রোহিঙ্গাদের উপর মিয়ানমার জান্তা ও আরাকান আর্মির নির্যাতন বন্ধ করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহবান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।
কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ইস্যুতে আয়োজিত আন্তর্জাতিক ‘অংশীজন সংলাপ’ আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধনকালে দেওয়া বক্তব্যে এ কথা বলেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। এ সংলাপে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে সাত দফা কর্মপরিকল্পনা প্রস্তাব করেন প্রধান উপদেষ্টা।
সোমবার সকাল ১০টায় তিনি বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে কক্সবাজার বিমানবন্দরে পৌঁছান।
‘স্টেকহোল্ডারস’ ডায়ালগ: টেকঅ্যাওয়ে টু দ্য হাই-লেভেল কনফারেন্স অন দ্য রোহিঙ্গা সিচুয়েশন’ শীর্ষক তিন দিনের এই সংলাপ রোববার হোটেল বে ওয়াচে শুরু হয়েছে। এতে কূটনীতিক, আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ, বিভিন্ন দেশের শিক্ষাবিদ, বৈশ্বিক সংস্থা ও রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেছেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে চলমান এ সংকটে আমরা আর নীরব থাকতে পারি না। আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি জোরালো আহ্বান জানাই—তারা যেন সম্মিলিতভাবে মিয়ানমার সেনাশাসন ও রাখাইন আর্মিদের রোহিঙ্গাদের ওপর সহিংসতা চালানো বন্ধ করতে বাধ্য করে।’
‘আজকের পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কার্যকর ভূমিকা আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি জরুরি হয়ে পড়েছে,’ যোগ করেন তিনি।
মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘আমরা রোহিঙ্গা নারী-পুরুষদের চোখে ভীতসন্ত্রস্ত দৃষ্টি দেখি, দেখি ভেঙে পড়া মন। তারা আমাদের দুয়ারে এসে যে ভয়াবহ কাহিনী তুলে ধরেন, তা পরিকল্পিত নির্যাতন, নাগরিকত্ব অস্বীকার, জোরপূর্বক দেশ থেকে বহিষ্কার, গণহত্যা, ধর্ষণ, অমানবিক নির্যাতন, অগ্নিসংযোগে ঘরবাড়ি ধ্বংসসহ অগণিত দুঃসহ অভিজ্ঞতা।’
‘এসব কারণে রোহিঙ্গাদের শুধুমাত্র তাদের জীবন রক্ষার প্রয়োজনে ২০১৭ সালে এবং তারও আগে বাংলাদেশের সীমিত সম্পদ ও সক্ষমতা সত্ত্বেও মানবিক দৃষ্টিভঙ্গিতে রোহিঙ্গাদের জন্য সীমান্ত উন্মুক্ত করেছিল। যখন তারা সবচেয়ে ভয়াবহ মানবিক সংকটে পতিত হয়েছিল, তখন আমাদের এই উদ্যোগ তাদের জন্য ছিল মানবিক সহমর্মিতা ও উদারতার প্রকাশ’, বলেন তিনি।
তিন দিনব্যাপী এই সংলাপ মঙ্গলবার শেষ হবে।
আয়োজকরা জানিয়েছেন, সংলাপটি মূলত সেপ্টেম্বরের উচ্চপর্যায়ের বৈঠকের প্রস্তুতিমূলক ধাপ হিসেবে আয়োজন করা হয়েছে। এর বিশেষ তাৎপর্য হলো রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সরাসরি অংশগ্রহণ। এখানে তারা তাদের আশা-আকাঙ্ক্ষা, হতাশা এবং ভবিষ্যৎ প্রত্যাশার কথা জানাচ্ছেন। এই মতামত ও আলোচনা ৩০ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে অনুষ্ঠেয় উচ্চপর্যায়ের সম্মেলনের আলোচনায় প্রতিফলিত হবে।
সংলাপে মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করা, রোহিঙ্গা সংকটকে বৈশ্বিক অঙ্গনে দৃশ্যমান রাখা এবং রোহিঙ্গাদের নিরাপদ, স্বেচ্ছামূলক ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের পথ নির্ধারণসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় স্থান পেয়েছে।