যেভাবে বাংলাদেশের জালে কোরিয়ার ৬ গোলের বন্যা

টাইমস স্পোর্টস
3 Min Read
প্রথমার্ধে লড়েও দ্বিতীয়ার্ধে তাসের ঘড়ের ন্যায় ভেঙে পড়ে বাংলাদেশ ডিফেন্স লাইন। ছবি: বাফুফে

লাওসে গরম দুপুরে শুরুটা ছিল রূপকথার মতো। এশিয়ার পরাশক্তি দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে মাঠে নেমে চোখে চোখ রেখে লড়াই করল বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-২০ নারী দল। খেলা শুরুর পরই সাগরিকার দৌড়, শান্তির পাস আর তৃষ্ণার টোকা, সব মিলিয়ে মাত্র পনেরো মিনিটে গ্যালারিতে থাকা বাংলাদেশি সমর্থকদের আনন্দে ভাসিয়ে দেয় প্রথম গোল। শক্তিশালী কোরিয়ার বিপক্ষে লিড পাওয়া বাংলাদেশের জন্য ছিল এক বিরল মুহূর্ত।

কিন্তু সেই হাসি টিকল মাত্র তিন মিনিট। এক লং বলেই বাংলাদেশের হাই লাইন ডিফেন্স ভেঙে গোলরক্ষক স্বর্ণার সামনে একা দাঁড়িয়ে গেল কোরিয়ার ফরোয়ার্ড। সেখান থেকে গোল করতে ভুল হয়নি তাদের। ম্যাচের মাত্র উনিশ মিনিটেই সমতায় ফেরে কোরিয়া। এরপর প্রথমার্ধের বাকি সময়টা ছিল দারুণ প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ।

স্বর্ণা রাণী মন্ডল গোলপোস্টে ছিলেন প্রাচীরের মতো। ৫ ও ২২ মিনিটে তার দুর্দান্ত সেভ, আর ইনজুরি টাইমে সুইপার কিপারের মতো বেরিয়ে এসে প্রতিপক্ষের আক্রমণ ঠেকানো, সব মিলিয়ে প্রথমার্ধে কোরিয়াকে আর এগিয়ে যেতে দেননি। সেন্টার-ব্যাক আফঈদা খন্দকারও ঠাণ্ডা মাথায় চাপ সামলেছেন, কয়েকবার অফসাইড ট্র্যাপে ফেলেছেন কোরিয়ান ফরোয়ার্ডদের।

প্রথমার্ধের শেষ দিকে কিছুটা ক্লান্তি দেখা দিলেও ১-১ গোলেই বিরতিতে যায় দুই দল। তখনও আশা ছিল, ড্র হলেও গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে থাইল্যান্ডের মূল পর্বে জায়গা করে নিতে পারবে বাংলাদেশ।

কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধ শুরু হতেই সব পাল্টে গেল। খেলার মাত্র তৃতীয় মিনিটে দ্বিতীয় গোল হজম করল বাংলাদেশ। এরপর যেন ধীরে ধীরে ভেঙে পড়ল গোটা দল। আক্রমণাত্মক কৌশল নিয়েই খেলতে চেয়েছিলেন ব্রিটিশ কোচ পিটার বাটলার, কিন্তু কোরিয়ার গতিময় ফরোয়ার্ড লাইন বারবার ওভারহেড বলে ভেঙে দিয়েছে বাংলাদেশের হাই লাইন ডিফেন্স।

৬১ মিনিটে কোরিয়ার অধিনায়ক চো হেং গোল করে ব্যবধান বাড়ালেন। ৮৪ মিনিটে বাংলাদেশের ডিফেন্ডারের ফাউলে পাওয়া পেনাল্টি থেকে স্কোরলাইন দাঁড়াল ৪-১। শেষ দশ মিনিটে আরও দুই গোল হজম করল আফঈদারা।

শেষ বাঁশি বাজার পর স্কোরবোর্ডে লেখা ছিল দক্ষিণ কোরিয়া ৬, বাংলাদেশ ১। স্বপ্নের মতো শুরু হলেও শেষটা হয়ে রইল দুঃস্বপ্ন।

এই হারের পর তিন ম্যাচে ৬ পয়েন্ট নিয়ে বাংলাদেশের গোল ব্যবধান হলো ৫। এখন সেরা তিন রানার্সআপের মধ্যে থাকতে পারবে কিনা, সেটাই নির্ভর করছে গ্রুপের অন্য ম্যাচগুলোর ফলাফলের উপর।

প্রথমার্ধের সাহসী ফুটবল হয়তো প্রমাণ করেছে, বাংলাদেশ লড়তে জানে। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধের ভেঙে পড়া পারফরম্যান্স শিখিয়ে দেয় যে, বড় দলের বিপক্ষে ছোট্ট একটি ভুলের জন্যেও অনেক বড় মূল্য দিতে হতে পারে।

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *