অষ্টম বছরের মতো ‘রোহিঙ্গা গণহত্যা দিবস’ পালন করছেন মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা।
কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবিরে নানা আয়োজনে পালন করা হচ্ছে দিবসটি। রোহিঙ্গারা জানাচ্ছেন, নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার আকুতি, চাইছেন বিশ্ববাসীর সহযোগিতা ও সুদৃষ্টিও।
সোমবার সকাল থেকে উখিয়া ও টেকনাফের ৪, ৯ ও ১৭ নম্বর ক্যাম্পে দিনব্যাপী নানা কর্মসূচির মাধ্যমে এ দিনটি স্মরণ করেন তারা। অনুষ্ঠান শেষে নিহত রোহিঙ্গাদের স্মরণে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।
উখিয়ার ৯ নম্বর ক্যাম্পে অনুষ্ঠিত সমাবেশে রোহিঙ্গা নেতারা বলেন, রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের ওপর চলা হত্যাযজ্ঞ মানবতাবিরোধী অপরাধ। ‘মগ’ বাহিনীর হাতে সংঘটিত এ সহিংসতা বিশ্ববাসীর বিবেককে নাড়া দেওয়ার মতো।
নিজেদের জীবনের ভয়াবহ স্মৃতির কথা স্মরণ করে তারা বলেন, তখন যদি রাখাইন রাজ্যে গণহত্যা না হতো তাহলে একজন রোহিঙ্গাকেও বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে হতো না। সেসব দিন ছিল বিভীষিকাময়। সেই দিনগুলো যদি স্মৃতির পাতা থেকে মুছে ফেলা গেলে তারা শান্তিতে ঘুমাতে পারতেন।
জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলোর প্রতি গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ও দোষীদের বিচারের দাবিও তুলে ধরেন তারা।
আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস এর সভাপতি মোহাম্মদ জুবাইর বলেন, ‘আমাদের ইতিহাসের এক কলঙ্কিত, ভয়াবহ এবং হৃদয়বিদারক দিন আজ। এই দিনটি শুধু একটি তারিখ নয়, এটি একটি বেদনাবিধুর স্মৃতি। এইদিন আমাদের জাতির হাজারো সন্তানকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। হাজার হাজার নারী হয়েছেন ধর্ষণের শিকার। আর লাখ লাখ মানুষ হয়েছেন গৃহহীন। আমরা এই দিনটিকে স্মরণ করি “রোহিঙ্গা গণহত্যা দিবস” হিসেবে।’
‘আজকের এই দিনে আমরা একত্র হয়েছি শুধুমাত্র কান্না বা শোক প্রকাশের জন্য নয়, বরং বিশ্বকে স্মরণ করিয়ে দিতে যে আমরা এখনও ন্যায়বিচারের অপেক্ষায় আছি। আমাদের ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়েছে, কিন্তু আমাদের আশার প্রদীপ নিভে যায়নি’ বলেও জানান তিনি।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (৮ এপিবিএন) সহ-অধিনায়ক উইক্য সিং জানান, রোহিঙ্গারা গণহত্যা দিবস উপলক্ষে ক্যাম্পে আয়োজিত কর্মসূচিগুলো শান্তিপূর্ণভাবে শেষ করেছেন। ৮ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের সদস্যরা সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছেন এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সতর্ক অবস্থানে ছিলেন।
জানা যায়, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট সাত লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা সীমান্ত পেরিয়ে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলায় আশ্রয় নিয়েছিল। এর আগে থেকেই ক্যাম্পে ছিল প্রায় সাড়ে তিন লাখ রোহিঙ্গা। বর্তমানে সবমিলিয়ে ১৩ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা ৩৩টি শিবিরে রয়েছেন।