সারা বিশ্বে চিনির দাম নাটকীয়ভাবে হ্রাস পাওয়ায় আগের অর্থবছরে বাংলাদেশ প্রায় দ্বিগুণ পরিমাণ চিনি আমদানি করেছে। অন্যদিকে সরকার শুল্ক কমিয়ে দেওয়ায় এবং বাজারে চিনির পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকায় দাম কমেছে।
২০২৪-২৫ অর্থবছরে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি করা পরিশোধিত চিনির পরিমাণ ৯৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। আগের অর্থবছরে এ পরিমাণ ছিল ১৩৬ থেকে ৯৮০ টন, যা এ বছর ২৬৮ থেকে ৩৮০ টনে দাঁড়িয়েছে।
আন্তর্জাতিক চিনি সংস্থার প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বিশ্ব বাজারে বর্তমানে প্রতি পাউন্ড চিনি ১৬ দশমিক ৬৮ সেন্টে বিক্রি হচ্ছে, যা মাত্র ১১ মাস আগে ২২ সেন্টেরও বেশি ছিল।
চট্টগ্রাম ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শহীদ জানান, পাইকারি বাজারে চিনির দামের এই নাটকীয় পতন বেশ অপ্রত্যাশিত। এ কারণে খুচরা বাজারেও চিনির দাম কমছে।
তিনি বলেন, ‘আমি ২০০৮ সাল থেকে এই ব্যবসায় আছি। আন্তর্জাতিক বাজারে চিনির দাম এত কমে যেতে আমি কখনো দেখিনি।’
শীর্ষস্থানীয় এই চিনি ব্যবসায়ী জানান, দেশের চিনিকলগুলোতে এখন প্রায় ৫০ হাজার টন চিনি মজুদ আছে এবং উৎপাদনও বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু উদ্বৃত্ত সরবরাহের সঙ্গে সঙ্গে দাম ক্রমাগত কমছে।
সরকার শুল্ক হ্রাস করায় চিনি আমদানি আরও বেড়েছে, ফলে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো সস্তায় চিনি কিনতে পারছেন। তাই ভোক্তারাও কম দামে চিনি পাচ্ছেন। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সম্প্রতি পরিশোধিত এবং কাঁচা চিনির ওপর নিয়ন্ত্রক শুল্ক অর্ধেক করেছে। এই শুল্ক ১৫ শতাংশে নামিয়ে আনায় আমদানিকারক এবং খুচরা বিক্রেতারা সাশ্রয়ী দামে চিনি কিনছেন।
বিশেষ করে চট্টগ্রামের বৃহত্তম পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে এর স্পষ্ট প্রভাব পড়েছে। এক মাস আগে যেখানে মণ প্রতি চিনির দাম ছিল ৩ হাজার ৫৮০ টাকা, সেখানে এখন ৩৭ দশমিক তিন কেজি চিনি বিক্রি হয় ৩ হাজার ৫২০ টাকায়। ওই পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি চিনির দাম এখন ৯৫ দশমিক ৯২ টাকা থেকে ৯৪ দশমিক ৩১ টাকায় এসে দাঁড়িয়েছে।
খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ী হাজী অ্যান্ড সন্সের মালিক মোহাম্মদ ইফরান বলেন, ‘এই দাম কমার ফলে গ্রাহকরা লাভবান হচ্ছেন। আমরা খোলা বাজারে চিনি প্রতি কেজি ১০০ টাকায় বিক্রি করছি আর একবারে বস্তা বিক্রি করলে প্রতি কেজির দাম পড়ে ৯৭ টাকা।’
খুচরা বিক্রেতারা জানিয়েছেন যে খোলা বাজারে প্রতি কেজি চিনি ১১০ থেকে ১৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে যা আগে ১২০ টাকারও বেশি ছিল।
দেশের প্রধান চিনি আমদানিকারক এবং পরিবেশকদের মধ্যে রয়েছে মেঘনা সুগার রিফাইনারি, এস আলম রিফাইন্ড সুগার ইন্ডাস্ট্রিজ, দেশবন্ধু সুগার মিলস, আব্দুল মোনেম সুগার রিফাইনারি, প্রাণ ডেইরি, ট্রান্সকম বেভারেজেস, আকিজ ফুড অ্যান্ড বেভারেজেস এবং এলবি গ্রুপ। ছোট কোম্পানিগুলোও এখন বিশ্বব্যাপী চিনির দাম কম থাকার সুযোগ নিয়ে চিনি আমদানি করেছে।
এই আমদানিকৃত চিনির একটি উল্লেখযোগ্য অংশ এসেছে ব্রাজিল থেকে। বিশ্বের বৃহত্তম চিনি রপ্তানিকারক এ দেশ বিশ্বব্যাপী প্রায় ৫২ শতাংশ চিনি রপ্তানি করে।
তবে চিনির দাম কমলেও বাজারে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো বিশৃঙ্খলা না থাকায় বাংলাদেশে চিনির দাম স্থিতিশীল থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে, যা আমদানিকারক এবং ভোক্তা উভয়কেই উপকৃত করবে।