারে জয়ের জন্য শ্রীলংকার লক্ষ্য ছিল ২৯৬ রান; যেটা তাড়া করার কোনো ইচ্ছাই তারা দেখায়নি। বরং সেশনে তাইজুল ইসলামের স্পিন জাদুতে ৪ উইকেট হারিয়ে বসে। তবে অবশ্যম্ভাবী ড্র আসন্ন দেখে দিনের খেলার প্রায় পাঁচ ওভার বাকি থাকতেই সমতায় ম্যাচ শেষ করার প্রস্তাব দেন বাংলাদেশ অধিনায়ক শান্ত। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের নতুন চক্র (২০২৫-২৭) দুই দল শুরু করল ড্র দিয়ে, চারটি করে পয়েন্ট নিয়ে। এই ম্যাচ দিয়ে ২৬ টেস্ট আর ১৩ বছর গলে কোনো টেস্ট ড্র হলো। সর্বশেষ ড্র হওয়া ম্যাচের দুই প্রতিপক্ষও বাংলাদেশ-শ্রীলংকা। ২০১৩ সালে মুশফিকুর রহিমের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরির ম্যাচের নিষ্পত্তি হয়েছিল ড্র’তে।
এক সেশনের কিছুটা বেশি সময় হাতে রেখে ৩৯ ওভারে ২৯৬ রান তাড়া করে ফেলার দুঃসাহস শ্রীলংকা দেখাবে না, সেটা অনুমিতই ছিল। কারণ একদিন আগে থেকেই স্বরূপে ফিরেছে গলের উইকেট। শুরু থেকেই তাই স্পিনারদের দিয়ে আক্রমণ করেন শান্ত। নতুন বলে ইনিংসের ষষ্ঠ ওভারে বল করতে এসে লাহিরু উদারাকে টার্নে বোকা বানান তাইজুল। এগিয়ে এসে খেলতে গিয়ে স্টাম্পড হয়েছেন লিটনের কাছে। প্রথম ইনিংসে ১৮৭ রানের অনবদ্য ইনিংস খেলা নিসাঙ্কা এই ইনিংসে ২৪ রান করে নাঈমের বলে স্লিপে দিয়েছেন ক্যাচ। দীনেশ চান্দিমাল বোল্ড হয়েছেন দুর্দান্ত এক আর্মারে। আর যাকে ঘিরে গল টেস্টে এত আয়োজন, সেই ম্যাথুসও ৪৫ বল খেলে ৮ রান করে ফিরেছেন তাইজুলের বলে সিলি মিড অফে মুমিনুলের হাতে ক্যাচ দিয়ে। শ্রীলংকার দ্বিতীয় ইনিংসের ব্যাটিংয়ের সারাংশে সবচেয়ে উজ্জ্বল অংশটাও তাই তিন উইকেট নেয়া তাইজুলের।
এর আগে পঞ্চম দিনের শুরুতে ১৮৭ রানের লিড নিয়ে খেলা শুরু করা বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংসের ব্যাটিং বন্ধ থাকে প্রায় এক সেশন, বৃষ্টির জন্য। বৃষ্টিতে খেলা বন্ধ হওয়ার আগে শান্ত-মুশফিক জুটি মিলে তোলেন ১০৯ রান। এই জুটি আরো বড় হতে পারত, যদি না ব্যক্তিগত ৪৯ রানে মুশফিক রান আউট হতেন। বৃষ্টির পর খেলা শুরু হলে শান্ত ছাড়া আরো কারো ব্যাটেই রান আসেনি। লিটন বোল্ড হয়েছেন থারিন্দুর টার্নিং এক ডেলিভারির লাইন মিস করে। জাকের আলীও স্টাম্পড হয়েছেন তার একই ধরনের ডেলিভারিতে। দ্বিতীয় ইনিংসে তিন উইকেট নিয়ে শ্রীলংকার সেরা বোলার এই সব্যসাচী স্পিনার।
মিডল অর্ডার ব্যাটারদের ব্যর্থতার দিনে আলো ছড়িয়েছেন শান্ত। ১৯০ বলে দ্বিতীয় ইনিংসে ছুঁয়েছেন সেঞ্চুরি। প্রথম বাংলাদেশি অধিনায়ক হিসেবে এক টেস্টের দুই ইনিংসে সেঞ্চুরি করেছেন এই বাঁহাতি ব্যাটার। টেস্টে সব মিলিয়ে দ্বিতীয়বার এই কীর্তি তার। আর অধিনায়কদের তালিকায় শান্ত ১৬-তম। প্রথম ইনিংসে ১৪৮ রান করে আউট হলেই দ্বিতীয় ইনিংসে ১৯৯ বলে ৯ চার ও ৩ ছক্কায় ১২৫ রানে অপরাজিত ছিলেন তিনি। এর আগে ওপেনার সাদমান ইসলাম করেন ৭৬ রান।
প্রথম ইনিংসে শান্ত আর মুশফিকের জোড়া সেঞ্চুরির সাথে লিটনের ৯০ রানের ইনিংসে ৪৯৫ রানের সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ। জবাব দিতে নেমে ৪৮৫ রানে অল আউট হয় শ্রীলংকা। ডাবল সেঞ্চুরির পথে থাকা নিসাঙ্কা ফেরেন ১৮৭ রানে হাসান মাহমুদের বলে বোল্ড হয়ে। বাংলাদেশের সংগ্রহ টপকে লিড নেয়ার সুযোগ থাকলেও চতুর্থ দিন স্পিনার নাঈমের জাদুতে বরং ১০ রান আগেই থেমে যায় লংকানরা। ১০ রানের লিড নিয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে ৬ উইকেট হারিয়ে আরো ২৮৫ রান তোলে বাংলাদেশ।