রাজধানীর উত্তরায় র্যাব পরিচয়ে কোটি টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনায় ৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। তাদের মধ্যে চাকুরিচ্যুত সেনা ও পুলিশ সদস্য রয়েছেন।
পুলিশ জানায়, ছিনতাই হওয়া ১ কোটি ৮ লাখ ৪৪ হাজার টাকার মধ্যে ২২ লাখ ১০ হাজার ৭৮০ টাকা, ব্যাংকে রাখা ১২ লাখ টাকা ও একটি হায়েস গাড়ি জব্দ করা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত আরো তিনজনকে ধরতে ডিবির অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
ছিনতাই কাজে ব্যবহার করা একটি হায়েস মাইক্রোবাসের সূত্র ধরে বুধবার রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ছিনতাই চক্রের পাঁচ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) এবং উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- মো. হাসান (৩৫), গোলাম মোস্তফা ওরফে শাহিন (৫০), শেখ জালাল উদ্দিন ওরফে রবিউল (৪৩), ইমদাদুল শরীফ (২৮) ও সাইফুল ইসলাম ওরফে শিপন (২৭)। গ্রেপ্তারকৃত শাহীন পুলিশ থেকে এবং রবিউল সেনাবাহিনী থেকে চাকুরিচ্যুত।
ডিএমপির উত্তরা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো. মুহিদুল ইসলাম জানান, ছিনতাইয়ে নেতৃত্বে দিয়েছে সেনাবাহিনী থেকে চাকরিচ্যুত এক সার্জেন্ট ও চাকরিচ্যুত এক পুলিশ কনস্টেবল। ছিনতাইয়ের ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী গোলাম মোস্তফা ওরফে শাহিন পুলিশের চাকুরিচ্যুত কনস্টেবল। তার বিরুদ্ধে অস্ত্রসহ নানা অপরাধে ১৭টি মামলা রয়েছে। চক্রের অন্যতম সহযোগী সেনাবাহিনী থেকে চাকুরিচ্যুত সার্জেন্ট শেখ জালাল উদ্দিন ওরফে রবিউল।

বৃহস্পতিবার দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির উত্তরা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো. মুহিদুল ইসলাম ছিনতাই ঘটনা ও আসামি গ্রেপ্তারের বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন।
তিনি জানান, গত ১৪ জুন সকাল ৮ টা ৫৫ মিনিটের দিকে নগদের ডিস্ট্রিবিউটর আব্দুল খালেক নয়ন তার উত্তরার ১২ নম্বর রোডের ৩৭ নম্বর বাসা থেকে প্রতিষ্ঠানের চারজন কর্মচারীসহ চারটি ব্যাগে ১ কোটি ৮ লাখ ১১ হাজার টাকা নিয়ে দুটি মোটরসাইকেলযোগে উত্তরার নগদের অফিসের উদ্দেশে রওনা হন। পথিমধ্যে উত্তরা ১২ ও ১৩ নম্বর রোডের সংযোগস্থলে একটি কালো রঙের মাইক্রোবাস তাদের গতিরোধ করে।
মাইক্রোবাস থেকে ‘র্যাব’ লেখা কালো কটি পরিহিত ৬/৭ জন অজ্ঞাত ব্যক্তি অস্ত্র নিয়ে নামে। তাদের কাছে আসতে দেখে নগদের টাকা বহনকারী কর্মচারীরা টাকার ব্যাগ নিয়ে দৌড়ানোর চেষ্টা করেন। তখন দুষ্কৃতকারীরা তাদের ধাওয়া করে চারটি ব্যাগে থাকা টাকা ছিনিয়ে নেয় এবং তাদের তিনজনকে মাইক্রোবাসে তুলে হাত-চোখ বেঁধে মারধর করে। ঘটনাস্থল থেকে একজন কর্মচারী পালাতে সক্ষম হন।
এ ঘটনায় উত্তরা পশ্চিম থানায় একটি মামলা হলে পুলিশের উত্তরা বিভাগ ও ডিবি তদন্ত কাজ শুরু করে। প্রযুক্তির সহায়তায় ঘটনায় ব্যবহৃত মাইক্রোবাস ও চালককে শনাক্ত করার হয়। এক পর্যায়ে বুধবার রাত পৌনে ২টায় খিলগাঁও থানা এলাকা থেকে মাইক্রোবাসের চালক মো. হাসানকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে হাসানের স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে সবুজবাগ থানার মাদারটেক চৌরাস্তার স্বপন মিয়ার গ্যারেজ থেকে ডাকাতির ঘটনায় ব্যবহৃত মাইক্রোবাসটি জব্দ করা হয়।

ডিবি উত্তরা বিভাগের একটি টিম ঘটনাস্থলসহ আশপাশের এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ ও তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় ডাকাতির ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত করে। পরে ডাকাত চক্রের মূলহোতা গোলাম মোস্তফা ঘরামী ওরফে শাহিনকে ঢাকার উত্তরা এলাকা হতে গ্রেপ্তার করা হয়। তার কাছ থেকে লুণ্ঠিত ১৩ লাখ ৩৪ হাজার ৫০০ টাকা উদ্ধার করা হয়। তার দেওয়া তথ্যে ইমদাদুল শরীফকে আদাবরের বায়তুল আমান হাউজিং এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার কাছ থেকে লুণ্ঠিত ৮ লাখ ৪ হাজার ৭৮০ টাকা উদ্ধার করা হয়।
গ্রেপ্তার শাহিন ও শরীফের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সেনাবাহিনীর সাবেক সার্জেন্ট শেখ জালাল উদ্দিনকে একই রাতে সবুজবাগ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার কাছ থেকে ৬৩ হাজার টাকা উদ্ধার হয়। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার জালাল নিজেকে ক্যাপ্টেন জালাল হিসেবে পরিচয় দেন। জালাল ঘটনার পরদিন লুণ্ঠিত ১২ লাখ টাকা ঢাকা ব্যাংকের নিজের অ্যাকাউন্টে জমা করেন বলে জানা যায়।
জালালের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ডাকাত চক্রের অপর সদস্য সাইফুল ইসলাম ওরফে শিপনকে বুধবার রাতে এয়ারপোর্ট রেল স্টেশন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে র্যাব ও পুলিশের নকল আইডি কার্ড, লাঠি, সিগনাল লাইট, সেনাবাহিনীর লোগো সম্বলিত মানিব্যাগ, বিভিন্ন ব্যাংকের চেকবই ও মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।
ডিএমপির উত্তরা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো. মুহিদুল ইসলাম আরো জানান, ডাকাত দলের দলনেতা মোস্তফা ওরফে শাহিন একজন চাকুরিচ্যুত পুলিশ কনস্টেবল। ১৯৯৫ সালে রমনায় অস্ত্রসহ ধরা পড়ার পর চাকরি হারান শাহিন। তার বিরুদ্ধে অস্ত্রসহ অন্তত ১৭টি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে।