‘সিন্ডিকেটের ফাঁদে’ মৌসুমী চামড়া ব্যবসায়ীরা

টাইমস রিপোর্ট
3 Min Read
কোরবানির ঈদে মৌসুমী ব্যবসায়ীদের চামড়া সংগ্রহ কার্যক্রম। ছবি: অনিক রহমান/টাইমস
Highlights
  • ছোট ও মাঝারি গরুর চামড়া ২০০-৪০০ টাকায় এবং বড় গরুর চামড়া ৪০০-৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

 

সরকার গরুর কাঁচা চামড়ার দাম বাড়ালেও কোরবানির মৌসুমে বাজারে সেই প্রভাব পড়েনি। মৌসুমী ব্যবসায়ীরা বলছেন, আড়তদাররা সরকার নির্ধারিত দামে চামড়া না কেনায় লোকসান গুনতে হয় তাদের। এ জন্য তারা দুষছেন বাজার সিন্ডিকেটকে। তবে আড়তদাররা এসব কথা মানতে রাজী নন। তাদের ভাষ্য, ট্যানারি নির্ধারিত দরেই কেনাবেচা করছেন তারা।

ঢাকার হাতিরপুলের মৌসুমি ব্যবসায়ী আনিস ২৪০টি গরুর চামড়া কিনে পোস্তার আড়তে গেলে হতাশ হন। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘গতবারের তুলনায় সরকার দাম বাড়ালেও এবার বড় গরুর চামড়া আড়তদাররা ৬৫০-৭০০ টাকায় কিনতে চাচ্ছেন। এতে আমার প্রায় ৭০-৮০ হাজার টাকা লোকসান হয়েছে।’

চামড়া সংগ্রহ করে রাখা হচ্ছে রাজধানীর ধানমন্ডি সায়েন্স ল্যাব এলাকায়। ছবি: অনিক রহমান/টাইমস

তার মতো অনেক মৌসুমি ব্যবসায়ীই কোরবানির চামড়া কিনে আড়তে এসে বিপাকে পড়ছেন। অনেকে কষ্টের টাকায় কেনা চামড়া বিক্রি করছেন লোকসানে।

লালবাগের একজন মাদ্রাসার শিক্ষক দানে পাওয়া চামড়া বিক্রির অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে বলেন, ‘সরকারি দরে প্রতি চামড়ার দাম হওয়া উচিত ১৫০০ থেকে ২০০০ টাকা, কিন্তু আড়তদাররা ৪০০-৬০০ টাকার বেশি দিচ্ছে না।’

সরকার নির্ধারিত দর অনুযায়ী, ঢাকায় লবণযুক্ত প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়া ৬০-৬৫ টাকা, আর ঢাকার বাইরে ৫৫-৬০ টাকা। কিন্তু বাস্তবে অনেক আড়তদারই ফড়িয়াদের কাছ থেকে গড়পড়তা আকারে চামড়া কিনছেন। এতে প্রতি বর্গফুট চামড়ার দাম দাঁড়াচ্ছে ৩০-৩৫ টাকা, যা সরকারি দরের অর্ধেকেরও কম।

পোস্তার আড়তদারদের দাবি, তারা ট্যানারির দেওয়া দরের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই চামড়া কিনছেন।

 

সেখানের আড়তগুলোতে কোরবানির মৌসুমে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে চামড়া এসে জমা হয় এবং এখান থেকে ট্যানারিতে পাঠানো হয়। তবে বাজার পরিস্থিতি ও ব্যবসায়িক চাহিদার ওপর ভিত্তি করে আড়তের কার্যক্রমে তারতম্য দেখা যায়।

চামড়া সংগ্রহ করে রাখা হচ্ছে রাজধানীর ধানমন্ডি সায়েন্স ল্যাব এলাকায়। ছবি: অনিক রহমান/টাইমস

হাজী ট্রেডিং করপোরেশনের ম্যানেজার মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন বলেন, ‘৭০০ থেকে ১০০০ টাকায় চামড়া কিনছি, লবণ ও অন্যান্য খরচ বাদে সরকারি দামই দিচ্ছি।’

তিনি জানান, চামড়ার আকার অনুযায়ী দাম কম-বেশি হচ্ছে। তবে পোস্তায় এবার চামড়ার আমদানি খুব কম। তিনি বলেন, ‘এবার চামড়া বেশিরভাগই সাভার শিল্প নগরীতে চলে যাচ্ছে।’

সরেজমিনে দেখা গেছে, ছোট ও মাঝারি গরুর চামড়া ২০০-৪০০ টাকায় এবং বড় গরুর চামড়া ৪০০-৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

পোস্তার আরেক ব্যবসায়ী মোখলেস বলেন, ‘সিন্ডিকেটের কারণে আমরা ফাঁদে পড়েছি। ট্রাক ভাড়া, লেবার খরচ উঠছে না।’

সরকার এবার ৩০ হাজার টন লবণ বিনামূল্যে বিতরণের উদ্যোগ নিয়েছে যাতে চামড়া সংরক্ষণের মাধ্যমে উপযুক্ত মূল্য নিশ্চিত হয়। কিন্তু বাস্তবে অনেকেই লবণ কিনেও চামড়া সংরক্ষণ করতে পারছেন না, আবার কেউ কেউ লোকসানের আশঙ্কায় চামড়া কেনা থেকে বিরত থাকছেন–এমন তথ্যও মিলেছে।

পোস্তার লবণ ব্যবসায়ী সোহেল আহমেদ বলেন, ‘ট্যানারিগুলো আগের বছরের অর্ধেক দাম দিচ্ছে। তাই চামড়ার ব্যবসা থেকে সরে এসেছি।’

 

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *