রাজধানীর ধানমন্ডি থানায় করা চাঁদাবাজির একটি মামলায় মডেল মেঘনা আলমকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) ঢাকার সিএমএম আদালত মঞ্জুর করেছেন। চাঁদাবাজির মামলাটির বাদী পুলিশ, কিন্তু অভিযোগ অন্যদের।
পুলিশের দাবি, মেঘনার বিরুদ্ধে ‘বিভিন্ন ধনাঢ্য ব্যক্তি’ চাঁদাবাজির অভিযোগ করলেও তারা কেউ মামলা দায়ের করতে রাজি হননি, এমনকি জিডিও না। অন্য ক্ষেত্রে যাই হোক, এক্ষেত্রে পুলিশ ওই অজ্ঞাত ব্যক্তিদের পক্ষে দায়িত্ব পালনে এগিয়ে এসেছে। একজন পুলিশ কর্মকর্তা নিজেই বাদী হয়ে মেঘনার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ এনে মামলা করেছেন।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা টাইমস অব বাংলাদেশকে বলেন, ‘ধানমন্ডির একটি রেস্তোরাঁয় বেশ কয়েকদিন মেঘনাকে ধনাঢ্য ব্যক্তিদের সঙ্গে দেখা গেছে। পরে তারা প্রতারণার বিষয়টি আমাদের জানান। এরই পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করেছে,’ উল্লেখ করে ওই কর্মকর্তা দাবি করেছেন ‘পুলিশের কাছে সকল প্রকার তথ্য-উপাত্ত রয়েছে। ‘
তবে কথিত ‘ধনাঢ্য ব্যক্তিদের পরিচয়’ জানাতে রাজী হননি তিনি। এছাড়া অভিযোগকারীদের বদলে পুলিশ নিজেই কেন স্বেচ্ছা প্রণোদিত হয়ে এ মামলার বাদী হয়েছে, এমন প্রশ্নের জবাব দিতেও অপারগতা প্রকাশ করেন ওই পুলিশ কর্মকর্তা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, চাঁদাবাজি ও প্রতারণার অভিযোগে ১৫ এপ্রিল মেঘনা, দেওয়ান সমিরসহ অজ্ঞাতনামা দুই-তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন ধানমন্ডি মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ আবদুল আলীম।
ওই মামলায় বলা হয়েছে, মেঘনা আলম, দেওয়ান সমিরসহ অজ্ঞাতপরিচয় আসামিরা জনৈক কূটনীতিকের কাছে ৫ মিলিয়ন ডলার (প্রায় ৬০ কোটি টাকা) দাবি করেছেন। মামলার এজাহারে ওই কূটনীতিকের নাম উল্লেখ করা হয়নি।

মামলার অভিযোগে বলা হয়, গত ২৯ মার্চ ধানমন্ডির একটি রেস্তোরাঁয় একটি গোপন বৈঠক হয়। বৈঠকে মেঘনা, সমিরসহ কয়েক ব্যক্তি অংশ নেন। এতে কূটনীতিকের কাছে ৫ মিলিয়ন ডলার দাবি ও আদায়ের সিদ্ধান্ত হয়। এই গোপন বৈঠকের উদ্দেশ্য ছিল প্রতারণা করে অর্থ আদায় করা। আসামিদের এই কার্যক্রমের কারণে ‘আন্তরাষ্ট্রীয় সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা’ রয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) মেঘনাকে আদালতে হাজির করা হয়। বিষয়টি নিয়ে ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রধান পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিচারকের অনুমতি নিয়ে মডেল মেঘনা আলম আদালতে কথা বলেন। তিনি আদালতের কাছে দাবি করেন, সৌদি রাষ্ট্রদূত ঈসা ইউসুফ ঈসা আলদুহাইলানের সঙ্গেই তার পরিচয় ছিল। সৌদি রাষ্ট্রদূত তাকে ফোনও করেছিলেন বলে আদালতে দাবি করেন মেঘনা আলম।’
ওমর ফারুক ফারুকী বলেন, ‘মেঘনা আলম আদালতে দাবি করেছেন, তিনি দেওয়ান সমিরকে চেনেন না।’
মামলায় মেঘনাকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করেন আদালত। অন্যদিকে দেওয়ান সমিরকে পাঁচ দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দেওয়া হয়। ঢাকার সিএমএম আদালত এ আদেশ দেন।
এর আগে, ভাটারা থানায় করা আরেক চাঁদাবাজির মামলায় ১১ এপ্রিল গ্রেপ্তার হন দেওয়ান সমির। ওই মামলায় তিনি বর্তমানে রিমান্ডে রয়েছেন।
১০ এপ্রিল রাতে ডিবি পুলিশ মেঘনাকে রাজধানীর বসুন্ধরার বাসা থেকে আটক করে। পরদিন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক আদেশে তাকে বিশেষ ক্ষমতা আইনে ৩০ দিনের আটকাদেশে কারাগারে পাঠানো হয়। তবে আটকের কারণ স্পষ্ট না হওয়ায় বিষয়টি নিয়ে দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়।
মেঘনার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বিঘ্ন, ভুয়া তথ্য ছড়িয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্কে অবনতি ঘটানোর চেষ্টা এবং দেশের অর্থনৈতিক ক্ষতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনা হয়েছে বলে ওই সময় এক বিবৃতিতে জানায় গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
তবে রোববার (১৩ এপ্রিল) আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল প্রেস ব্রিফিয়ে বলেন, মেঘনার আটক প্রক্রিয়া সঠিক হয়নি।
সেদিনই, মেঘনাকে আটকের প্রক্রিয়া নিয়ে তীব্র সমালোচনার মুখে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) প্রধানের পদ থেকে রেজাউল করিম মল্লিককে সরিয়ে দেওয়া হয়। তাকে সংযুক্ত করা হয় ডিএমপি সদর দপ্তরে।
রোববারই মেঘনার বাবা বদরুল আলম রিট করলে আদালত তা আমলে নেন। হাইকোর্ট জানতে চান, পরোয়ানা ছাড়া আটক, গ্রেপ্তারের কারণ না জানানো, ২৪ ঘণ্টার বেশি হেফাজতে রাখা ও আইনজীবী না পাওয়ার সুযোগ কেন বেআইনি নয়। পাশাপাশি বিশেষ ক্ষমতা আইনে আটকাদেশের আইনগত বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়।
সবশেষ, মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) প্রচলিত আইনেই মডেল মেঘনার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের জানান প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মো. খোদা বখস চৌধুরী। মেঘনাকে আটকের ঘটানাটি ‘বেআইনি কোনো পদক্ষেপ নয়’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি। এ নিয়েও বিভিন্ন মহলে দেখা দেয় তীব্র প্রতিক্রিয়া।
আইন উপদেষ্টা কেন ‘প্রক্রিয়া সঠিক হয়নি’ বলেছেন সেটা তার জানা নেই উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী বলেন, উপদেষ্টা এ বিষয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলেননি।