লিটনের ফেরা-শামীমের থ্রো, বড় জয়ে সমতায় ফিরল বাংলাদেশ

টাইমস স্পোর্টস
4 Min Read
শরীফুলের তোপে পাওয়ারপ্লেতে ছন্নছাড়া শ্রীলংকা। ছবি: শ্রীলংকা ক্রিকেট

ইনিংসের শুরুতে একটা ভালো ক্যাচ কিংবা একটা দুর্দান্ত রান আউট যে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে, সেটার প্রমাণ হাতেকলমে দিলেন শামীম হোসেন পাটোয়ারী৷ ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই দারুণ এক থ্রোতে রান আউট করেন আগের ম্যাচের শ্রীলংকার জয়ের নায়ক কুশাল মেন্ডিসকে। এরপরই বদলে যায় বাংলাদেশি বোলার-ফিল্ডারদের শরীরী ভাষা। ফলাফল শরীফুলের শুরুর দুর্দান্ত স্পেল, মিড ওভারে রিশাদের স্পিন জাদু, সাইফউদ্দিনের দারুণ স্পেল। এর আগে পাওয়ারপ্লেতেই শ্রীলংকা হারিয়েছে প্রথম চার উইকেট। শুরুর সেই ধংসস্তুপ থেকে আর উঠে দাঁড়াতে পারেনি শ্রীলংকা। থেমেছে ইনিংসের ২৮ বল বাকি থাকতে। 

বোলারদের হাত ধরে ডাম্বুলায় দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে শ্রীলংকাকে ৮৩ রানে হারিয়ে সিরিজে ১-১ সমতায় ফিরল বাংলাদেশ। ১৭৮ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ৯৪ রানে অল আউট হয়েছে লংকানরা। একই সাথে ঘরের মাঠে এবং বাংলাদেশের বিপক্ষে যা টি-টোয়েন্টিতে সর্বনিম্ন দলীয় সংগ্রহ শ্রীলংকার। সব মিলিয়ে রানের ব্যবধানে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জয়। এর আগে ২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে পাপুয়া নিউ গিনির বিপক্ষে ৮৪ রানে জিতেছিল বাংলাদেশ। 

সরাসরি থ্রোতে ম্যাচের মোমেন্টাম ছিনিয়ে আনার আগে ২৭ বলে ৪৮ রানের দারুণ একটা ইনিংস খেলেন শামীম। পাঁচটা চারের সাথে দুটো ছক্কায় সাজানো এই ইনিংসেই এগিয়ে নিয়েছেন বাংলাদেশকে। এর আগে লিটনের সাথে ৩৯ বলে ৭৭ রানের জুটির কথা তো না বললেই নয়। সমানতালে রান তুলেছেন দুজন মিলে। এই ম্যাচ দিয়েই কেটেছে লিটনের রান খরা। ১৩ ইনিংস পর পেয়েছেন ফিফটি। ১২-তম টি-টোয়েন্টি ফিফটিকে নিয়ে গেছেন ৭৬ পর্যন্ত। পাঁচ ছক্কা ও এক চারে ৫০ বলে সাজানো এই ইনিংসেই খানিকটা চাপ মুক্ত হয়েছেন এই ডানহাতি ব্যাটার। 

নিজের পারফরম্যান্স নিয়ে প্রশ্ন তো উঠেছিলই, লিটন অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর দলের অবস্থাও ছিল তথৈবচ। আরব আমিরাতের কাছে সিরিজ হার, পাকিস্তানে হোয়াইটওয়াশের পর শ্রীলংকায় টি-টোয়েন্টি সিরিজেও শুরু হয় হেরে। আজ সেই চাপটাও কমে যাওয়ার কথা লিটনের। আপাতত সিরিজ হার তো ঠেকানো গেছে। 

রান তাড়ায় নেমে গত ম্যাচের মতো এপ্রোচ নিয়েই শুরু করেছিল শ্রীলংকা। তৃতীয় বলেই দারুণ একটা চার মারেন কুশাল মেন্ডিস। দ্বিতীয় ওভারে সাইফউদ্দিনকে ছক্কা মেরে ব্যাটিং ঝড়ের পূর্বাভাস দেন পাথুম নিসাঙ্কাও। সেই ঝড়ের আগে শামীম যে আসল নীরবতা হয়ে লুকিয়ে ছিলেন পয়েন্ট পজিশনে, সেটা কি আর জানতেন তারা। সাইফের সেই ওভারের পঞ্চম বলে আলতো হাতে পয়েন্টের দিকে ঠেলে সিংগেলের জন্য ছুটেন কুশাল। নন স্ট্রাইকিং এন্ডে যাওয়ার আগেই ছুটে এসে সরাসরি থ্রোতে উইকেট ভেঙে দেন শামীম। 

পরের ওভারে শরীফুলের লেংথ বলে পয়েন্টে খেলেন কুশাল পেরেরা। লাফিয়ে উঠে উচ্চতা কাজে লাগিয়ে বেশ ভালো একটা ক্যাচ ধরেন রিশাদ। লংকানদের তৃতীয় উইকেটটাও গেছে শরীফুলের পকেটে। আভিশকা ফার্নান্দো ফুল লেংথ বলে ফ্লিক করেন ডিপ স্কয়ার লেগে। প্রায় ফাইন লেগ থেকে দৌড়ে এসে দারুণ এক ক্যাচে তাকে ফেরান শামীম। পাওয়ারপ্লে শেষ হওয়ার আগেই চতুর্থ উইকেটটা পড়ে সাইফউদ্দিনের বলে। বাঁহাতি চারিথ আসালাঙ্কাকে করা ওয়াইড ইয়র্কারকটা শেষ মুহুর্তে ছুঁয়ে যায় তার ব্যাট। প্রথমে আন্দাজ করতে না পারলেও সাইফের কথায় রিভিউ নেন লিটন এবং সেখানেই সফল। 

টপ অর্ডার এলোমেলো হয়ে যাওয়ার পর আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি শ্রীলংকা। ১১-তম ওভারে রিশাদ এসে নেন দুই উইকেট। একটু জোরের ওপর করা বাউন্সি লেগ স্পিনে স্টাম্পিং হন নিসাঙ্কা। চার নম্বর বলে ফিরতি ক্যাচ দেন চামিকা করুনারত্নে। ৭১ রানে ৬ উইকেট পড়ে গেলে অবশ্য ব্যাটিং দলের আর তেমন কিছু করার থাকে না, অন্তত টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে। তাই শেষ চারটা উইকেট নিতে বাংলাদেশের বোলাররা খরচ করেছেন আরো ২৩ রান। বাকি থাকা চার উইকেট একটি করে ভাগাভাগি করেছেন মিরাজ, সাইফউদ্দিন, মোস্তাফিজ ও রিশাদ।

ইনিংসে শেষে ৩.২ ওভারে ১৮ রানে ৩ উইকেট নিয়ে সেরা বোলার রিশাদ। দুটি করে উইকেট নিয়েছেন শরীফুল ও সাইফ।  

 

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *