বুলেট কেড়ে নিল মাহফুজের সেনা কর্মকর্তা হওয়ার স্বপ্ন

টাইমস রিপোর্ট
3 Min Read
শহীদ মাহফুজুর রহমান মাহফুজ। ছবি: বাসস

দেশমাতৃকার সেবা করার প্রত্যয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একজন গর্বিত অফিসার হওয়ার স্বপ্ন দেখত দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী মাহফুজুর রহমান মাহফুজ। কিন্তু ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার লেলিয়ে দেওয়া পুলিশের ছোড়া বুলেট সে স্বপ্নকে চিরতরে থামিয়ে দেয়।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় ১৯ জুলাই রাজধানীর মিরপুর-১০ নম্বরে গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারায় বাবা-মায়ের একমাত্র ছেলে মাহফুজ।

জাতির ক্রান্তিলগ্নে আবু সাঈদ-মাহফুজদের প্রাণ বিসর্জনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সারা দেশে স্ফুলিঙ্গে মতো ছড়িয়ে পড়ে। সেই আন্দোলন ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে রূপ নিয়ে ১৫ বছরের ফ্যাসিবাদী শাসনের অবসান ঘটায়। স্বৈরাচারী সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হন।

ঢাকার আলহাজ্ব আব্বাস উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন মাহফুজ। তার গ্রামের বাড়ি খুলনার বাগেরহাট জেলার মোরেলগঞ্জ উপজেলার বাইনতলা গ্রামে। মাহফুজের বাবা আব্দুল মান্নান পেশায় একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী।

বাসস’কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আবদুল মান্নান জানান, তিন কন্যার বিয়ে সম্পন্ন হওয়ার পর ২০১০ সালে স্ত্রী ও একমাত্র ছেলে মাহফুজকে নিয়ে ঢাকায় চলে আসেন তিনি। মিরপুর-১০ এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন তারা। তিনি স্থানীয় একটি দোকানে কাজ করে পরিবারের ভরণপোষণ ও একমাত্র ছেলের পড়ালেখার খরচ চালাতেন।

আব্দুল মান্নান বলেন, ‘১৮ জুলাই শেষবারের মতো রাতের খাওয়ার সময় মাহফুজ আবু সাঈদের হত্যাকাণ্ড নিয়ে ভারাক্রান্ত মনে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিল। সে বলেছিল, পুলিশ আবু সাঈদকে পাখির মতো গুলি করে হত্যা করেছে। এ হত্যাকাণ্ড তাকে ব্যথিত করেছে এবং আগামীকাল সে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেবে।’

মাহফুজের শোকার্ত বাবা বলেন, ‘আমি সাবধানে থাকব, এত চিন্তা করো না’—এটাই ছিল মাহফুজের শেষ কথা।

পরদিন শুক্রবার জুমার নামাজের পর মাহফুজ আন্দোলনে অংশ নেয় এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারায়। পরে ২০ জুলাই শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে তার মরদেহ খুঁজে পাওয়া যায়। তার কানের নিচ দিয়ে গুলি ঢুকে যায় বলে জানান আব্দুল মান্নান।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, ময়নাতদন্তে অন্তত সাত দিন সময় লাগবে। তবে তা না করেই তিনি ছেলের মরদেহ গ্রামের বাড়ি নিয়ে যান এবং পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করেন।

আব্দুল মান্নান বলেন, পুলিশের গ্রেফতারের আশঙ্কা থাকায় দাফনের পরই আমাকে গ্রাম ছেড়ে পালাতে হয়েছে।

তিনি জানান, একমাত্র ছেলের অকাল মৃত্যুর শোক কাটিয়ে ওঠতে তিনি নিজেও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিয়মিত অংশ নেন।

তিনি বলেন, ‘আমি যখন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মিছিল দেখি, তখন হাজারো ছাত্রের মাঝে নিজের সন্তানের প্রতিচ্ছবি খুঁজে পাই।’

আব্দুল মান্নান বলেন, ‘মাহফুজ দেশের জন্য জীবন উৎসর্গ করেছে— এটা আমার গর্ব। তবে আমাকে দেখভালের আর কেউ রইল না।’

অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে আব্দুল মান্নান তার ছেলের নির্মম হত্যার বিচার দাবি করেন। তিনি বলেন, ‘এটাই আমার একমাত্র চাওয়া।’

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *