লো স্কোরিং থ্রিলারে সিরিজ জয় বাংলাদেশের

টাইমস স্পোর্টস
6 Min Read
পাকিস্তানকে ৮ রানে হারিয়ে এক ম্যাচ আগে সিরিজ জিতল বাংলাদেশ। ছবি: বিসিবি

সিরিজ শুরুর আগের দিন বাংলাদেশ অধিনায়ক লিটন দাস বলেছিলেন, ‘হাই স্কোরিং না হলেও সিরিজটা জমবে।’ প্রথম ম্যাচে লিটনের প্রত্যাশা পূরণ না হলেও সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে এসে দেখা মিলল লো স্কোরিং থ্রিলারের।

১৩৪ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নামা পাকিস্তানের শেষ ওভারে এক উইকেট হাতে রেখে জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ১৩ রান। মোস্তাফিজুর রহমান প্রথম বলে এসেই চার খেলেন আহমেদ দানিয়ালের কাছে। দ্বিতীয় বলে তার অফ কাটারে ডিপ মিড উইকেটের পুল করেন দানিয়াল, কিন্তু ধরা পড়েন শামীম হোসেন পাটোয়ারীর হাতে। উল্লাসে ফেটে পড়ল মিরপুরের সব গ্যালারি। ১২৫ রানে গুটিয়ে গেল পাকিস্তান। 

৮ রানে জিতে এক ম্যাচে হাতে রেখে প্রথমবারের মতো পাকিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতল বাংলাদেশ। অবশ্য ম্যাচ শেষ ওভার পর্যন্ত আসতোই না, যদি ফাহিম আশরাফ চারটি করে ছক্কা ও চারে ৩২ বলে ৫১ রানের দারুণ একটা ইনিংস না খেলতেন। তার ঝড়ো ব্যাটিংয়ে ৩০ রানে ৬ উইকেট হারানো পাকিস্তান লড়াই করতে পেরেছে শেষ পর্যন্ত। যদিও টপ ও মিডল অর্ডারের ব্যর্থতায় ফাহিমের ইনিংস বৃথাই গেল। 

এর আগে ম্যাচজুড়ে ছিল বাংলাদেশের দাপট। তখন পাওয়ারপ্লেতে চলছিল পাকিস্তানের ইনিংসের পঞ্চম ওভারের খেলা। সেই ওভারে পঞ্চম বলের আগে অধিনায়ক লিটন দাস স্লিপে দাঁড় করিয়ে দিলেন তিন ফিল্ডারকে। আধুনিক টি-টোয়েন্টিতে যেখানে রান বাঁচানোর জন্য অধিনায়করা ফিল্ড ছড়িয়ে রাখেন, সেখানে লিটন সাজালেন আগ্রাসী ফিল্ড। কারণ আগের দুই বলে টানা দুই পাকিস্তানি ব্যাটারকে ফিরিয়েছেন পেসার তানজিম হাসান সাকিব। ক্যারিয়ারের প্রথম হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা জাগলেও সেটা ছুঁতে পারেননি সাকিব। তবে দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে ১৩৪ রান তাড়া করতে নামা পাকিস্তানকে জোড়া আঘাতে শেষ ধাক্কাটা দিয়েছিলেন এই ডানহাতি পেসারই।

টি-টোয়েন্টিতে ১৩৪ রান তাড়া করা কোনো আহামরি ব্যাপার নয়। হরহামেশাই এর চেয়ে বেশি রান তাড়া করে ম্যাচ জিততে দেখা যায় বিশ্বজুড়ে। কিন্তু মিরপুরের উইকেটে এই ধরনের ছোট লক্ষ্য ছোঁয়াও যে মামুলি ব্যাপার নয়, সেটা দেখা গেল পাকিস্তানের ব্যাটিংয়ের সময়। অথচ এক দিন আগে ভিন্ন কিন্তু একই ধরনের উইকেটে বাংলাদেশ ১১০ রান পেরিয়ে গেছে ২৭ বল হাতে রেখে। 

গত ম্যাচের ভুল এই ম্যাচেও করল পাকিস্তান। রান তুলতে তাড়াহুড়ো করে উইকেট দিয়ে আসা। অবশ্য দ্বিতীয় ম্যাচে ভুলের মাত্রা এই ম্যাচে বেশিই ছিল। প্রথম ম্যাচে পাঁচ উইকেট পড়েছিল ৪৬ রানের মধ্যে। দ্বিতীয় ম্যাচে পাকিস্তানের প্রথম পাঁচ উইকেট বাংলাদেশি বোলাররা তুলে নিয়েছেন মাত্র ১৫ রানের মধ্যে। শুরুটা ইনিংসের প্রথম ওভারের শেষ বলে সাইম আইয়ুবের রান আউট দিয়ে। শেখ মাহেদীর বলে স্কয়ার কাট খেলে পয়েন্টে পাঠিয়ে সিংগেলের জন্য ছোটেন সাইম। কিন্তু নন স্ট্রাইক থেকে ফখর জামান সাড়া না দেয়াতে আবার স্ট্রাইকিং এন্ডে ফিরতে চান এই বাঁহাতি ব্যাটার। যদিও এর আগেই রিশাদের থ্রো থেকে উইকেট ভেঙে দেন লিটন দাস।

