গুম বা ডিজঅ্যাপিয়ারেন্স একটা সময় পর্যন্ত তার কাছে বই বা খবরের কাগজের বিষয় ছিল উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকার এই বিষয়টি বাংলাদেশে এনেছে।
তিনি বলেন, ‘এই প্রথম ভয়াবহ দানব হাসিনা সরকার রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে গুম এদেশে নিয়ে এসেছে।’
শুক্রবার ঢাকার মানিক মিয়া এভিনিউতে গুম হওয়া ব্যক্তিদের স্মরণে ‘মায়ের ডাক’ এর উদ্যোগে আয়োজিত প্রদর্শনীর উদ্বোধন করে এসব কথা বলেন তিনি। ২০০৯ সাল থেকে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের আমলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গুম হওয়া ভিকটিমদের পরিবারের প্ল্যাটফর্ম ‘মায়ের ডাক’।
ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচার দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজ এটা প্রমাণিত যে, হাসিনা এই হত্যাকাণ্ডগুলোর জন্য দায়ী, হাসিনা এই গুমের জন্য দায়ী, হাসিনার বিচার অবশ্যই হতে হবে। এই দেশের মাটিতে হতে হবে এবং তার সর্বোচ্চ শাস্তি হতে হবে।’
গুমের ঘটনার বিচার দাবি করে বিএনপির এই নেতা জানান, চূড়ান্ত বিচার নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত তিনি ও তার দল গুমের শিকার পরিবারগুলোর পাশে থাকবেন।
তিনি বলেন, ‘প্রথম দিন থেকে গুম হওয়া পরিবারের সঙ্গে আছি। প্রতিটি নির্যাতিত-নিপীড়িত মানুষের সঙ্গে আছি। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ছয় বছর মিথ্যা মামলায় কারাগারে আটক থেকেছেন। আমাদের নেতা তারেক রহমান সাহেব নির্বাসিত হয়েছিলেন, এখনও আছেন।’
‘আমরা যারা নেতৃত্ব করেছি তার মধ্যে একজনও বাকি নেই যে, যার বিরুদ্ধে একশ, দেড়শ, দুইশ, তিনশ, চারশ পর্যন্ত মামলা নেই এবং সেই মামলাতে গ্রেপ্তার হইনি। তাই এ কথা ভাবাটা ভুল হবে, যে বিএনপি এই বিষয়গুলোকে এড়িয়ে যাবে।’
তিনি বলেন, ‘গুমের মতো ভয়াবহ অপরাধ আর হতে পারে না। এটি মানবতার সম্পূর্ণ পরিপন্থী অপরাধ এবং এ ধরনের অপরাধের শাস্তি হলো মৃত্যুদণ্ড। আমার দলের পক্ষ থেকে আমরা এই আন্দোলনে ছিলাম, আছি এবং গুম হওয়া ভিকটিম পরিবারের পাশে থাকব, যতদিন না আমরা অপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি দিতে পারি।’
তিনি বলেন, ‘অপরাধী যারা-ই হোক না কেন, যত ক্ষমতাবানই হোক না কেন, তাদেরকে প্রকাশ্যে আনতেই হবে। যেসব শিশু তাদের বাবাকে হারিয়েছে, বোনরা ভাইকে হারিয়েছে, মায়েরা সন্তান হারিয়েছে-তাদের সম্পর্কিত পূর্ণ তথ্য জনগণের সামনে আনতেই হবে।’
ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে একটি নির্বাচিত সরকার গঠনের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়ে ফখরুল বলেন, ‘বিএনপি দৃঢ়ভাবে নির্বাচন চায়। এই ভিকটিমদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত ও ত্বরান্বিত করার জন্য আমরা নির্বাচন চাই।’
অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘সরকার গুমের শিকার ব্যক্তির আত্মীয়দের, মায়েদের, ভাইদের কান্না বন্ধ করতে ব্যর্থ হয়েছে। এটার জন্য অবশ্যই জবাবদিহি করতে হবে।’