রাজধানীর গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে ভয়াবহ জঙ্গি হামলার ৯ বছর পূর্ণ হল মঙ্গলবার। ২০১৬ সালের ১ জুলাই সংঘটিত এ হামলা দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ জঙ্গি হামলা হিসেবে বিবেচিত হয়। এ হামলায় বিদেশিসহ মোট ২২ জন নিহত হয়েছিলেন। নিহতদের মধ্যে ইতালি, জাপান, ভারত এবং যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকরা ছিলেন। এছাড়া, হামলায় দুজন পুলিশ কর্মকর্তাও প্রাণ হারান এবং অনেকে আহত হন।
২০১৬ সালের সেদিন গুলশান-২ এর ৭৯ নম্বর সড়কের ৫ নম্বর বাড়িতে অবস্থিত হলি আর্টিজান বেকারিতে দেশি-বিদেশি বহু মানুষ রাতের খাবারের জন্য জড়ো হয়েছিলেন। রাত প্রায় ৯টার দিকে কয়েকজন সশস্ত্র যুবক হঠাৎ রেস্টুরেন্টে ঢুকে বিদেশিদের খুঁজতে শুরু করে এবং মুহুর্মুহু গুলিবর্ষণ করে আতঙ্ক ছড়িয়ে দেয়। ওই হামলায় দুইজন পুলিশ কর্মকর্তা ও বিদেশিসহ মোট ২৯ জন নিহত হন।
পরবর্তীতে সেনাবাহিনীর প্যারা-কমান্ডো দলের ‘অপারেশন থান্ডার বোল্ট’ অভিযানে পাঁচ হামলাকারী নিহত হয়। এরা হলেন- রোহান ইবনে ইমতিয়াজ, নিবরাস ইসলাম, মীর সামীহ মোবাশ্বীর, শফিকুল ইসলাম উজ্জ্বল এবং খায়রুল ইসলাম পায়েল।
ঘটনার পর গুলশান থানায় দায়ের হওয়া মামলার তদন্তের দায়িত্ব নেয় ঢাকা মহানগর পুলিশের সিটিটিসি ইউনিট। চার বছরের তদন্ত শেষে আটজনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করা হয়। এদের মধ্যে শহীদুল ইসলাম খালেদ ও মামুনুর রশিদ রিপন পলাতক ছিলেন। পরবর্তীতে বড় মিজানকে মামলার দায়মুক্তি দেওয়া হয়, বাকি সাতজনের বিরুদ্ধে ২০২০ সালের ২৭ নভেম্বর ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনাল মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন।
হাইকোর্টের ডেথ রেফারেন্স, আপিল এবং জেল আপিলের শুনানি শেষে ২০২৩ সালের ১০ অক্টোবর বিচারপতি সহিদুল করিম এবং বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের বেঞ্চ সাত আসামির সবাইকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেন।
হামলার দুই বছর পর ঘটনাস্থলের ভবনটি ভেঙে ফেলা হয় এবং সেখানে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়। প্রতিবছর নিহতদের স্মরণে সরকার, জাপান ও ইতালিসহ বিভিন্ন দেশের দূতাবাস-হাইকমিশন ও সাধারণ মানুষের পক্ষ থেকে সেখানে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
এছাড়া হামলায় শহীদ হওয়া ডিবির তৎকালীন সহকারী কমিশনার মো. রবিউল ইসলাম এবং বনানী থানার তৎকালীন ওসি মো. সালাহউদ্দিন আহম্মেদকে সম্মান জানাতেও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এ দিনে উপস্থিত থাকেন।