ইনিংসের দ্বিতীয় ওভার ফখরের কাছে চার খেয়ে শুরু করলেও নতুন বলে নিজের কারিশমা দেখাতে শরীফুল ইসলাম সময় নিলেন মাত্র দুই বল। মোহাম্মদ হারিসকে করেছেন দারুণ এক ইনসুইংগারে এলবিডব্লিউ। সাফল্য পেয়েছেন প্রথম স্পেলে নিজের দ্বিতীয় ওভারে ফিরেই। তার বাইরে বেরিয়ে যাওয়া গুড লেংথ বলে পুল করতে গিয়ে লিটনের হাতে ক্যাচ দিয়ে। শুরুতে আম্পায়ার তানভীর আহমেদ আউট না দিলেও ফখর জামান নিজেই বেরিয়ে যান মাঠ ছেড়ে। এর আগে অবশ্য রিভিউ নেয়ার ইশারাও দিয়েছিলেন লিটন। 

পঞ্চম ওভারে সাকিবের জোড়া আঘাতের পর আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি পাকিস্তান। দলীয় ১৫ রানে সাকিবের লাফিয়ে ওঠা টানা দুই বলে আউট হয়েছেন হাসান নওয়াজ ও মোহাম্মদ নওয়াজ। পাওয়ারপ্লে শেষ করেছিল এর সাথে আর মাত্র দুই রান যোগ করে। অধিনায়ক সালমান দলের ষষ্ঠ ব্যাটার হিসেবে আউট হয়েছেন শেখ মাহেদীকে ছক্কা মারতে গিয়ে লং অনে ক্যাচ দিয়ে। অবশ্য উইকেটে থেকেও তেমন কিছু করতে পারেননি এই ডানহাতি ব্যাটার। ২৩ বল খেলে রান করেছেন মাত্র ৯। 

এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে ২৮ রানের মধ্যেই চার উইকেট হারায় বাংলাদেশ। মাহেদীর সাথে পঞ্চম উইকেটে ৪৯ বলে ৫৩ রানের জুটিতে সেই ধাক্কা সামলান জাকের। যদিও সেই জুটিতে বেশি অবদান ছিল ২৫ বলে দুই ছক্কা ও দুই চারে ৩৩ রানের ইনিংস খেলা মাহেদী। টপ অর্ডারের ব্যর্থতার দিনে মিরপুরের ট্রিকি উইকেটে ৪৮ বলে ৫৫ রানের ইনিংস খেলেন জাকের। ইনিংসে ছিল পাঁচটি ছক্কা ও একটি চার। ইনিংসের শুরুতে একে একে ব্যর্থ হয়েছেন নাঈম শেখ, লিটন দাস, তাওহিদ হৃদয়রা। তানজিদ তামিমের জায়গায় একাদশে জায়গা পাওয়া নাঈম ফিরেছেন ৩ রান করে। লিটন ব্যর্থ হয়েছেন এই ম্যাচেও, টাইমিংয়ের গড়বড়ে মিড উইকেটে ক্যাচ দিয়েছেন ৭ রান করে। 

চারে নামা হৃদয় আউট হয়েছেন কোনো রান না করেই। সালমান মির্জার ওভারে মিড অফে ঠেকে দ্রুত সিংগেল নিতে গিয়ে নন স্ট্রাইকে আগা সালমানের সরাসরি থ্রোতে রান আউট হন এই ডানহাতি ব্যাটার। ইনিংসের চতুর্থ ওভারে টানা দুই বলে একটি করে ছক্কা ও চার মেরে ভালো শুরুর ইংগিত দিয়েও ব্যর্থ হয়েছেন পারভেজ হোসেন ইমন। অভিষিক্ত আহমেদ দানিয়ালের বলে টাইমিংয়ের গড়বড়ে মিড অনে ক্যাচ দেন আগের ইনিংসে ঝড়ো ফিফটি করা এই বাঁহাতি। মাঝে শামীম হোসেনও ইনিংস বড় করতে পারেননি। ৭ বলে ৪ রান করে বোল্ড হয়েছেন। দুটি করে উইকেট নেন সালমান মির্জা ও অভিষিক্ত আহমেদ দানিয়াল। 

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *