সুইপ-রিভার্স সুইপ: গলে শান্তর স্পিন দুর্গ জয়

টাইমস স্পোর্টস
3 Min Read
সুইপ-রিভার্স সুইপে স্পিন সামলেছেন শান্ত। ছবি: শ্রীলংকা ক্রিকেট

উপমহাদেশের টার্নিং উইকেটে স্পিনারদের খেলতে ব্যাটারদের সবচেয়ে মোক্ষম অস্ত্র কোনটা? রান বের করতে সুইপ কিংবা রিভার্স সুইপেই ভরসা রাখেন ব্যাটাররা। কারণ ফ্রন্টফুট কিংবা ব্যাকফুটে খেলতে গিয়ে বলের লাইন মিস করে এলবিডব্লিউ কিংবা বোল্ড হওয়ার ঝুঁকিটাও থেকে যায়। 

ড্র’তে নিষ্পত্তি হওয়া বাংলাদেশ-শ্রীলংকার গল টেস্টে বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তও শ্রীলংকার দুই স্পিনার প্রবাথ জয়সূরিয়া ও সব্যসাচী থারিন্দু রথনায়েকের টার্ন আর আচমকা বাউন্সের সাথে মানিয়ে নিয়ে প্রথম বাংলাদেশি অধিনায়ক হিসেবে দুই ইনিংসেই করেছেন সেঞ্চুরি। বিশেষত দ্বিতীয় ইনিংসে গলের উইকেটে বল যখন ঘুরছিল, শান্ত তখন রান বের করার জন্য বেছে নিয়েছেন সুইপ আর রিভার্স সুইপকে।

প্রথম ইনিংসে তথা প্রথম তিন দিন গলের উইকেটে স্পিনারদের জন্য তেমন কোনো সাহায্য না থাকলেও শেষ দুই দিন স্পিনাররাই ছিলেন ‘শো স্টপার’। বাংলাদেশের প্রথম ইনিংসে শ্রীলংকার বোলাররা তেমন সাহায্য না পাওয়াতে শান্তও রান করেছেন বেশ স্বাচ্ছন্দ্যে। তবে স্পিনারদের সামলেছেন দারুণ হাতে। শ্রীলংকা সফরে যাওয়ার আগে স্পিনের জন্যই আলাদা করে প্রস্তুতি নিয়েছেন। শান্তর অনুশীলনের একটা বড় অংশজুড়ে ছিল সুইপ আর রিভার্স সুইপ। দ্বিতীয় ইনিংসে সেঞ্চুরিও ছুঁয়েছেন রিভার্স সুইপেই। 

গলের মতো স্পিন সহায়ক উইকেটে সুইপ-রিভার্স সুইপের মতো শট হতে পারে একজন ব্যাটারের জন্য সেরা ডিফেন্স মেকানিজম। একইসাথে যেটা স্কোরিং অপশনও বটে। 

সুইপ শটে দুই ইনিংসের ৩-% রান এসেছে শান্তর ব্যাট থেকে। ছবি: শ্রীলংকা ক্রিকেট

গল টেস্টে ১৪৮ ও ১২৫  রানের দুই ইনিংস মিলিয়ে ৬০% রানই শান্ত বের করেছেন অফ সাইড দিয়ে। কভার, পয়েন্ট আর মিড অফ ছিল তার স্কোরিং জোন।  সিংগেল-ডাবলসের বেশিরভাগই এসেছে সেসব এরিয়া থেকে। লেগ সাইড রিজিওনের মিড উইকেট-স্কয়ার লেগ থেকে শান্ত তুলেছেন ৩০% রান, যেখানে বেশিরভাগ শটই ছিল সুইপ বা ল্যাপ সুইপ; বিশেষত বাঁহাতি স্পিনার জয়সূরিয়ার বিপক্ষে। আর রিভার্স সুইপ থেকে করেছেন বাকি ১০%।  

সাধারণত টেস্টে বোলাররা সাফল্য পান টানা এক জায়গায় বল করে। এখানেই বাজিমাৎ করেছেন শান্ত। বারবার সুইপ-রিভার্স সুইপের সাথে ‘ভি’ ব্যাটে পয়েন্ট এরিয়া দিয়ে বল পাঠিয়ে বোলারদের লাইন-লেংথ বদলাতে বাধ্য করেছেন। দ্বিতীয় ইনিংসে ফুট মুভমেন্ট ছিল দেখার মতো। গুড লেংথে পড়া একটু ফ্লাইটেড ডেলিভারিগুলো খেলেছেন ফ্রন্টফুটে পপিং ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে। বাইরে পড়ে টার্ন করে ভেতরে আসা ডেলিভারিতে রান বের করেছেন ব্যাকফুটে ভর করে।  

পয়েন্ট-কভার অঞ্চল থেকে সবচেয়ে বেশি ৬০% রান পেয়েছেন শান্ত। ছবি: শ্রীলংকা ক্রিকেট

ট্যাকটিক্যাল দিক থেকে শান্ত ছিলেন স্পিনের প্রতি আলাদা মনোযোগী। স্পিনের বিপক্ষে রান করার জন্য শান্ত বেছে নেন কভার, মিড উইকেট আর ফাইন লেগকে। আর শট সিলেকশনেও বৈচিত্র্য রেখেছেন, যেখানে তাকে সাহায্য করেছে তার সফট হ্যান্ড ব্যাটিং টেকনিক। এ কারণে বারবার ফিল্ড প্লেসিং বদলাতে হয়েছে লংকানদের। টানা সুইপ-রিভার্স সুইপ বাউন্ডারি আদায় করায়, শর্ট ফাইন আর শর্ট থার্ডম্যানের ফিল্ডারদের সরিয়ে নেয়া হয়েছে ডিপে।  

শান্ত এবং বাংলাদেশের বাকি ব্যাটারদের জন্য আরো একটা স্পিন চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে কলম্বোর সিংহলিজ স্পোর্টস গ্রাউন্ডে দ্বিতীয় টেস্টে। এই মাঠে শুরুতে কিছুটা সিম মুভমেন্ট থাকলেও ম্যাচের দৈর্ঘ্য বাড়ার সাথে সাথে লড়াই জমিয়ে তোলেন স্পিনাররা। 

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *