৩৬ বছর পর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচন। ফলে ক্যাম্পাসজুড়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা ছড়িয়ে পড়েছে। নতুন নেতৃত্ব বেছে নিতে মুখিয়ে আছেন তারা। ইতোমধ্যেই ছাত্র সংগঠনগুলো আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু করেছে, ঘোষিত হয়েছে ১১টি প্যানেল, পাশাপাশি রয়েছে স্বতন্ত্র প্রার্থী। সব মিলিয়ে আসন্ন নির্বাচনকে ঘিরে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস মিলছে।
শিক্ষার্থীদের মতে, অধিকাংশ পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে পারে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল সমর্থিত ‘ঐক্যবদ্ধ নতুন প্রজন্ম’ এবং বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত ‘সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট’-এর মধ্যে। তবে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন ছয়জন সহসভাপতি (ভিপি) প্রার্থী—ছাত্রদলের নূর উদ্দিন আবীর, শিবিরের মোস্তাকুর রহমান জাহিদ, গণতান্ত্রিক শিক্ষার্থী পর্ষদের ফুয়াদ রাতুল, ছাত্র অধিকার পরিষদের মেহেদী মারুফ, আধিপত্যবিরোধী ঐক্যের মেহেদী সজীব এবং ইতিহাসের প্রথম নারী ভিপি প্রার্থী সর্বজনীন শিক্ষার্থী সংসদের তাসিন খান।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যমতে, রাকসু, সিনেট ও হল সংসদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৯০৩ জন প্রার্থী। কেন্দ্রীয় সংসদে ২৪৮, সিনেটে ৫৮ এবং ১৭টি আবাসিক হলে ৫৯৭ প্রার্থী লড়ছেন। এর মধ্যে ৩৯ জন প্রার্থী ইতোমধ্যেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। রাকসুর ভিপি পদে প্রার্থী রয়েছেন ১৮ জন, জিএস পদে ১৩ জন এবং এজিএস পদে ১৬ জন।

প্রচারণায় প্রার্থীরা শিক্ষার্থীদের নানা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন—ক্লাস-পরীক্ষার অনিয়ম দূরীকরণ, র্যাগিং প্রতিরোধ, লাইব্রেরি ও আবাসিক হলে সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি, গরমকালে পানির সংকট ও মশার উৎপাত নিরসনসহ বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের আশ্বাস।
শেখ নূর উদ্দিন আবীর বলেন, ‘আমরা গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনার লড়াই করেছি। এবারও শিক্ষার্থীদের কণ্ঠস্বর হয়ে কাজ করব।’
মোস্তাকুর রহমান জাহিদ বলেন, ‘আমাদের প্যানেল নারী-পুরুষ, সংখ্যালঘু, সাংস্কৃতিক কর্মী, আহত জুলাইযোদ্ধা সবাইকে অন্তর্ভুক্ত করেছে।’
ফুয়াদ রাতুল বলেন, ‘আমাদের শক্তি অর্থ নয়, আন্দোলন আর শিক্ষার্থীদের পাশে থাকার অভিজ্ঞতা।’
তাসিন খান বলেন, ‘আমার কণ্ঠস্বর কোনো মতাদর্শের নয়, ছাত্রসমাজের। আমি চাই একটি স্বতন্ত্র ও দায়িত্বশীল রাকসু।’

রাকসুর প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক নজরুল ইসলাম জানিয়েছেন, ২৫ সেপ্টেম্বর ৯টি একাডেমিক ভবনের ১৭টি কেন্দ্রে ৯৯০টি বুথে হবে ভোট গ্রহণ। ভোট শেষে কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনে হবে গণনা এবং পুরো প্রক্রিয়া দেখানো হবে বাইরের বড় পর্দায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, ১৯৫৩ সালে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর প্রথম ছাত্র সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৫৬ সালে (১৯৫৬-১৯৫৭ শিক্ষা বর্ষের জন্য)। তখন এই সংসদের নাম ছিল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় স্টুডেন্টস ইউনিয়ন (রাকসু)। অধ্যাপক ইতরাৎ হোসেন জুবেরী উপাচার্য হিসেবে এই ছাত্র সংসদের সভাপতি ছিলেন। কোনো কোষাধ্যক্ষ ছিলেন না। ভিপি ছিলেন মুহ. মনিরুজ্জামান মিঞা এবং জিএস ছিলেন আব্দুল রাজ্জাক খান।
এরপর ১৯৫৭ সালে (১৯৫৭-১৯৫৮ শিক্ষা বর্ষের জন্য) ছাত্র সংসদ নির্বাচন পুনরায় অনুষ্ঠিত হয়। তখন উপাচার্য হিসেবে সভাপতি ছিলেন অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ। জিএস ছিলেন আবুল কালাম চৌধুরী এবং জিএস ছিলেন আব্দুল জব্বার খান। এরপর চার বছর বিরতি দিয়ে ১৯৬২ সাল থেকে আবার রাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে থাকে। ১৯৬২ সালে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ রাকসু নামে যাত্রা শুরু করে। এরপর ১৬ বার নির্বাচনের আয়োজন করা হয়।
১৯৮৯ সালে রাকসুর সর্বশেষ নির্বাচন হলেও তার আগের কয়েক দশকে এখান থেকে উঠে এসেছেন বর্তমান জাতীয় রাজনীতির বেশ কিছু পরিচিত মুখ। ইতিহাসের পাতায় তারা রাকসুতে যেভাবে নেতৃত্ব দিয়েছেন, ঠিক তেমনই দৃঢ় ভূমিকা রেখেছেন জাতীয় রাজনীতির মঞ্চেও।