সেনাবাহিনী নিয়ে হাসনাতের বক্তব্যে ‘দ্বিমত’ সারজিসের

admin
By admin
8 Min Read
জাতীয় নাগরিক পার্টির মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ ও সারজিস আলম। ফাইল ছবি

জাতীয় নাগরিক পার্টির মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ সম্প্রতি ফেসবুকে যে পোস্ট দিয়েছেন, তাতে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে সেনাবাহিনী সদর দপ্তর। ‘রিফাইন্ড (সংশোধিত) আওয়ামী লীগ’ গঠনে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে চাপ দেওয়ার বিষয়সহ হাসনাতের বক্তব্য ‘অত্যন্ত হাস্যকর’ বলে মনে করে সেনাসদর।

সুইডেনভিত্তিক নেত্র নিউজের শনিবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে সেনাসদরের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, হাসনাত আবদুল্লাহর পোস্ট ‘সম্পূর্ণ রাজনৈতিক স্ট্যান্টবাজি বৈ অন্য কিছু নয়’।

এদিকে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম ‘কিছুটা দ্বিমত’ প্রকাশ করে দেয়া ফেসবুক পোস্টে হাসনাত আবদুল্লাহর বক্তব্যের প্রায় বিপরীত তথ্য তুলে ধরেছেন। তিনি স্পষ্ট করে লিখেছেন, ‘সেদিন (১১ মার্চ) সেনানিবাসে আমাদের ডেকে নেওয়া হয়নি।’

সারজিস লিখেছেন, ‘যেভাবে এই কথাগুলো ফেসবুকে স্ট্যাটাসের মাধ্যমে এসেছে এই প্রক্রিয়াটি আমার সমীচীন মনে হয়নি বরং এর ফলে পরবর্তীতে যেকোনো স্টেকহোল্ডারের সাথে আমাদের গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা আস্থার সংকটে পড়তে পারে।’

গত শুক্রবার হাসনাত আবদুল্লাহ এক পোস্টে লেখেন, ‘কিছুদিন আগে আমি আপনাদের বলেছিলাম যে “রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ” নামে নতুন একটি ষড়যন্ত্র নিয়ে আসার পরিকল্পনা চলছে। এই পরিকল্পনা পুরোপুরি ভারতের। সাবের হোসেন চৌধুরী, শিরিন শারমিন, তাপসকে সামনে রেখে এই পরিকল্পনা সাজানো হচ্ছে।

‘আমিসহ আরও দুজনের কাছে ক্যান্টনমেন্ট থেকে এই পরিকল্পনা উপস্থাপন করা হয় ১১ই মার্চ দুপুর ২:৩০–এ। আমাদেরকে প্রস্তাব দেওয়া হয় আসন সমঝোতার বিনিময়ে আমরা যেন এই প্রস্তাব মেনে নিই। আমাদেরকে বলা হয়, ইতোমধ্যে একাধিক রাজনৈতিক দলকেও এই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে—তারা শর্ত সাপেক্ষে আওয়ামী লীগ পুনর্বাসনে রাজি হয়েছে। একটি বিরোধী দল থাকার চেয়ে একটি দুর্বল আওয়ামী লীগসহ একাধিক বিরোধী দল থাকা নাকি ভালো। ফলশ্রুতিতে আপনি দেখবেন গত দুই দিন মিডিয়াতে আওয়ামী লীগের পক্ষে একাধিক রাজনীতিবিদ বয়ান দেওয়া শুরু করেছে।’

হাসনাতের এ বক্তব্যের সূত্রে শনিবার নেত্র নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়, গতকাল নেত্র নিউজকে দেওয়া সেনাসদরের এক বিবৃতিতে স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে যে সেনানিবাসে খোদ সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামানের সঙ্গেই ১১ মার্চ বৈঠকটি হয়েছিল। তবে হাসনাত আবদুল্লাহকে “ডেকে নিয়ে যাওয়া এবং আওয়ামী লীগের পুনর্বাসনের বিষয় নিয়ে তাদেরকে প্রস্তাব বা চাপ প্রয়োগে”র অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। বরং হাসনাত আবদুল্লাহ ও তাঁর দলের আরেক মুখ্য সমন্বয়ক সারজিস আলমের আগ্রহেই ওই বৈঠকটি হয়েছিল বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।

‘বিষয়টি নিয়ে নেত্র নিউজ যোগাযোগ করলে একজন মুখপাত্রের মাধ্যমে বক্তব্য দেয় সেনাসদর। হাসনাত আবদুল্লাহর পোস্টকে “সম্পূর্ণ রাজনৈতিক স্ট্যান্টবাজি বৈ অন্য কিছু নয়” বলেও মন্তব্য করা হয়েছে সেনাসদরের বিবৃতিতে। এ ছাড়া ২৭ বছর বয়সী এই ছাত্রনেতার বক্তব্যকে “অত্যন্ত হাস্যকর ও অপরিপক্ব গল্পের সম্ভার” হিসেবেও আখ্যা দিয়েছে সেনাবাহিনী।’

