‘মওলানা ভাসানী’ সেতুর উদ্বোধন বুধবার

টাইমস ন্যাশনাল
3 Min Read
দীর্ঘদিনের অবসান ঘটিয়ে তিস্তা নদীর ওপর নির্মিত সেতুর উদ্বোধন করা হবে। ছবি: টাইমস

তিস্তা নদীর ওপর নির্মিত ‘মওলানা ভাসানী’ সেতুর উদ্বোধন করা হবে বুধবার। গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হরিপুর ঘাট থেকে কুড়িগ্রামের চিলমারী পর্যন্ত সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে।

সেতু ও সংযোগ সড়ক চালু হলে কুড়িগ্রাম থেকে ঢাকার দূরত্ব ১৩৫ কিলোমিটার কমে আসবে। কেবল কুড়িগ্রাম নয়, উত্তরাঞ্চলের কয়েকটি জেলার সঙ্গে ঢাকার যোগাযোগ সহজ হবে।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া সেতুস্থলে গিয়ে  আনুষ্ঠানিকভাবে সেতুটির উদ্বোধন করবেন।

গাইবান্ধা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী উজ্জ্বল চৌধুরী জানান, সেতুটি উদ্বোধনের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। সেতুটির ‘মাওলানা ভাসানী’ নামে সেতুটির নামকরণ করা হয়েছে। একইদিন বিকেল থেকে সেতুটি সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এলজিইডির প্রধান নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুর রশীদ মিয়া, চায়না স্টেট কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশনের কর্মকর্তাসহ সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকবেন বলেও জানান তিনি।

তিস্তা নদীর ওপর নির্মিত ‘মওলানা ভাসানী’ সেতু। ছবি: টাইমস

গাইবান্ধা এলজিইডি কার্যালয়ের তথ্যমতে, তিস্তা নদীর ওপর ১ হাজার ৪৯০ মিটার দৈর্ঘ্যের এ সেতু নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৯২৫ কোটি টাকা। ২০১৮ সালের ৫ নভেম্বর প্রকল্পটির দরপত্র আহ্বান করা হয়। কাজের দায়িত্ব পায় চীনা প্রতিষ্ঠান ‘চায়না স্টেট কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন লিমিটেড’।

অপরদিকে, উদ্বোধনের আগেই সেতু দেখতে বাড়ছে মানুষের উপচে পড়া ভিড়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নানা বয়সী মানুষ ভিড় জমাচ্ছেন সেতুর দুই প্রান্তে। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর দিনক্ষণ চূড়ান্ত হওয়ায় উচ্ছ্বাসে ভাসছে দুই জেলার লাখো মানুষ।

স্থানীয়রা জানান, সেতুটি উদ্ধোধন হলেই যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হবে। গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম জেলার চরাঞ্চলসহ উত্তরাঞ্চলের কৃষিপণ্য, শিল্পের কাঁচামাল, শিল্পজাত পণ্য সহজে ও স্বল্প ব্যয়ে ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় স্থানান্তর করা যাবে। পাশাপাশি শিল্প ও ব্যবসায়-বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে।

বামনডাঙ্গা থেকে সেতু দেখতে আসা সোহান মিয়া বলেন, ‘সেতুটি দেখতে এসে খুব ভালো লাগছে। এখানে এসে সেতু এলাকাটি ঘুরে দেখলাম। নৌকা করে ঘুরলাম, সব মিলিয়ে বেশ আনন্দ লাগছে।’

হরিপুর গ্রামের আনোয়ার মিয়া জানান, এই সেতুর কারণে আমাদের যাতায়াত ব্যবস্থা সহজ হবে। তেমনি জীবনযাত্রার মানেরও উন্নতি ঘটবে।

তিস্তা নদীর ওপর নির্মিত ‘মওলানা ভাসানী’ সেতু। ছবি: টাইমস

কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার ব্যবসায়ী আইনুল হক জানান, সেতুটি চালু হলে ব্যবসা বাণিজ্য করতে সুবিধা হবে। চরের জিনিসপত্র কৃষকরা সঠিক দামে পাবেন।

চরাঞ্চলের কৃষক মোজাহার আলী বলেন, ‘আমরা কৃষকরা চরে সোনা ফলাই, কিন্তু তার ন্যায্য মূল্য পাই না। চরাঞ্চলের মরিচ, ভুট্টা, পাট, মিষ্টি কুমড়াসহ নানা ধরনের ফসল উৎপাদন করি। যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো না হওয়ায় দূর থেকে কোন পাইকার আসে না। এখন সেতুটি চালু হলে দূর-দুরান্ত পাইকাররা আসবেন। এতে আমরা আমাদের উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য মূল্য পাব।’

জেলার এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী উজ্জ্বল চৌধুরী জানান, দেশে এলজিইডির সবচেয়ে বড় প্রকল্প এই তিস্তা সেতু। সেতুটি উদ্ধোধনের মধ্যদিয়ে দুই জেলার মানুষের নতুন নতুন কর্মসংস্থান বাড়বে। এতে এলাকাবাসীর জীবনযাত্রার উন্নয়ন হবে।

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *