অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস দেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখার জোর তাগাদা দিয়েছেন। তিন বাহিনীর প্রধানসহ উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে তিনি এ বিষয়ে আলোকপাত করেন।
দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে বসেন প্রধান উপদেষ্টা।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘মঙ্গলবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।’
এই বৈঠক এমন এক সময় অনুষ্ঠিত হয়, যখন বিভিন্ন সংগঠনের নিয়মিত বিক্ষোভ রাজধানীকে প্রতিদিন অচল করে তুলছে। দক্ষিণ-পূর্ব সীমান্তে মিয়ানমারের আরাকান অঞ্চলের জন্য মানবিক করিডোর অনুমোদনের খবরে যখন রাজনৈতিক উত্তেজনা বাড়ছে। বিশেষ করে প্রতিরক্ষা বাহিনী এই করিডোর অনুমোদনের বিরোধিতা করছে, যা গত মাসে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক শীর্ষ কর্মকর্তা প্রকাশ করেন।
প্রেস উইংয়ের বিবৃতিতে আরও বলা হয়, বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান।
সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ নজমুল হাসান এবং বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার মার্শাল হাসান মাহমুদ খানসহ অন্যান্য সিনিয়র কর্মকর্তারাও বৈঠকে অংশ নেন।
বৈঠকে সারাদেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা হয়। জ্যেষ্ঠ নিরাপত্তা কর্মকর্তারা এ বিষয়ে রিপোর্ট উপস্থাপন করেন। প্রধান উপদেষ্টা রাজধানীসহ দেশব্যাপী নিরাপত্তা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার ক্ষেত্রে নিরাপত্তা বাহিনীর প্রচেষ্টার প্রশংসা করেন বলে জানিয়েছে প্রেস উইং।
এদিকে ঢাকার রাজপথ গত কয়েকদিনে পরিণত হয়েছে লাগাতার বিক্ষোভের মঞ্চে, যেখানে প্রতিদিনের আন্দোলনে রাজধানী কার্যত অচল হয়ে পড়ছে। শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে চাকরিচ্যুত সামরিক সদস্য, পুলিশের ক্যাডেট এসআই বিক্ষোভ করছে রাজপথে। নিষিদ্ধ রাজনৈতিক দলের কর্মীরাও এখন বিক্ষোভে শামিল হচ্ছেন, ফলে গত কয়েক সপ্তাহে নাগরিক অস্থিরতা নাটকীয়ভাবে বেড়েছে।
চাকরিচ্যুত সেনা সদস্যদের একটি দল রোববার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে একত্রিত হয়ে চাকরিতে পুনর্বহালের দাবি জানান। পরদিন মাঠে নামে পুলিশের বাদ পড়া শতাধিক ক্যাডেট এসআই। এর আগে ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টি ও কিছু ইসলামপন্থী দলের বিক্ষোভের মধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ১০ মে বাংলাদেশের প্রাচীনতম রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের সব ধরনের কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। সরকারি নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও দলটির সমর্থকেরা ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছে।
এছাড়া জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যখন তাদের শিক্ষা-সংক্রান্ত দাবি আদায়ে আন্দোলন শেষ করেন, তখন মেয়র মনোনীত ইশরাক হোসেনের সমর্থকেরা নগর ভবন অবরোধ করেন। ঢাকার দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে ইশরাকের শপথ নিতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ তুলে এই বিক্ষোভ মঙ্গলবার টানা ষষ্ঠ দিনে পৌঁছেছে। আন্দোলনকারীরা নগর ভবনের প্রধান প্রবেশদ্বার অবরোধ করে একটি অস্থায়ী মঞ্চ নির্মাণ করেছে।
অন্যদিকে বিএনপির ছাত্রসংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কর্মীরা শাহবাগ মোড়ে বিক্ষোভ করে তাদের নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যায় দায়ীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়ে আসছে। দাবি পূরণ না হলে তারা প্রধান উপদেষ্টা মোহাম্মদ ইউনুসের সরকারি বাসভবন যমুনা ঘেরাও করবে বলে হুমকি দিয়েছে।
এরই মাঝে মঙ্গলবার শত শত গার্মেন্টস শ্রমিক, যারা টিএনজেড গ্রুপের কর্মী মিছিল করে যান যমুনার দিকে। তারা বকেয়া পাওনার দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করেছে। জানা যায়, টিএনজেড গ্রুপের ১,০৫৮ শ্রমিকের প্রাপ্য টাকার পরিমাণ প্রায় ২০.৮৬ কোটি টাকা।
রাজধানীর উত্তেজনাকর এসব মিছিল, সমাবেশের পাশাপাশি বিচ্ছিন্নভাবে ঘটে চলেছে অপরাধমূলক ঘটনা। পাশাপাশি সীমান্ত উত্তেজনার ঘটনাও রয়েছে ভারতের পুশইন এবং মিয়ানমারের রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঘিরে। এমন পরিস্থিতিতে প্রধান উপদেষ্টার উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে নজর ছিল সকলের।