যশোর পৌর এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারী বাড়াতে ৯ বছর আগে নেয়া উদ্যোগ মুখ থুবড়ে পড়েছে। ২০১৭ সালের ১৬ মার্চ প্রায় ১৬ লাখ টাকা ব্যয়ে পৌর এলাকায় ১৩০টি সিসি ক্যামেরা স্থাপন করে যশোর পৌরসভা, যার মধ্যে বর্তমানে সচল আছে মাত্র ৭০টি । বাকি ৬০টি ক্যামেরার মধ্যে ২০টিরও বেশি চুরি হয়েছে আর বাকিগুলো ‘বিকল’।
এ নিয়ে সুনির্দিষ্ট উত্তর নেই পৌরসভার কাছে। অপরাধ প্রবণতা কমাতে এবং নজরদারি বাড়াতে শহরজুড়ে আরও বেশি সিসি ক্যামেরা স্থাপনের প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করছেন সচেতন নাগরিকরা।
পৌরসভার তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালে পৌর এলাকার গুরুত্বপূর্ণ অন্তত ৭৬টি পয়েন্টে সিসি ক্যামেরা স্থাপন লাগানো হয়। এর আওতায় রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও চত্বরগুলো।
সরেজমিনে দেখা যায়, শহরের জজ কোর্ট ,দঁড়াটানা, এমকে রোডে বিদ্যুতের খুঁটির সঙ্গে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা আছে। কোনোটির তার বিচ্ছিন্ন, কিছু ক্যামেরা ভাঙা। আবার কোথাও বা তারের সঙ্গে ঝুলছে সিসি ক্যামেরা। এসব এলাকায় চুরি, ছিনতাইসহ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড নিত্যকার ঘটনা হলেও অনেক ক্ষেত্রে জড়িতরা পার পেয়ে যাচ্ছেন বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
২০১৫ সালের অক্টোবরে যশোর জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় শহরের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সিসি ক্যামেরা বসানোর সিদ্ধান্ত হয়। সেই সিদ্ধান্তের আলোকে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে যশোর পৌরসভার গুরুত্বপূর্ণ ৭৬টি পয়েন্টে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করে। বর্তমানে সেগুলো জেলা পুলিশের পর্যবেক্ষণে রয়েছে।
এরপর ২০২১ সালে ৯ লাখ টাকা ব্যয়ে ৯০টি ক্যামেরা সংস্কারের উদ্যোগ নেয় যশোর পৌরসভা। এরপর ৪ বছরে আর নতুন কোনো ক্যামেরা সংযোজন কিংবা সংস্কার করা হয়নি।
১৮ জুন জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে মাসিক আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় উঠে আসে একমাসে অপরাধের খতিয়ান। জেলায় হত্যা, অপহরণ, চুরিসহ বিভিন্ন অপরাধ আগের তুলনায় বেড়েছে অস্বাভাবিকভাবে। বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন আইনশৃঙ্খলা কমিটির সদস্যরাও।
পৌর সচেতন নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব জিল্লুর রহমান ভিটু বলেন, ‘সীমান্তবর্তী জেলা যশোর। এখানে অস্ত্র,মাদকের যেমন ব্যাপকতা আছে, তেমনি চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনাও ঘটছে নিয়মিত। ফলে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে আধুনিক প্রযুক্তিরও প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।’
এ বিষয়ে নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর (অব.) আ ন ম মোস্তফা বনি টাইমস অব বাংলাদেশকে বলেন, ‘সিসি ক্যামেরা অপরাধীদের মনে ভীতি সৃষ্টি করে। যেকোনো অপরাধ সংঘটিত হওয়ার আগে অপরাধী ভাবে, তাকে ক্যামেরার মাধ্যমে শনাক্ত করা হতে পারে। এতে অনেক অপরাধই প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়। আর যদি কোনো অপরাধ ঘটেও যায়, তবে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ তদন্তের ক্ষেত্রে প্রমাণ হিসেবে কাজ করে। অপরাধীকে শনাক্ত করা এবং আইনের আওতায় আনতে এটি সহায়ক।’
পৌর এলাকার নিরাপত্তার জন্য স্থাপন করা সিসি ক্যামেরার বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে পৌর প্রশাসক মো. রফিকুল হাসান বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার কাছে স্পষ্ট কোন ধারণা নেই। কতগুলো ক্যামেরা সচল আছে সেটি আমি বলতে পারব না ।’
নতুন করে পৌর এলাকায় সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা যায় কি না–এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে।
অন্যদিকে যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) নূর-ই-আলম সিদ্দিকী জানিয়েছেন, পৌরসভার সিসি ক্যামেরাগুলো পুলিশ সুপারের কার্যালয় থেকে মনিটরিং করা হয়। সিসিটিভি বিশ্লেষণ করে গত ৩ মাসে যশোরে ১৯টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ৫৭ জনকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।