৬৪ জেলার লড়াইয়ে মাঠে ফিরছে জাতীয় ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ

টাইমস স্পোর্টস
4 Min Read
বাফুফে ভবনে প্রেস কনফারেন্সে অতিথিরা। ছবি: বাফুফে

বাংলাদেশ ফুটবলে নতুন প্রাণ সঞ্চারের প্রত্যাশায় শুরু হচ্ছে জাতীয় ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ। তারুণ্যের উৎসব ২০২৫-এর অংশ হিসেবে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে আয়োজন করা হচ্ছে এ আসর। তিন বছর পর দেশের ফুটবল ভক্তরা আবারও দেখতে যাচ্ছেন জেলা ভিত্তিক এই বড় আয়োজন। বাফুফে ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রতিযোগিতার লোগো উন্মোচন করে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছে ক্রীড়া পরিষদ।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বাফুফের সহ-সভাপতি ও জেলা ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ আয়োজক কমিটির চেয়ারম্যান মো. ওয়াহিদ উদ্দিন চৌধুরী হ্যাপী, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব ড. শেখ মোহাম্মদ জোবায়েদ হোসেন, জনাব মো. আমিনুল ইসলাম, এনডিসি নির্বাহী পরিচালক (যুগ্ম সচিব), জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ এবং প্রধান অতিথি ছিলেন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মাহবুব-উল-আলম।

ওয়াহিদ উদ্দিন চৌধুরী হ্যাপী বলেন, ‘৩০ আগস্ট থেকে জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ শুরু হচ্ছে। ফাইনাল হবে নভেম্বরের ২৪ বা ২৫ তারিখে ঢাকায় জাতীয় স্টেডিয়ামে। এ সময় এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশনের সভাপতি শেখ সালমান বাংলাদেশ সফরে থাকবেন এবং আমরা চাই তাঁর উপস্থিতিতেই ফাইনাল আয়োজন করতে। জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপের মাঝপথে অনূর্ধ্ব-১৭ জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপও শুরু হবে।’

জাতীয় ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের উদ্বোধনী ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে মুন্সিগঞ্জ স্টেডিয়ামে, যেখানে মুখোমুখি হবে মুন্সিগঞ্জ ও মাদারীপুর জেলা দল। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। তবে বর্ষা মৌসুমের কারণে দেশের অনেক জেলা স্টেডিয়ামের মাঠ খেল উপযোগী নয়। ফলে সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি থেকে খেলা পুরো মাত্রায় শুরু হবে বলে জানিয়েছে আয়োজকরা।

২০০৮ সালে জেলা ক্রীড়া সংস্থা থেকে আলাদা হয়ে জেলা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন (ডিএফএ) গঠিত হলেও তাদের নিজস্ব মাঠ নেই। এজন্য স্থানীয় জেলা ক্রীড়া সংস্থার মাঠের উপর নির্ভর করতে হয়। ফলে অনেক জেলায় নিয়মিত লিগ আয়োজন সম্ভব হয় না। সচিব মাহবুব-উল-আলম এ বিষয়ে বলেন, ‘আমরা সমস্যার ব্যাপারে জানি। এজন্য জেলা প্রশাসকদের সঙ্গে অনলাইনে আলোচনা করেছি। মাঠ ব্যবহারের জন্য ইতোমধ্যেই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আশা করি কোনো জেলায় খেলা আয়োজনের ক্ষেত্রে সমস্যা হবে না।’

জাতীয় ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ, অনূর্ধ্ব-১৭ এবং নারী বয়সভিত্তিক প্রতিযোগিতা আয়োজনের জন্য সরকার ১০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে বাফুফেকে। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় ‘তারুণ্যের উৎসব’ উপলক্ষে মোট ২০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে, যার অর্ধেক দেওয়া হয়েছে ফুটবলে। সচিব মাহবুব-উল-আলম জানান, ‘অন্য ফেডারেশনগুলোকেও সহায়তা করা হবে, তবে ফুটবল দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা হওয়ায় এখানে বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে।’

৬৪ জেলা আটটি জোনে ভাগ হয়ে অংশ নেবে এ প্রতিযোগিতায়। প্রতিটি জোনের দল হোম অ্যান্ড অ্যাওয়ে ভিত্তিতে খেলবে। প্রথম রাউন্ড শেষে বিজয়ী ৩২ দল দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠবে। সেখান থেকেও একই পদ্ধতিতে খেলে নির্ধারিত হবে ১৬ দল। এরপর শুরু হবে নকআউট পর্ব। সব মিলিয়ে অনুষ্ঠিত হবে ১১২টি ম্যাচ।

তিন বছর পর ফের শুরু হচ্ছে জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ। অনেক জেলায় দীর্ঘদিন ধরে ফুটবল লিগ বন্ধ থাকায় জেলা দল গঠন নিয়ে সমস্যা দেখা দিয়েছে। তবে বাফুফের সহ-সভাপতি হ্যাপী আশাবাদী, ‘আমরা অতীতের আলোচনায় যাচ্ছি না। নতুন কমিটি নতুন উদ্যোগে কাজ করছে। সরকারের সহায়তায় আমরা এই টুর্নামেন্ট আয়োজন করছি। আশা করি এখান থেকে নতুন প্রতিভা বের হয়ে আসবে।’

অতীতে ফুটবলের উন্নয়ন তহবিলের সঠিক হিসাব নিয়ে সমালোচনা থাকলেও বর্তমান কমিটি স্বচ্ছতার আশ্বাস দিয়েছে। সম্প্রতি নির্বাহী কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে, ফুটবলের সব ধরনের আয়-ব্যয়ের জন্য আলাদা ব্যাংক হিসাব খোলা হবে।

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *