ঈদের আনন্দ ছেয়ে গেছে বিষাদে, পরিবারগুলোতে নেমেছে শোকের মাতম। ঈদযাত্রা শুরুর পর গত ৯ দিনে দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে অন্তত ১৩৪ জনের। বুধবার চট্টগ্রামে একটি ভয়াবহ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ১০ জনের।
কক্সবাজার থেকে বুধবার চট্টগ্রাম যাচ্ছিল একটি বাস। মহাসড়কের একটি বাঁকে এসে চালক হার্ডব্রেক করলে বাসটির সামনের অংশ কিছুটা ঘুরে যায়। তখন উল্টো পাশ থেকে কক্সবাজারমুখী এক মাইক্রোবাসের সঙ্গে বাসটির সংঘর্ষ হয়। একই সময় দুর্ঘটনাকবলিত মাইক্রোবাসটিকে পেছন থেকে আরেকটি মাইক্রোবাস ধাক্কা দেয়।
চট্টগ্রামের লোহাগাড়ার চুনতি জাঙ্গালিয়া এলাকার বুধবার সকাল ৭টার দিকে এই দুর্ঘটনা ঘটে। বিকেল ৪টায় শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এতে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। দোহাজারী হাইওয়ে থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবদুল মতিন এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
একই এলাকায় টানা ৩ দিনে তৃতীয় দুর্ঘটনা। লোহাগাড়ার চুনতি জাঙ্গালিয়া এলাকায় সোমবার ও মঙ্গলবার আলাদা আরো দুটি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। সোমবার সকাল সোয়া ৭টার দিকে যাত্রীবাহী বাস ও মিনিবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে পাঁচ জনের মৃত্যু হয়। আহত হন আরো ৯ জন। আর মঙ্গলবার ভোররাত ৪টার দিকে পর্যটকবাহী দুটি মাইক্রোবাস উল্টে ৯ যাত্রী আহত হন।
এদিকে অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীর অস্ত্রপচারের জন্য ছুটি নিয়ে বাড়ি যাচ্ছিলেন পুলিশের কনস্টেবল রনি সিকদার। কিন্তু নবজাতক সন্তানকে তার আর দেখা হয়নি। টাঙ্গাইল সদর উপজেলার শাহানশাহগঞ্জে নিজ বাড়িতে যাওয়ার পথে গাজীপুরের কালিয়াকৈরে সড়ক দুর্ঘটনায় তিনি মারা যান। মঙ্গলবার রাত ৮টায় তাঁর ছেলের জন্ম হয়। আর রাত ৯টায় তাঁকে স্থানীয় কবরস্থানে দাফন করা হয়।
শুধু এই কয়েকটি দুর্ঘটনা নয়। ঈদের আনন্দ হারিয়ে গেছে এমন আরো শত পরিবারের। প্রিয়জনকে কাছে পাওয়ার আকাঙ্ক্ষায় বিভোর হয়ে থাকা বুক চোখের জলে ভাসছে। আনন্দের উঠান ছেয়ে আছে বিষাদের বেদনায়।
গত ২৫ মার্চ থেকে ২ এপ্রিল পর্যন্ত ৯ দিনে সারা দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় অন্তত ১৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এতে দিনে গড়ে ১৫ জন সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। মোট ১০৭টি দুর্ঘটনা চিহ্নত করা গেছে। এসব দুর্ঘটনায় অন্তত আরো ১৯৬ জন আহত হয়েছেন।
সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) তথ্য বলছে, ঈদের দিন (৩১ মার্চ) সারা দেশে ১৮টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এতে আরো ৩৩ আহত হয়েছেন। ঈদ যাত্রা ২৫ মার্চ থেকে শুরু করলে ৩১ মার্চ পর্যন্ত সরকারি হিসাবেই ৯১ জনের মৃত্যু হয়েছে। ৮৪টি দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন আরো ১৮১ জন।
সারা দেশ থেকে প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যে মঙ্গলবার থেকে বুধবার দুপুর পর্যন্ত সড়ক দুর্ঘটনায় আরো ৪৩টি মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে। এই দুই দিনে ২৩টি দুর্ঘটনায় ১৫ জন আহত হয়েছেন বলে জানা যায়।
প্রাথমিকভাবে দুর্ঘটনার ধরণ বিশ্লেষণে দেখা গেছে, যানের বেপরোয়া গতি, মুখোমুখি সংঘর্ষ এবং মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় মৃত্যু বেশি হয়েছে।
সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে কাজ করা সংগঠন রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান টাইমস অব বাংলাদেশকে বলেন, এবার লম্বা ছুটি, ভালো আবহাওয়া, সড়কের উন্নত অবকাঠামো এবং ব্যবস্থাপনা ভালো থাকায় ঈদ যাত্রা আরামদায়ক হয়েছে। ধারণা করা যাচ্ছিল অন্যান্য সময়ের তুলনায় দুর্ঘটনা কমবে। কিন্তু পরিস্থিতি দেখে আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে। এখনও ছুটির কয়েকটা দিন বাকি আছে। এরপর দুর্ঘটনার প্রকৃত চিত্র বোঝা যাবে।
গত বছর ঈদুল ফিতরের আগে ও পরের ১৫ দিনে (৪ এপ্রিল থেকে ১৮ এপ্রিল) সারা দেশে ৩৫৮টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩৬৭ জন নিহত এবং দেড় হাজারের বেশি মানুষ আহত হওয়ার তথ্য জানিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল রোড সেফটি ফাউন্ডেশন।