শান্তর অধিনায়কত্ব ছাড়ার নেপথ্যে…

টাইমস স্পোর্টস
4 Min Read
কলম্বোতে সংবাদ সম্মেলনে টেস্ট অধিনায়কত্ব ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন শান্ত। ছবি: শ্রীলংকা ক্রিকেট

কলম্বো টেস্টে বাংলাদেশের সঙ্গী ইনিংস ও ৭৮ রানের ব্যবধানের শোচনীয় হার। সেই হারের ব্যবচ্ছেদ করতে নাজমুল হোসেন শান্ত এলেন সংবাদ সম্মেলনে। সাংবাদিকদের সাথে প্রশ্নোত্তর পর্ব শেষে নিজেই বললেন তার একটা ‘ঘোষণা’ আছে। সেই ঘোষণায় জানালেন, বাংলাদেশের টেস্ট অধিনায়কের পদ থেকে সরে দাঁড়াচ্ছেন তিনি। কলম্বো টেস্টই হয়ে রইল তার নেতৃত্বের শেষ। 

কেন অধিনায়কত্ব ছাড়লেন শান্ত? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে ফিরতে হবে এই মাসের শুরুর দিকে।

গত ১২ জুন শ্রীলংকা সফরে যাওয়ার দিন মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে সংবাদ সম্মেলন করে গেছেন শান্ত। তখন পর্যন্ত জানতেন টেস্টের সাথে ওয়ানডের অধিনায়ত্বও তার কাঁধেই থাকছে। কিন্তু সেদিনই বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) হাজির হয় রীতিমতো একটা ‘সারপ্রাইজ’ নিয়ে। শান্তকে সরিয়ে পরদিন আনুষ্ঠানিক ঘোষণায় ওয়ানডে অধিনায়কত্ব করা হয় মেহেদী হাসান মিরাজকে।

অধিনায়ক বদল হতেই পারে। তবে যেভাবে, যে প্রক্রিয়ায় শান্তকে সরানো হলো তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে এবং উঠেছেও। শান্তকে সরিয়ে মিরাজকে সরানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয় ১২ জুন বিকেলে এক জরুরি টিম মিটিংয়ের মাধ্যমে। সেদিন সকাল পর্যন্ত দেশেই ছিলেন শান্ত, অথচ বোর্ড পরিচালকারা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে তার সাথে আলোচনার সৌজন্যতাটুকুও দেখাননি। 

বিসিবি সূত্রে জানা যায়, নতুন সভাপতি আমিনুল ইসলাম আমিনুল ইসলাম বুলবুলের চাওয়া ও পরিচালকদের সম্মতিতেই মিরাজকে প্রস্তাব দেয়া হয় অধিনায়কত্বের। মিরাজ রাজি হয়ে যাওয়াতে তৃতীয়বারের মতো তিন ফরম্যাটে তিন অধিনায়কের যুগে প্রবেশ করে বাংলাদেশ। টেস্টে শান্ত,টি-টোয়েন্টিতে লিটন আর ওয়ানডেতে মিরাজ। ঠিক এখানেই আপত্তি জানিয়েছেন শান্ত। 

শনিবার কলম্বো টেস্টে শেষে সংবাদ সম্মেলনে সাবেক এই অধিনায়ক বলেন, ‘এই ড্রেসিংরুমে গত কয়েক বছর ধরে, লম্বা সময় ধরে আমার থাকার সুযোগ হয়েছে। এটা আমার ব্যক্তিগত মতামত যে, তিনজন অধিনায়ক দলের জন্য সমস্যা হতে পারে। দলের ভালোর জন্য এখান থেকে সরে আসছি। যদি ক্রিকেট বোর্ড মনে করে যে, তিনটা অধিনায়কই রাখবে, এটা তাদের সিদ্ধান্ত।’

অধিনায়কের পদ ছেড়ে দেয়ার পেছনে শান্তর এই যুক্তি দাঁড় করানো অযৌক্তিক নয়। কারণ অতীতে যে দুইবার তিন অধিনায়ক ছিল বাংলাদেশে, কোনোবারই এর শেষটা সুখকর হয়নি। সবচেয়ে বড় শঙ্কা ছিল ড্রেসিংরুমে বিশৃঙ্খলা নিয়ে। কারণ শান্ত, মিরাজ কিংবা লিটন; তিনজনের ক্রিকেট দর্শন, অধিনায়ক হিসেবে চিন্তাভাবনা, দৃষ্টিভঙ্গি সবই আলাদা।

এই প্রসঙ্গে ‘টাইমস অফ বাংলাদেশ’কে খালেদ মাসুদ পাইলট বলেছিলেন,  ‘তিন অধিনায়ক করার সিদ্ধান্তটা আমার কাছে খুব বেশি কার্যকরী হবে বলে মনে হয় না। পারফরম্যান্সেও আহামরি প্রভাব পড়বে না বলেও আমার ধারণা।’

পাইলটের সেই কথাই সত্যি হলো। সেই অনুযায়ী শান্তর সরে যাওয়াটাও তাই কেবল সময়ের অপেক্ষাই ছিল। যদিও ড্রেসিংরুমের কালচার, মাঠের বাইরের বিভিন্ন জিনিস, দল সামলানো-সহ আনুষাঙ্গিক অনেক কিছু নিয়েই শান্তর পরিকল্পনা ছিল। ভেবেছিলেন এক হাতে অন্তত দুই ফরম্যাটের দলটাকে সামলে রাখতে পারবেন। অধিনায়কত্ব থাকলে সেই পথে হয়তো হাঁটতেও পারতেন তিনি। কিন্তু তিন অধিনায়কের দলে সেটা করা কঠিনই হতো শান্তর পক্ষে। 

তাই সিদ্ধান্তটা নিতে দেরি যা হয়েছে, তা কেবল মাথার ওপর শ্রীলংকা সিরিজ থাকার জন্যই। শান্তর এই সিদ্ধান্তে বিসিবি কিংবা টিম ম্যানেজমেন্টের প্রক্রিয়া মেনে আগানো কিংবা পেশাদারিত্ব নিয়ে যেমন প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে, তেমনি নিজের আত্মসম্মানের প্রশ্নে আপোসহীন মানসিকতারও প্রশংসা হচ্ছে। তবে সব মিলিয়ে শান্তকে আচমকা এভাবে সরিয়ে দেয়া কিংবা শান্তর সরে যাওয়া দেশের ক্রিকেটের জন্য ভালো কিছু না। ভবিষ্যতে যারা নেতৃত্বে আসবেন, তাদের মনেও কি প্রশ্ন জাগবে না? ‘আমাকে সরিয়ে দেয়ার পালা কখন?’

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *