আফগানিস্তানে স্বাধীন সাংবাদিকতার ওপর দমন-পীড়ন আরও বাড়িয়েছে তালেবান প্রশাসনের গোয়েন্দা সংস্থা ‘জেনারেল ডিরেক্টরেট অব ইন্টেলিজেন্স’ (জিডিআই)। দেশজুড়ে একের পর এক সাংবাদিককে আটকের পাশাপাশি হুমকি-ধমকিও দেওয়া হচ্ছে।
সর্বশেষ ভুক্তভোগী হলেন সাংবাদিক সুলাইমান রাহিল। ৫ মে কোনো কারণ বা অভিযোগ ছাড়াই তাকে আটক করে জিডিআই— এমন তথ্য জানিয়েছে কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস (সিপিজে)।
সংস্থাটির এশিয়া কর্মসূচির সমন্বয়ক বেহ লিহ ই বলেন, ‘সুলাইমান রাহিল হলেন আরও এক সাংবাদিক যাকে কোনো কারণ ছাড়াই জিডিআই আটক করেছে। তালেবানরা স্বাধীন সাংবাদিকতার প্রতি একদমই সহনশীল নয়—তারা শুধু নিজেদের সেন্সর করা গল্প প্রচার করতে চায়।’
সুলাইমান রাহিল ‘রেডিও খুশাল’ নামে একটি স্বাধীন রেডিওর পরিচালক। ফেসবুকে দুই দরিদ্র নারীর দুর্দশা নিয়ে একটি ভিডিও প্রকাশের পর তাকে গজনি শহর থেকে আটক করা হয়।
এর আগে ১৪ এপ্রিল কাবুলে জিডিআই এজেন্টরা সাংবাদিক সাইয়েদ রাশেদ কাশেফিকে আটক করে।
এ ধরনের নিপীড়ন শুধু ব্যক্তি পর্যায়েই সীমাবদ্ধ নয়। ২০২৪ সালের ৪ ডিসেম্বর কাবুলের ‘আরেজো টিভি’র অফিসে অভিযান চালিয়ে সাতজন সাংবাদিক ও কর্মীকে আটক করে জিডিআই। সেসময় নারী সাংবাদিকদের জোর করে বের করে দেওয়ার পাশাপাশি অফিস সিলগালা করে দেওয়া হয়।
২০২১ সালে তালেবানরা ক্ষমতায় ফেরার পর থেকে আফগানিস্তানে গণমাধ্যমের ওপর নিপীড়ন বাড়ছে। জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশটিতে সাংবাদিকেরা অস্পষ্ট নিয়ম ও ধরপাকড়ের হুমকির মধ্যে কাজ করছেন।
সিপিজে জানিয়েছে, সাংবাদিকদের ওপর সেন্সরশিপ, হামলা, বেআইনি গ্রেপ্তার এবং বিশেষ করে নারী সাংবাদিকদের ওপর নানা বিধিনিষেধ আরোপের মাধ্যমে গণমাধ্যমকে দমন করা হচ্ছে। এতে গণতান্ত্রিক অধিকার এবং তথ্য জানার স্বাধীনতা হুমকির মুখে পড়েছে।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তালেবান সরকারের কাছে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষার আহ্বান জানালেও জিডিআই এর চলমান তৎপরতা ভিন্ন চিত্রই তুলে ধরছে।
রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস-এর ২০২৫ সালের প্রেস ফ্রিডম সূচকে আফগানিস্তানের অবস্থান ১৮০টি দেশের মধ্যে ১৭৫তম, স্কোর মাত্র ১৭.৮৮। এতে দেখা যায়, তালেবান শাসনের অধীনে সাংবাদিকদের জন্য দেশটি হয়ে উঠেছে এক ভয়াবহ দমন-পীড়নের ক্ষেত্র।