নেত্র নিউজ দাবি করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টির পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন ডাকা হলে সেখানে নেত্র নিউজের একজন প্রতিবেদক হাসনাত আবদুল্লাহকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করেন। জানতে চান, সেনানিবাসে তিনি যে বৈঠকটির কথা বলছেন, তা কি সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের সঙ্গে হয়েছিল কি না। কিন্তু এই বিষয়ে তিনি সরাসরি জবাব দিতে অস্বীকৃতি জানান।
হাসনাত বলেন, ‘আমি তো সেখানে “ক্যান্টনমেন্ট” উল্লেখ করেছি, আপনারা কথা বলতে পারেন সেখানে।’

নেত্র নিউজের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, তাদের কাছে পাঠানো বিবৃতিতে সেনাসদর নিশ্চিত করে জানিয়েছে যে সেনাপ্রধানের সঙ্গেই ওই বৈঠকটি হয়েছিল, তবে ওই বৈঠক ছাত্রনেতাদের আগ্রহেই হয়েছিল বলে সেখানে উল্লেখ করা হয়।

সেনাসদরের বিবৃতি উল্লেখ করে নেত্রর প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘হাসনাত আবদুল্লাহ এবং সারজিস আলম দীর্ঘদিন যাবৎ সেনাবাহিনী প্রধানের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের জন্য ইচ্ছা পোষণ করছিলেন। পরবর্তীতে সারজিস আলম ১১ই মার্চ ২০২৫ তারিখে সেনাপ্রধানের মিলিটারি এডভাইজারকে ফোন দিয়ে সেনাপ্রধানের সাথে সাক্ষাতের জন্য সময় চান। এর প্রেক্ষিতে মিলিটারি এডভাইজার তাদেরকে সেনাসদরে আসার জন্য বলেন। অতঃপর ১১ই মার্চ দুপুরে সারজিস আলম এবং হাসনাত আবদুল্লাহ সেনাসদরে না এসে সরাসরি সেনাভবনে সেনাবাহিনীর প্রধানের সঙ্গে দেখা করার জন্য অপেক্ষা করেন। পরবর্তীতে সেনাপ্রধান অফিস কার্যক্রম শেষ করে সেনা ভবনে এসে তাদের সঙ্গে দেখা করেন।’

হাসনাত আবদুল্লাহর বক্তব্য ও নেত্র নিউজের প্রতিবেদন বিষয়ে আন্তবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) গণমাধ্যমে গতকাল রোববার পর্যন্ত প্রেস রিলিজ দেয়নি।

হাসনাতের বক্তব্যে ‘কিছুটা দ্বিমত’ সারজিসের

সেনাবাহিনীকে জড়িয়ে হাসনাত আবদুল্লাহ সম্প্রতি ফেসবুকে যে পোস্ট দিয়েছেন, তাতে ‘কিছুটা দ্বিমত’ প্রকাশ করে পোস্ট দিয়েছে এনসিপির আরেক সংগঠক সারজিস আলম। রোববার দেয়া পোস্টে সারজিস আলম লিখেছেন, ‘সেদিন (১১ মার্চ) সেনানিবাসে আমাদের ডেকে নেওয়া হয়নি।’

‘যেভাবে এই কথাগুলো ফেসবুকে স্ট্যাটাসের মাধ্যমে এসেছে এই প্রক্রিয়াটি আমার সমীচীন মনে হয়নি বরং এর ফলে পরবর্তীতে যেকোনো স্টেকহোল্ডারের সাথে আমাদের গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা আস্থার সংকটে পড়তে পারে।’

‘সেদিন আমি এবং হাসনাত সেনাপ্রধানের সাথে গিয়ে কথা বলি। আমাদের সাথে আমাদের দলের গুরুত্বপূর্ণ আরেকজন সদস্যেরও যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু যাওয়ার পূর্বমুহূর্তে ব্যক্তিগত সমস্যার কারণে তিনি যেতে পারেননি। প্রথমেই স্পষ্ট করে জানিয়ে রাখি সেদিন সেনানিবাসে আমাদের ডেকে নেওয়া হয়নি বরং সেনাপ্রধানের মিলিটারি এডভাইজারের সাথে যখন প্রয়োজন হতো তখন মেসেজের মাধ্যমে আমাদের কিছু জিজ্ঞাসা ও উত্তর আদান-প্রদান হতো।

‘যেদিন সেনাপ্রধান পিলখানা হত্যাকাণ্ড দিবসে অনেকটা কড়া ভাষায় বক্তব্য দিলেন এবং বললেন “এনাফ ইজ এনাফ” তখন আমি সেনাপ্রধানের মিলিটারি এডভাইসরকে জিজ্ঞাসা করি আপনাদের দৃষ্টিতে অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু দেখছেন কিনা? সেনাপ্রধানের বক্তব্য তুলনামূলক straight-forward এবং harsh মনে হচ্ছে। তিনি আমাকে বললেন তোমরা কি এ বিষয়ে সরাসরি কথা বলতে চাও? আমি বললাম- বলা যেতে পারে। এরপরে সেদিন সেনাপ্রধানের সাথে আমাদের সাক্ষাৎ হয়। সেনাভবনে সেই রুমে আমরা তিনজনই ছিলাম। সেনাপ্রধান, হাসনাত এবং আমি।

‘মানুষ হিসেবে যেকোনো ব্যক্তি বা ব্যক্তির অভিমতকে একেকজন একেকভাবে অবজার্ভ করে। হাসনাত সেদিন তার জায়গা থেকে যেভাবে সেনাপ্রধানের বক্তব্যকে অবজার্ভ ও রিসিভ করেছে এবং ফেসবুকে লিখেছে আমার সেক্ষেত্রে কিছুটা দ্বিমত আছে।

‘আমার জায়গা থেকে আমি সেদিনের বক্তব্যকে সরাসরি “প্রস্তাব”’ দেয়ার আঙ্গিকে দেখিনা বরং “সরাসরি অভিমত প্রকাশের” মতো করে দেখি। “অভিমত প্রকাশ” এবং “প্রস্তাব দেওয়া“ দুটি বিষয়ের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। যদিও পূর্বের তুলনায় সেদিন সেনাপ্রধান অনেকটা স্ট্রেইথ-ফরোয়ার্ড ভাষায় কথা বলছিলেন। পাশাপাশি “রিফাইন্ড আওয়ামী লীগের” জন্য “চাপ দেওয়ার” যে বিষয়টি এসেছে সেখানে “চাপ দেওয়া হয়েছে” এমনটি আমার মনে হয়নি। বরং রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ না আসলে দীর্ঘ মেয়াদে দেশের পরিস্থিতি এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে সমস্যার সৃষ্টি হবে সেটা তিনি অতি আত্মবিশ্বাসের সাথে বলছিলেন।

‘হাসনাতের বক্তব্যে যে টপিকগুলো এসেছিল, যেমন- “রিফাইন্ড আওয়ামীলীগ, সাবের হোসেন, শিরিন শারমিন চৌধুরী, সোহেল তাজ; এসব নিয়ে কথা হয়েছিল। আওয়ামী লীগ ফিরে আসবে কিনা, এই ইলেকশনে আওয়ামী লীগ থাকলে কি হবে না থাকলে কি হবে, আওয়ামীলীগ এই ইলেকশন না করলে কবে ফিরে আসতে পারে কিংবা আদৌ আসবে কিনা এসব বিষয় নিয়ে কথা হয়েছিল। এসব সমীকরণে দেশের উপরে কি প্রভাব পড়তে পারে, স্থিতিশীলতা কিংবা অস্থিতিশীলতা কোন পর্যায়ে যেতে পারে সেসব নিয়ে কথা হয়েছিল।

‘কিন্তু যেই টোনে হাসনাতের ফেসবুক লেখা উপস্থাপন করা হয়েছে আমি মনে করি- কনভারসেশন ততটা এক্সট্রিম ছিল না। তবে অন্য কোন একদিনের চেয়ে অবশ্যই স্ট্রেইথ-ফরওয়ার্ড এবং সো-কনফিডেন্ট ছিল। দেশের স্থিতিশীলতার জন্য রিফাইন্ড আওয়ামীলীগের ইলেকশনে অংশগ্রহণ করা যে প্রয়োজনীয় সেই বিষয়ে সরাসরি অভিমত ছিল।”

‘“হাসনাত না ওয়াকার” এই ন্যারেটিভ এবং স্লোগানকে আমি প্রত্যাশা করিনা। হাসনাতের জায়গা ভিন্ন এবং সেনাপ্রধান জনাব ওয়াকারুজ্জামানের জায়গাও ভিন্ন। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সাথে জাতীয় নাগরিক পার্টি অন্যান্য রাজনৈতিক দল কিংবা জনগণকে মুখোমুখি দাঁড় করানোও কখনো প্রাসঙ্গিক নয়। পাশাপাশি সেনা প্রধানের পদত্যাগ নিয়ে যে কথা দুয়েক জায়গায় আসছে সেটিও আমাদের বক্তব্য নয়।

‘কিন্তু যেভাবে এই কথাগুলো ফেসবুকে স্ট্যাটাসের মাধ্যমে এসেছে এই প্রক্রিয়াটি আমার সমীচীন মনে হয়নি বরং এর ফলে পরবর্তীতে যেকোনো স্টেকহোল্ডারের সাথে আমাদের গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা আস্থার সংকটে পড়তে পারে।’

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *